বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 05/23/2012 - 08:46

বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ (Landforms produced by Wind Erosion) :-

গৌর (Gour) : বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানা রকমের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গৌর হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । মরু অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে কোনও কঠিন ও নরম শিলায় গড়া শিলাস্তূপ অবস্থান করলে এবং ওই শিলাস্তুপের নিচে নরম শিলা ও উপরে কঠিন শিলা থাকলে, নিচের কোমল অংশে বায়ুর ক্ষয়কার্যের তীব্রতা বেশি হয় । এর ফলে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় শিলাস্তূপটির নীচের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং ওপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন শিলাস্তরটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতা মতো ভূমিরূপ গঠিত হয়, একে গৌর বলে । মরু অঞ্চলে অসংখ্য গৌর যখন একসঙ্গে অবস্থান করে, তাকে গারা (Gara) বলে ।

রাজস্থানের থর মরুভূমিতে গৌর আকৃতির অনেক শিলাস্তূপ দেখা যায় । সাহারা মরুভূমিতে অসংখ্য গৌর দেখা যায় ।

জিউগেন (Zeugen) : বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, জিউগেন হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । মরু অঞ্চলে বায়ু অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ভূমির সমান্তরালে যে শৈলশিরা ও খাতের মতো ভূমিরূপের সৃষ্টি করে তাকে জিউগেন বলে । বায়ুর গতিপথে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে ওপরে কঠিন ও তার নীচে কোমল শিলাস্তরের সমন্বয়ে গঠিত কোনও শিলাস্তুপ অবস্থান করলে বায়ু কঠিন শিলার ফাটল দিয়ে প্রবেশ করে নীচের কোমল শিলাকে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় দ্রুত ক্ষয় করে গভীর খাতের সৃষ্টি করে । তখন ওপরের কঠিন শিলা ও চওড়া ও চ্যাপটা হয়ে শৈলশিরার আকার ধারণ করে । মরু অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার প্রক্রিয়ায় গঠিত শিলার ফাটল ও দারণের মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবেশ করে নীচের কোমল শিলাস্তরকে ক্ষয় করে জিউগেন -এর সৃষ্টি করে । এগুলি সাধারণত ৩-৩০ মি. পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনেরান মরুভূমি অঞ্চলে এইরূপ জিউগেন দেখা যায় ।

ইয়ারদাঙ (Yardang) : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ হল ইয়ারদাঙ । বায়ুর গতিপথে পাশাপাশি উলম্বভাবে সজ্জিত কঠিন ও কোমল শিলাগঠিত কোনও শিলাস্তুপ অবস্থান করলে বায়ু অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় কোমল শিলাকে অধিক ক্ষয় করে সরু সুড়ঙ্গের মতো এবং কঠিন শিলাকে কম ক্ষয় করে খাড়া খাঁজকাটা উঁচুভূমি গঠন করে । 'মোরগের ঝুঁটির' মতো দেখতে এই প্রকার ভূমিরূপকে ইয়ারদাঙ বলে । ইয়ারদাঙ গড়ে ৫ - ১৫ মি.পর্যন্ত উঁচু ও ৮ - ৪০ মি. প্রশস্ত হয়ে থাকে ।

সৌদি আরবের মরু অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায় । গোবি মরুভূমি ও চিলির আটাকামা মরুভূমিতে ইয়ারদাঙ দেখতে পাওয়া যায় । এছাড়া ভারতের থর মরুভূমি অঞ্চলে বহু ইয়ারদাঙ দেখা যায় ।

অপসারণ সৃষ্ট গর্ত (Blow-Outs) : বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, অপসারণ সৃষ্ট গর্ত হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরু অঞ্চলের কোনো স্থানের বিশাল পরিমাণ বালুকারাশি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়িয়ে নিয়ে যায় । এর ফলে কখনো-কখনো বিশাল এলাকা জুড়ে অবনমন প্রক্রিয়ায় বালি অপসারিত হয়ে সেখানে গভীর খাদ বা গর্তের সৃষ্টি হয় । একে অপসারণ সৃষ্ট গর্ত বা ব্লো আউট বলে । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের গর্তকে বাফেলো গর্ত বলে । ভারতের থর মরুভূমিতে এই ধরনের ছোটো-বড়ো বিভিন্ন আকৃতির গর্তগুলো স্থানীয় ভাষায় ধান্দ নামে পরিচিত । মঙ্গোলিয়াতে প্যাকিং গর্ত বলা হয় । 

মিশরের সাহারা মরুভূমিতে সৃষ্ট কাতারা পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ সৃষ্ট গর্ত ।

ইনসেলবার্জ (Inselberg) : মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ইনসেলবার্জ হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । জার্মান শব্দ ইনসেলবার্জ কথার অর্থ 'দ্বীপের মতো পাহাড়' । মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সমগ্র মরু অঞ্চলের সাধারণ উচ্চতা কমে গিয়ে যখন প্রায় সমপ্রায়ভূমিতে পরিণত হয়, তখন তার মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কঠিন শিলায় গঠিত অংশগুলি কোনোক্রমে ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ করে অনুচ্চ ও পরস্পর সমান উচ্চতা বিশিষ্ট টিলার আকারে দাঁড়িয়ে থাকে । এই ধরণের ক্ষয়্জাত পাহাড় বা টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে । ইনসেলবার্জ সাধারণত আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলায় গঠিত । এগুলির উচ্চতা সাধারণত ৩০ - ৩০০ মিটার হয় । 

মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি পাহাড়ে ইনসেলবার্জ ভূমিরূপ দেখা যায় । দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরু অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে অনেক ইনসেলবার্জ দেখা যায় ।

*****

Related Items

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river)

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river) : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবন রেখা । গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষি ক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of Students in Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of students in waste management) : সুন্দর ও স্বচ্ছ মন এবং সুস্থশিক্ষা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল । পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সুন্দর না থাকলে, সুন্দর স্বচ্ছ মন ও সুস্থশিক্ষা সম্ভব নয় । তাই বর্জ্য ব্যবস্

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for waste management) : ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, মৃত্তিকা সংক্রমণ, দূষণ, লিশেট ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জ্য পরিবেশকে প্রভাবিত করে থাকে । বর্জ্যপদার্থ কঠিন বা তরলরূপে জলাশয়ে এসে পড়লে তা জলের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of waste management) : বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ, বর্জ্যের পরিবহন, আবর্জনার বিলিব্যবস্থা, নর্দমার জল ও অন্যান্য বর্জ্যের নিকাশ প্রভৃতি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক । বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (১) বর্জ্য

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management) : যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলা হয় । অন্যভাবে বলা যায়, বর্জ