পদ্মের অভিযোজন

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/22/2012 - 21:00

পদ্মের অভিযোজন (Adaptation of Lotus)

পদ্মের কান্ড ও মূল জলের নীচে কাদায় গাঁথা থাকে, কিন্তু পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদি জলের ওপর থাকে, তাই পদ্মকে আংশিক নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ বলে । জলে বাস করার জন্য পদ্মের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল :

[1] মূল:-

[a] পদ্মের মূলতন্ত্র সুগঠিত নয় ।

[b] পদ্মের প্রধান মূল থাকে না । পদ্মের মূল অস্থানিক প্রকৃতির । মূলগুলি গ্রন্থিকান্ড থেকে উত্পন্ন হয় ।

[c] পদ্মের মূলে মূলরোম এবং মূলত্রাণ থাকে না ।

[d]  মূলের সংবহন কলা সুগঠিত নয়, যান্ত্রিক কলা অনুপস্থিত ।

 

[2] কান্ড:-

[a] পদ্মের কান্ড গ্রন্থিকান্ড অর্থাৎ রাইজোম জাতীয় ।

[b] কান্ডটি জলের নীচে কাদার মধ্যে অনুভূমিকভাবে বৃদ্ধি পায় ।

[c] কান্ডের ত্বক কিউটিকলবিহীন, ত্বকে মোম জাতীয় আবরণ এবং রোম থাকে না ।

[d] কান্ড স্পঞ্জের মতো নরম এবং কান্ডের মধ্যে অনেক বাতাবকাশ থাকে ।

[e] যান্ত্রিক কলা থাকে না বা থাকলেও সুগঠিত নয় ।

[f] কান্ডের সংবহন কলা সুগঠিত নয় ।

 

[3] পাতা:-

পত্রবৃন্ত:-

[a] পদ্মের পত্রবৃন্ত এবং পুষ্পবৃন্তগুলি বেশ দীর্ঘ, বৃন্তের বহির্দেশ সূক্ষ্ম কাঁটা দিয়ে ঢাকা থাকে । জলজ প্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এমন অভিযোজন ।

[b] বৃন্তের মধ্যে প্রচুর বাতাবকাশ থাকে । বাতাবকাশগুলিতে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস থাকে । শ্বসন এবং সালোকসংশ্লেষের সময় গাছ ওই গ্যাস ব্যবহার করে ।

[c]  বৃন্তের ত্বক কিউটিকলবিহীন,

[d]  বৃন্তের সংবহন কলা অনুন্নত এবং যান্ত্রিক কলার পরিমাণ কম ।

পত্র ফলক:-

[a] পদ্মের পাতাগুলি প্রথম অবস্থায় জলের ওপরে ভেসে থাকে, কিন্তু পরিণত অবস্থায় পাতাগুলো জলের কিছু ওপরে বাঁকাভাবে অবস্থান করে ।

[b] পাতার ফলকগুলি আকারে বেশ বড়ো এবং গোলাকার ।

[c] ফলকের ওপরের তল মসৃণ এবং মোমজাতীয় আবরণ দ্বারা আবৃত ।

[d] পাতার ত্বকে কিউটিকল আছে । পত্ররন্ধ্র কেবল ঊর্ধ ত্বকে অবস্থিত ।

[e] পাতার সংবহন কলা সুগঠিত, যান্ত্রিক কলা অনুপস্থিত ।

 

[4] ফুল:-

[a] পদ্মের ফুলগুলি পতঙ্গ পরাগী

[b] পদ্মের ফুলগুলি বেশ বড়ো এবং উজ্জ্বল বর্ণের ।

[c] পদ্মের পুষ্পাক্ষ স্পঞ্জের মতো এবং বাতাবকাশযুক্ত ।

[d] স্ত্রীস্তবক শাঙ্কবাকার ।

[e] পদ্মের পুংকেশরের সংখ্যা অসংখ্য ।

 

[5] বীজ:-

[a] পদ্মের বীজত্বক খুব শক্ত এবং অভেদ্য ।

[b] পদ্মবীজের বহুদিন পর্যন্ত (কয়েক বছর থেকে কয়েক শ' বছর) অঙ্কুরোদ্গম শক্তি রক্ষা করার ক্ষমতা আছে ।

