মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ

Submitted by arpita pramanik on Wed, 12/19/2012 - 19:55

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ (Sex Determination in Man)

দেহ গঠন ও লিঙ্গ নির্ধারণের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ক্রোমোজোম দু-ধরণের হয়, যথাঃ  (১) অটোজোম  ও (২) সেক্স-ক্রোমোজোম

(১) অটোজোম [Autosome]:-  জীবের দেহজ বৈশিষ্ট্য নির্ধারক ক্রোমোজোমদের অটোজোম বলা হয় । মানুষের 46টি ক্রোমোজোমের মধ্যে 44টি অটোজোম থাকে । এই ক্রোমোজোমগুলি মানবদেহের বিভিন্ন দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে ।

(২) সেক্স-ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বা হেটারোক্রোমোজোম [Sex-Chromosome or Allosome or Heterochromosome]:-

অটোজোম ছাড়া অন্যান্য যে ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে সহায়তা করে তাদের অ্যালোজোম বা সেক্স-ক্রোমোজোম বলে । এগুলি সাধারণত একজোড়া হয় এবং XY বা XO বা XX ধরনের হয় । স্ত্রী দেহের সেক্স ক্রোমোজোম দু'টি 'X' ক্রোমোজোম অর্থাৎ XX নিয়ে গঠিত, কিন্তু পুরুষ দেহে এরা XY ধরনের বা XO ধরনের হয়, এদের হেটারোক্রোমোজোম বলে ।

এই আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, প্রত্যেক পুরুষের একটি X ক্রোমোজোমের সঙ্গে অবশ্যই একটি Y ক্রোমোজোম থাকে । অর্থাৎ পুরুষের দেহে XY ধরনের ক্রোমোজোম থাকে এবং প্রত্যেক স্ত্রী লোকের দেহে সব সময়েই দুটি X ক্রোমোজোম (অর্থাৎ XX ক্রোমোজোম) থাকে । যৌন জননের সময় এই ক্রোমোজোমগুলি কীভাবে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে অংশগ্রহণ করে তা এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ।

যৌন জননের সময় পুং জননেন্দ্রিয় থেকে উত্পন্ন অসংখ্য শুক্রাণুর বা পুং গ্যামেটের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক শুক্রাণু X ক্রোমোজোম বহন করে এবং অর্ধেক সংখ্যক শুক্রাণু Y ক্রোমোজোম বহন করে । অপর দিকে স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে উত্পন্ন প্রতিটি ডিম্বাণুই (স্ত্রী গ্যামেট) সব সময় একটি করে X ক্রোমোজোম বহন করে ।

যৌন জননের সময় যখন কোনও পুরুষের X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু স্ত্রীলোকের একটি ডিম্বাণুকে (যা সব সময়েই X ক্রোমোজোম বহন করে ) নিষিক্ত [fertilise] করে, সেক্ষেত্রে নিষেকের ফলে উত্পন্ন ভ্রুণাণু [Zygote]-টি [XX] স্ত্রী সন্তানে পরিপূর্ণতা লাভ করবে (যে হেতু প্রত্যেক স্ত্রীলোকের XX ক্রোমোজোম থাকে) ।

অপরপক্ষে, যৌন জননের সময় কোনও পুরুষের Y ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু যখন কোনও স্ত্রীলোকের একটি ডিম্বাণু বা স্ত্রী গ্যামেটকে নিষিক্ত করে, (যা সব সময়েই একটি X ক্রোমোজোম বহন করে) সেক্ষেত্রে উত্পন্ন ভ্রূণাণুটি [XY] পুত্র সন্তানে পরিপূর্ণতা লাভ করবে (যেহেতু প্রত্যেক স্ত্রীলোকের XX ক্রোমোজোম থাকে) ।

উৎপন্ন সন্তান পুত্র হবে না কন্যা হবে সে বিষয়ে স্ত্রীদেহের [স্ত্রী গ্যামেট] কোনও ভূমিকা থাকে না, এটি একান্তভাবেই যৌন জননের সময় পুংগ্যামেটের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে

*****

Related Items

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা

ডারউইনের মতে, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় 3 কোটি ডিম পাড়ে । একটি ঝিনুক একবারে 12 কোটি ডিম্বাণু উত্পাদন করে ...

ডারউইনের তত্ত্ব ও প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি

ডারউইনের মতে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার ...

অভিব্যক্তির তত্ত্বাবলি ও ল্যামার্কের তত্ত্ব

অভিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির অথবা একটি প্রজাতি থেকে অন্য একটি প্রজাতির উত্পত্তি হয় । অভিব্যক্তির কৌশল সম্পর্কে যেসব বিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্বাবলি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে ল্যামার্ক এবং ডারউইনের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । এখানে অভিব্যক্তির বিভিন্ন তত্ত্বাবলি ...

জীবাশ্মঘটিত বা প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ

ভূগর্ভের শিলাস্তরে সুদীর্ঘকাল যাবৎ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত কিন্তু আজকের পৃথিবীতে লুপ্ত জীবদেহের সামগ্রিক বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা অথবা তার ছাপকে জীবাশ্ম বলে । বিবর্তন সম্পর্কে যেসব প্রমাণ আছে তাদের মধ্যে জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সব থেকে জোরালো । ...

অভিব্যক্তির স্বপক্ষে অঙ্গসংস্থান অঙ্গসংস্থানগত ও জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ

জীবদেহের যে সমস্ত অঙ্গের বাহ্যিক গঠন ও কাজ আলাদা হলেও উত্পত্তি এবং অভ্যন্তরীণ গাঠনিক কাঠামো মূলগতভাবে এক, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে । বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গের প্রাথমিক গঠনগত মিল দেখে জৈব-বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় । এগুলির মধ্যে মেরুদন্ডী ...