পায়রার অভিযোজন

Submitted by arpita pramanik on Mon, 12/24/2012 - 21:17

পায়রার অভিযোজন (Adaptation of Pigeon)

 

পায়রা খেচর প্রাণী । আকাশে ওড়ার জন্য পায়রার নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় ।

পায়রার উড্ডয়নে সাহায্যকারী অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য

অভিযোজিত

অঙ্গ

বৈশিষ্ট্য অভিযোজনগত গুরুত্ব
১. দেহ-পালক  সারা দেহ পালকে ঢাকা । পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও হুকযুক্ত ।

(ক) দেহের তাপ সংরক্ষণে সাহায্য করে ।

(খ) দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে ।

(গ) পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও হুকযুক্ত হওয়ায় বায়ুর চাপে সহজে ছিঁড়ে যায় না ।

২. ডানা পায়রার অগ্রপদ দুটি ডানায় রুপান্তরিত হয়েছে ।

(ক) বিশেষ আকৃতির জন্য বাতাসের চাপ ডানা দুটির ওপর এমনভাবে পড়ে যাতে দেহকে বাতাসে ভাসিয়ে রাখা সহজ হয় ।

(খ) পায়রার ডানা দেহ সংলগ্ন অংশটি মুক্তপ্রান্তের তুলনায় মোটা এবং ডানার ওপরের তল উত্তল ও নিচের তল অবতল ।

(গ) ডানার পিছনের দিকের উড্ডয়ন পালকগুলি এমন ভাবে বিন্যস্ত থাকে, যার ফলে বাতাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করে পায়রা অনায়াসে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে ।

৩. লেজের পালক সংখ্যায় 12টি । পায়রার লেজের পালকগুলি ওড়ার সময় দিক পরিবর্তন করতে সাহায্য করে ।
৪. বায়ু থলি  পায়রার ফুসফুসে বেশ কয়েকটি বায়ুথলি থাকে ।

(ক) এই বায়ুথলিগুলি পায়রার দেহে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে ।

(খ) অক্সিজেনের সঞ্চয় করে রাখা ছাড়াও পায়রার দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে তাকে উড়তে সাহায্য করে ।

(গ) দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও বায়ুথলিগুলি কিছুটা সাহায্য করে ।

৫. উড্ডয়ন পেশি পেকটোরালিস মেজর, পেকটোরালিস মাইনর, কোরাকোব্রাকিয়ালিস ইত্যাদি ডানা সংলগ্ন বক্ষপেশিগুলি সুগঠিত ।  উড্ডয়ন পেশিগুলি ওড়ার সময় ডানার সঞ্চালনে সাহায্য করে ।
৬. স্পঞ্জিঅস্থি পায়রার অস্থিগুলি পাতলা হালকা, বায়ুপূর্ণ এবং কতকটা স্পঞ্জের মতো । এই ধরনের অস্থিগুলি ওড়ার সময় চাপ সহ্য করতে পারে, আর হালকা হওয়ায় উড়তে সুবিধা হয় ।

 

পায়রার অন্যান্য অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল

[1] দেহাকৃতি [Body contour]:- পায়রার দেহ মাকুর মতো । দেহটি সামনে ও পিছনে সরু হওয়ায় ওড়ার সময় বায়ুর প্রতিরোধ কম হয় ।

[2] গ্রীবা [Neck]:- পায়রার গ্রীবা নমনীয়, সরু এবং দীর্ঘ হওয়ায় এরা সহজেই মাথা ঘুরিয়ে চঞ্চুর সাহায্যে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে ।

[3] চঞ্চু [Beak]:- পায়রার চোয়াল দুটি চঞ্চুতে রুপান্তরিত হয়েছে, ফলে মাটি থেকে খাদ্য মুখে তোলা সহজ হয় ।

[4] পশ্চাৎপদ [Hind limb]:- পায়রার পশ্চাদপদ সংলগ্ন পেশি এমনভাবে অভিযোজিত যে, মাটিতে চলাফেরা করতে এবং গাছের ডালে বসতে সাহায্য করে ।