 

[6] অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:-

[a] পদ্মগাছের বেশিরভাগ অংশ জলে নিমজ্জিত থাকায় এদের বাষ্পমোচনের হার খুব কম ।

[b] পদ্ম অঙ্গজ জননের দ্বারা বংশবিস্তার করে ।

[c] পদ্মের সারা দেহ দিয়েই জলশোষণের ক্ষমতা আছে ।

পদ্মের অভিযোজনের বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনগত গুরুত্ব :

অভিযোজিত অঙ্গ বৈশিষ্ট্য অভিযোজনগত গুরুত্ব
১. পাতা ও ফুলের বৃন্ত

(ক) পদ্মের পাতা এবং ফুলের বৃন্তে প্রচুর বায়ু গহ্বর বা বাতাবকাশ থাকে ।

 

(খ) পদ্মের পাতা এবং ফুলের বৃন্তগুলি বেশ লম্বা হয় এবং বৃন্তের বহির্দেশ সূক্ষ্ম কাঁটার দ্বারা আবৃত থাকে ।

(ক) পদ্মের পাতা এবং ফুলের বৃন্তে থাকা বায়ু গহ্বরে সঞ্চিত অক্সিজেনের সাহায্যে এরা শ্বসনকার্য চালাতে পারে । এছাড়া বাতাবকাশগুলোতে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস থাকে । সালোকসংশ্লেষের সময় পদ্মগাছ ওই গ্যাস ব্যবহার করে ।

     

(খ) জলজ প্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এই বিশেষ অভিযোজনটির প্রয়োজন হয় ।

২. কান্ড পদ্মের কান্ডটি হল গ্রন্থিকান্ড যা জলের নীচে কাদায় পোঁতা থাকে । গ্রন্থিকান্ডে অসংখ্য বাতাবকাশ থাকে । পদ্মের গ্রন্থিকান্ডটি জলের নীচে কাদায় পোঁতা থাকায় সমগ্র উদ্ভিদ দেহটি জলের মধ্যে নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকতে পারে, এছাড়া পদ্মের গ্রন্থিকান্ডে অসংখ্য বাতাবকাশ থাকায় জল থেকে শোষিত অক্সিজেন সহজেই সমস্ত কোশে পৌঁছতে পারে ।

৩. পাতা

(ক) পদ্ম পাতার ফলকগুলো আকারে বেশ বড়ো ও গোলাকার এবং এরা পরস্পর সংলগ্ন অবস্থায় থাকে ।

 

(খ) পাতার ফলকের শুধুমাত্র ওপরের পিঠেই পত্ররন্ধ্র দেখা যায় ।

 

(গ) পদ্ম পাতার ফলকের ওপরের তলটি মসৃণ হয় এবং এখানে মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে ।

(ক) পদ্ম পাতার ফলকগুলো আকারে বড়ো হওয়ায় বেশি পরিমাণে সূর্যালোক শোষণ করতে পারে ।

 

(খ) পদ্মা পাতার নীচের পিঠটি জল সংলগ্ন হওয়ায় পাতার ফলকের শুধুমাত্র ওপরের পিঠেই পত্ররন্ধ্র থাকে এবং এইসব পত্ররন্ধ্রের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষ, শ্বসন ও বাষ্পমোচন —পাতার এই তিনটি প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে কোনও অসুবিধা হয় না ।

 

(গ) পদ্ম পাতার ফলকের ওপরের তলটি মসৃণ ও মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ দ্বারা আবৃত হওয়ার জন্য পদ্মপাতা জলে ভিজে যায় না ।

*****

Related Items

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদ-হরমোনের প্রধান উত্সস্থল । এছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত পত্র, ভ্রূণ মুকুল, ভ্রূণমুকুলাবরণী অর্থাৎ কোলিওপটাইল, শস্য, ফল ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোন থাকে । উদ্ভিদ হরমোনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ...

হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ...

হরমোনের সাধারণ ধারণা - সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ...

জিভ, ত্বক ও নাসিকা

জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় বলে। যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে । নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় । নাসা-গহ্বরের ছাদে ...

কর্ণ বা কান (Ear)

যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল - বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ । মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর, এবং কর্ণপটহ । কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক ...