জীবাশ্মঘটিত বা প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ

Submitted by arpita pramanik on Fri, 12/21/2012 - 11:22

জীবাশ্মঘটিত বা  প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ (Palaentological Evidence)

ভূগর্ভের শিলাস্তরে সুদীর্ঘকাল যাবৎ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত কিন্তু আজকের পৃথিবীতে লুপ্ত জীবদেহের সামগ্রিক বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা অথবা তার ছাপকে জীবাশ্ম বলে ।

বিবর্তন সম্পর্কে যেসব প্রমাণ আছে তাদের মধ্যে জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সব থেকে জোরালো । পৃথিবীর বিভিন্ন শিলা স্তরে অবস্থিত যেসব জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের সাহায্যে নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা যায় যে, ধারাবাহিক ভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে এক রকম জীব থেকে অন্য রকম জীবের উৎপত্তি ঘটেছে । যেমন : বর্তমানে লুপ্ত আর্কিওপটেরিক্স নামে এক রকম প্রাণীর জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এদের সরীসৃপের মতো পা ও দাঁত ছিল । আবার পাখির মতো দুটি ডানা চঞ্চু ছিল । এদের লেজটি দীর্ঘ অস্থিযুক্ত এবং লেজের শেষ প্রান্তে একগুচ্ছ পালক ছিল । এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে পক্ষীজাতীয় প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে । আর্কিওপটেরিক্স তাই সরীসৃপ এবং পাখিদের মধ্যে 'হারানো যোগসূত্র' ।

আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস [Equus] তার পূর্বপুরুষ ইওসিন যুগের ইওহিপ্পাস [Eohippus] থেকে সৃষ্টি হয়েছে ।

ইওহিপ্পাসের উচ্চতা ছিল মাত্র 11 ইঞ্চি এবং অগ্রপদে চারটি ও পশ্চাদপদে তিনটি আঙ্গুল ছিল । বিভিন্ন যুগে ধারাবাহিক পরিবর্তনের তথা বিবর্তনের মাধ্যমে ইওহিপ্পাস থেকে প্রায় 5 ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং অগ্র ও পশ্চাদপদে একটি করে আঙ্গুলবিশিষ্ট ইকুয়াস অর্থাৎ আধুনিক যুগের ঘোড়ার উৎপত্তি হয়েছে । কেবলমাত্র জীবাশ্মগুলি আবিষ্কারের ফলে এই সত্যি প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে ।

বিভিন্ন দশার জীবাশ্ম থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে এপ [ape] থেকে মানুষের [Homo sapiens] উৎপত্তি ঘটেছে ।

ডিপলোভার্টিব্রন [Diplovertibron] নামক জীবাশ্মের মধ্যে মাছ ও উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য থাকায় মাছ থেকে উভচর শ্রেণির প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয় ।

সেম্যুরিয়া [Seymouria] নামক জীবাশ্মের মধ্যে উভচর ও সরীসৃপদের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, উভচর থেকে সরীসৃপ প্রাণীদের উদ্ভব হয়েছে

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে টেরিডোস্পার্ম [Pteridosperm] নামে এক রকমের উদ্ভিদে ফার্ণ ও ব্যক্তবীজী [gymnosperm] উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় —এই কারণে ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ থেকে জিমনোস্পার্ম অর্থাৎ ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেছে বলে মনে করা হয় ।

 

জৈব বিবর্তন বা অভিব্যক্তির প্রমাণের সপক্ষে জীবাশ্মের গুরুত্ব:-

[১] আবির্ভাবের সময়কাল:-  আইসোটোপিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনও জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণ করে জীবাশ্মীভূত সেই জীবের এই পৃথিবীতে আবির্ভাবের সময়কাল জানা যায় ।

[২] ভৌগোলিক বিস্তার:- বিলুপ্ত জীবদের ভৌগোলিক বিস্তার সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়, যেমন : জার্মানির 'বেভারিয়া' অঞ্চলে আর্কিওপটেরিক্সের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়ায় অনুমান করা যায় যে লক্ষ লক্ষ বছর আগে ওই অঞ্চলে আর্কিওপটেরিক্সের বাস ছিল ।

[৩] বিলুপ্ত জীবেদের আকৃতি, গঠন:- জীবাশ্ম থেকে বিলুপ্ত জীবেদের আকৃতি, গঠন প্রভৃতির ধারণা পাওয়া যায় ।

