ভারত মহাসাগরের স্রোত (Indian Ocean Current)

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 11/08/2013 - 10:48

ভারত মহাসাগরের স্রোত (Indian Ocean Current) :-ভারত মহাসাগর আয়তনে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ । ভারত মহাসাগরের উত্তরে এশিয়া মহাদেশ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ওশিয়ানিয়া মহাদেশ দিয়ে ঘেরা । ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশ স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা থাকায় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে সমুদ্র স্রোতের গতি অনেকটা পাল্টে যায় । গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ও শীত কালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । এজন্য ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশের স্রোত প্রধানত মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের স্রোতগুলি অনেকটা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের মতো আবর্তন করে ।

ভারত মহাসাগরের স্রোতগুলি :- (১) শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত, (২) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, (৩) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত,  (৪) মোজাম্বিক স্রোত, (৫) মাদাগাস্কার স্রোত,  (৬) আগুলহাস স্রোত, (৭) সোমালি স্রোত ও মৌসুমি স্রোত ।

(১) শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত :- কুমেরু মহাসাগর থেকে একটি শীতল কুমেরু স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে উত্তরমুখী হয়ে প্রবাহিত হয় । শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নিরক্ষরেখার কাছে পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেঁকে গিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

(২) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত :- উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষীয় স্রোত ভারত মহাসাগরের পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয় । নিরক্ষরেখার দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোতকে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বলা হয় । 

(৩) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত :- উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষীয় স্রোত ভারত মহাসাগরের পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয় । নিরক্ষরেখার উত্তরে প্রবাহিত স্রোতকে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত বলা হয় ।

(৪) মোজাম্বিক স্রোত :- শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ পশ্চিমমুখী হয়ে মাদাগাস্কার দ্বীপে বাধা প্রাপ্ত হয়ে দু-ভাগে বিভক্ত হয় যায় । একটি শাখা আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে মোজাম্বিক স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় ।   

(৫) মাদাগাস্কার স্রোত :-শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের অপর শাখাটি দক্ষিণ দিকে ঘুরে মাদাগাস্কার স্রোত নামে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত হয় ।

(৬) আগুলহাস স্রোত :- মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোত দুটি উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ও আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

(৭) সোমালি স্রোত :- গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা সোমালি স্রোত নামে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ও এই স্রোতটি মৌসুমি স্রোত নামে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে সুমাত্রা পর্যন্ত প্রসারিত হয় । শীত কালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই স্রোত সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় ।

*****

Related Items

অধঃক্ষেপণ (Precipitation)

অধঃক্ষেপণ (Precipitation) : সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ

ঘনীভবন (Condensation)

ঘনীভবন (Condensation) : যে প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে । আর্দ্র বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় । এই জলকণাসমূহ বিভিন্ন

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity)

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity) : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে বা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে আর্দ্র বায়ু এবং কম থাকলে তাকে শুষ্ক বায়ু বলে । বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা প্রধানত বায়ুর উষ

বায়ুর আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ (Humidity and Precipitation)

বায়ুর আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ (Humidity and Precipitation):

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ : বায়ু কোনদিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে, তা বাতপতাকার (Windvane)-এর সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করা যায় । অ্যানিমোমিটার (Anemometer) নামক যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ পরিমাপ করা হয় । বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ মাপার একক হল নট (১ নট = ১.৮ ক