গাছের ডালে বসার জন্য পায়রার অভিযোজন [Adaptation for perching]:- পায়রার পশ্চাদ পায়ের চারটি আঙুলের মধ্যে তিনটি সামনের দিকে এবং একটি পিছনের দিকে থাকে । পায়রার পায়ের পেশি সংলগ্ন কন্ডরাগুলি বিশেষভাবে অভিযোজিত । এই কারণে পায়রা গাছের ডালে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বচ্ছন্দে বসে থাকতে পারে ।

 

[5] পৌষ্টিক তন্ত্র [Alimentary system]:- ওড়বার জন্য পায়রার অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই এদের পৌষ্টিক তন্ত্র অত্যন্ত উন্নত ধরনের । পৌষ্টিক তন্ত্রে চঞ্চু, ক্রপ, গিজার্ড থাকে; অন্যদিকে ওজন কমাবার জন্য দাঁত, পাকস্থলী, পিত্তাশয়, মলাশয় ইত্যাদি থাকে না ।

[6] শ্বসন তন্ত্র [Respiratory system]:- বেশি শক্তির প্রয়োজনে দেহে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পায়রার ফুসফুসে কতকগুলি বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক [air sacs] থাকে, যা প্রয়োজন মতো অক্সিজেন জমা করে রাখে এবং দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে উড়তে সাহায্য করে । 

[7] মস্তিষ্ক [Brain]:- পায়রার মস্তিস্ক উন্নত । পায়রার মস্তিষ্কে 12 জোড়া করোটিয় স্নায়ু থাকে । এদের গুরু মস্তিষ্ক এবং অপটিক লোব বেশ উন্নত । এদের লঘু মস্তিষ্ক উন্নত হওয়ায় ওড়বার সময় বা ডালে বসার সময় সহজেই দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে ।

[8] চক্ষু [Eye]:- পায়রার চোখ দুটি বেশ উন্নত । চোখে 'পেকটিন' থাকায় এরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির আদিকারী । 

[9] মুত্র-জনন তন্ত্র [Urinogenital system]:- ওজন কমাবার জন্য ডান ডিম্বাশয়, ডান ডিম্বনালী, মূত্রথলি এবং শিশ্ন থাকে না ।

 

হাঁটার জন্য পায়রার অভিযোজন [Adaptation for walking]:- ওড়ার জন্য অগ্রপদ ডানায় রুপান্তরিত হওয়ায় পায়রা কেবল পশ্চাদ পদদ্বয়ের সাহায্যে মাটিতে হাঁটাচলা করে । হাঁটার সময় দেহের ভার শ্রোণিচক্র ও পশ্চাদ-পায়ের ওপর ন্যস্ত হয় । ফলে এই অঞ্চলের অস্থিগুলি দৃঢ় ও মজবুত হয়েছে । শ্রোণিদেশের কশেরুকাগুলি পরস্পর যুক্ত ও অনড় । অপরপক্ষে শ্রোণিচক্র উক্ত কশেরুকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । পায়ের অস্থিগুলি অনেকটা 'Z' আকারে বিন্যস্ত । পায়রার দেহের এই রকম অস্থিবিন্যাস এদেরকে হাঁটাচলা করতে, ওড়ার সময় লাফিয়ে উঠতে এবং উড়তে উড়তে হটাৎ মাটিতে দাঁড়াবার সময় দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে ।

*****

Related Items

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা:- নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস । মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল ...

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে । প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে। কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন ও অবিভাজন এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে। জনিতৃ কোশের বিভাজনের ...

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা - অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস । অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। আবার এই অপত্য ...

কোশ বিভাজন ও কোশ বিভাজনের তাৎপর্য

আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগের ঘটনা । পৃথিবীতে জন্ম নিল প্রথম জীব । পৃথিবীর বুকে জাগল প্রাণের স্পন্দন । প্রথম সৃষ্টি হওয়া সেই জীব না ছিল উদ্ভিদ না কোন প্রাণী । জেলির মতো থকথকে খানিকটা প্রোটোপ্লাজম নিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিহীন সেই জীবের দেহ গড়ে ...

জিন (Gene)

1950 খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই জিন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারনা বাধ্য হয়ে বার বার পাল্টাতে হয়েছে । ক্রোমোজোম ও জিন সম্পর্কে আধুনিক গবেষণাই প্রমাণিত হয়েছে যে, জিন হল জীবকোশের ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা DNA -এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা DNA -এর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ...