যৌন জনন (Sexual Reproduction)

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/15/2012 - 22:50

যৌন জনন (Sexual Reproduction)

যৌন জননের সংজ্ঞা:- যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামেট উত্পন্ন হয় এবং দুটি যৌন জনন কোশ অর্থাৎ পুং গ্যামেট ও স্ত্রী গ্যামেটের মিলন বা নিষেকের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে যৌন জনন বলে ।

যৌন জননের উদাহরণ:-  ব্যাঙ, মানুষ প্রভৃতি প্রাণী ও সপুষ্পক উদ্ভিদ যৌন জনন প্রক্রিয়ায় অপত্য জীব সৃষ্টি করে । 

নিষেক:-  পুং গ্যামেট ও স্ত্রী গ্যামেটের মিলনকে নিষেক বলে ।

যৌন জননের একক:-  যৌন জননের একক হল জনন কোশ অর্থাৎ গ্যামেট [Gametes] । পুংজনন তন্ত্রের একক হল পুং গ্যামেট বা শুক্রাণু [sperm] এবং স্ত্রীজনন তন্ত্রের একক হল স্ত্রী-গ্যামেট বা ডিম্বাণু [egg] ।

যৌন জননের প্রকারভেদ (Types of Sexual Reproduction)

যৌন জনন প্রধানত দুই রকমের হয়, যথা:  (ক) সিনগ্যামি  এবং (খ)  সংযুক্তি বা কনজুগেশন

(ক) সিনগ্যামি [Syngamy]:- এই রকম যৌন জননে সম্পূর্ণভাবে এবং স্থায়ীভাবে পুং ও স্ত্রী গ্যামেটদ্বয়ের মিলন ঘটে । এক্ষেত্রে জনন কোশদ্বয়ের মিলন কোশাধারের বাইরে ঘটে । সিনগ্যামি উদ্ভিদ ও প্রাণীর সবচেয়ে সাধারণ যৌন জনন পদ্ধতি ।

উদাহরণ : স্পাইরোগাইরা, মিউকর, মনোসিস্টিক ইত্যাদির যৌন জনন ।

সিনগ্যামিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়, যথা : 

[i]  আইসোগ্যামি,   [ii]  অ্যানাইসোগ্যামি,  [iii] উগ্যামি

[i] আইসোগ্যামি:- যখন মিলিত গ্যামেট দুটো (পুং ও স্ত্রী) অঙ্গ সংস্থানগতভাবে এবং শারীরবৃত্তীয়ভাবে একই রকমের হয়, তখন সেই ধরনের যৌন জননকে আইসোগ্যামি বলে ।

উদাহরণ:-  স্পাইরোগাইরা, মিউকর, মনোসিস্টিক ইত্যাদির যৌন জনন ।

[ii] অ্যানাইসোগ্যামি:- যখন মিলিত গ্যামেট দুটো আকার, আয়তন ও স্বভাবগতভাবে অন্য ধরনের হয় এবং গ্যামেটের মিলন জনন অঙ্গের বাইরে ঘটে, তখন সেই রকম যৌন জননকে অ্যানাইসোগ্যামি বলে । এই ধরনের জননে পুং গ্যামেট আকারে ছোটো কিন্তু সক্রিয় এবং স্ত্রী গ্যামেট আকারে বড়ো কিন্তু নিস্ক্রিয় হয় ।

উদাহরণ:- ক্ল্যামাইডোমোনাস 

[iii] উগ্যামি:-  অন্ত-নিষেক পদ্ধতিতে যখন দুটি অক্ষম আকৃতির গ্যামেটের (পুং গ্যামেট ও স্ত্রী গ্যামেট) মিলন ঘটে, তখন সেই জননকে উগ্যামি বলা হয় । নিষিক্ত স্ত্রী-গ্যামেট অর্থাৎ ডিম্বাণুকে জাইগোট বলে । 

উদাহরণ:- ইডোগোনিয়াম, ভলভক্স প্রভৃতি শৈবাল এবং উন্নত শ্রেণির সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের যৌন জনন এই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় ।

(খ) সংযুক্তি [Conjugation]:- যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটো একই প্রজাতিভুক্ত জনিতৃ জীব (শারীরবৃত্তীয়ভাবে আলাদা ধরনের) অস্থায়ীভাবে মিলিত হয়ে তাদের নিউক্লীয় পদার্থের বিনিময় ঘটিয়ে অপত্য জীব সৃষ্টি করে, তাকে সংযুক্তি বা কনজুগেশন বলে । সংযুক্তির ফলে উত্পন্ন  ডিপ্লয়েড কোশটিকে জাইগোস্পোর [zygospore] বলে ।

উদাহরণ:- স্পাইরোগাইরা (শৈবাল), প্যারামিসিয়াম (প্রোটোজোয়া) ইত্যাদি ।

যৌন জননের গুরুত্ব (Importance of asexual Reproduction)

১.  যৌন জননের ফলে পিতা-মাতার নানান গুণাবলী সন্তান-সন্ততির মধ্যে সঞ্চারিত হয়, ফলে তারা সহজেই নতুন পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে ।

২.  যৌন জননের ফলে যে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অপত্য জীবের উদ্ভব ঘটে তাদের অভিব্যক্তি ঘটাও সম্ভব হয় ।

৩.  যৌন জননের মাধ্যমে যে সমস্ত জীব বংশবিস্তার করে তাদের কিছু সংখ্যক প্রতিনিধি যে-কোনও রকম প্রতিকুল পরিবেশে টিকে থেকে পুনরায় বংশবিস্তার করতে সক্ষম হয় ।

৪.  যৌন জননের মাধ্যমে পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যাবলি সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত হওয়ায় পুরুষানুক্রমে বংশের ধারা বজায় থাকে ।

৫. যৌন জননের মাধ্যমে অপত্য জীবে নানান বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটে । এর ফলে প্রজাতির মধ্যে প্রকরণ বা ভেদ দেখা যায়, এই রকম ভেদ জীবের ক্রমবিকাশ অর্থাৎ অভিব্যক্তিতে সহায়তা করে ।

৬.  যৌন জননের ফলে জীবের হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড জনুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ঘটে ।

যৌন জননের প্রধান অসুবিধা হল এই যে, বংশবিস্তারের জন্য বেশি মাত্রায় সময় ব্যয় হয় এবং এই জননের সাফল্যতাও অনেক ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত নয় ।

জীবন চক্রে যৌন জননের তাৎপর্য:-

১.  যৌন জননে গ্যামেট সৃষ্টি হয় এবং গ্যামেটের মিলন বা নিষেক ঘটে ।

২.  হ্যাপ্লয়েড (n) গ্যামেটের মিলনে ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট উত্পন্ন হয় । যৌন জনন তাই ডিপ্লয়েড বা রেণুধর জনুকে সূচিত করে বা তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে ।

৩.  যে জীবের জীবনচক্রে নির্দিষ্ট জনুক্রম লক্ষ করা যায় সেখানে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড জনুর (অর্থাৎ লিঙ্গধর ও রেণুধর জনুর) পর্যায়ক্রমিক আবর্তনে যৌন জনন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে ।

 

অযৌন জনন ও যৌন জননের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য অযৌন জনন ও যৌন অযৌন জনন ও যৌন
১. জননের একক অযৌন জননের একক হল 'স্পোর' বা রেণু  । যৌন জননের একক হল 'গ্যামেট' ।
২. পদ্ধতি    এই রকম জননে গ্যামেট উত্পন্ন হয় না কিম্বা তার নিষেক ঘটে না । সাধারণত কোশ বিভাজনের দ্বারা বা রেণু উত্পাদনের মাধ্যমে এই রকম জনন সম্পন্ন হয় ।    এই রকম জননে গ্যামেট উত্পন্ন হয় এবং দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামেটের মিলন বা নিষেকের ফলে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় ।   
৩. অপত্য জীবের বৈশিষ্ট্য অযৌন জননের ফলে উত্পন্ন অপত্য জীব হুবহু জনিতৃ জীবের মতো হয় । যৌন জননে অপত্য জীব জনিতৃ জীবের মতো অথবা নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় ।
৪. মিয়োসিস অযৌন জনন কোশ উত্পন্ন হওয়ার আগে সাধারণত মিয়োসিস বিভাজন ঘটে না । যৌন জনন কোশ অর্থাৎ গ্যামেট উপাদনের আগে সাধারণত মিয়োসিস বিভাজন ঘটে ।
৫. সময় এবং অপত্য জীবের সংখ্যা অযৌন জননে সময় কম লাগে এবং অপত্য জীবের সংখ্যা অনেক বেশি হয় । যৌন জননে সময় বেশি লাগে এবং অপত্য জীবের সংখ্যা অনেক কম হয় ।
৬. জৈব বিবর্তন বা অভিব্যক্তি অযৌন জননের মাধ্যমে জীবের অভিব্যক্তি ঘটা সম্ভব নয় । যৌন জননের মাধ্যমে জীবের অভিব্যক্তি ঘটা সম্ভব ।

৭. উদাহরণ

নিম্নশ্রেণির কিছু প্রাণী (যেমন: অ্যামিবা) ও উদ্ভিদে (যেমন: মিউকর) অযৌন জনন দেখা যায় ।

উন্নত প্রাণী ও সপুষ্পক উদ্ভিদে যৌন জনন ঘটে থাকে ।

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স