[৪] জলবায়ু বা পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা মেলে:- জীবাশ্মের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বছর আগের পৃথিবীর জলবায়ু বা পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা মেলে ।

[৫] স্বভাব ও খাদ্যাভ্যাস:- জীবাশ্মীভূত জীবেদের স্বভাব ও খাদ্যাভ্যাস সম্বন্ধে কিছুটা আন্দাজ করা যায় ।

[৬] পূর্বপুরুষের সন্ধান:- এখনকার পৃথিবীর জীবিত জীবেদের পূর্বপুরুষের সন্ধান মেলে । যেমন : জীবাশ্ম থেকেই জানতে পারা যায় যে, আজ থেকে প্রায় ছ'কোটি বছর আগে ইওসিন যুগে পৃথিবীতে বর্তমান ঘোড়া ইকুয়াসের আদিপুরুষ ইওহিপ্পাস বাস করত ।

[৭] হারানো সূত্র বা 'মিসিং লিঙ্ক' সম্বন্ধে ধারণা:- জীবাশ্ম থেকে হারানো সূত্র বা 'মিসিং লিঙ্ক' সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় । যেমন : মিসিং লিঙ্ক. আর্কিওপটেরিক্সের জীবাশ্মে সরীসৃপ ও পাখি --উভয় শ্রেণির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, সরীসৃপ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে পাখির উৎপত্তি ঘটেছে ।

[৮] উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তন:-  জীবাশ্ম থেকে নির্দিষ্ট কিছু জীবগোষ্ঠির উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তন সম্বন্ধে জানা যায়, যেমন :

[i]  ডিপ্লোভার্টিব্রন [Diplovertibron] নামে জীবাশ্মের মধ্যে মাছ ও উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য পাওয়ায় মাছ থেকে উভচর শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে বলে অনুমান করা যায় । 

[ii]  টেরিডোস্পার্ম [Pteridosperm] নামে উদ্ভিদে ফার্ণ ও ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় —এই কারণে ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ থেকে ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেছে বলে মানে করা হয় ।

 

জীবন্ত জীবাশ্ম [Living Fossil]:- যে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে, অথচ তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, সেই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বা Living Fossil বলে ।

সিলাকান্থ নাকম মাছ, লিমিউলাস বা রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, স্ফেনোডন নামে সরীসৃপ প্রাণী, পেরিপেটাস নামে সন্ধিপদ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি এবং ইকুইজিটাম, নিটামগিঙ্কগো বাইলোবা নামের উদ্ভিদগুলি জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ । 

*****

Related Items

প্রাণীর রেচনে ত্বক বা চর্ম, ফুসফুস এবং যকৃতের ভূমিকা

প্রাণীদেহের অন্যান্য সাহায্যকারী রেচন অঙ্গগুলি হল চর্ম, ফুসফুস, এবং যকৃৎ। চর্ম প্রাণীদের পেশিকে আচ্ছাদন করে রাখে, ফলে এর প্রধান কাজ রক্ষণাত্মক । তা ছাড়া চর্ম স্পর্শেন্দ্রিয়রূপেও কাজ করে। চর্মের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রেচনে সহায়তা করা। চর্মে অবস্থিত ঘর্মগ্রন্থি ...

বৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিষ্করণ

দেহের অব্যবহৃত প্রোটিন ডি-অ্যামাইনেজ নামে একরকমের উৎসেচকের প্রভাবে অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয় । এই অ্যামোনিয়া যকৃতে এসে আরজিনেজ নামে এক রকমের উৎসেচকের সহায়তায় অরনিথিন চক্রের মাধ্যমে ইউরিয়ায় পরিণত হয় । এই ইউরিয়া এবং অন্যান্য রেচন পদার্থযুক্ত রক্ত ...

নেফ্রন (Nephron)

নেফ্রন হল কিডনি বা বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একক, যা প্রধানত ম্যালপিজিয়াম করপাসল এবং বৃক্কীয় নালিকা নিয়ে গড়ে ওঠে এবং মুত্র তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নিয়ে থাকে । প্রতিটি মানব বৃক্কে প্রায় দশ লক্ষ করে নেফ্রন থাকে । প্রতিটি নেফ্রন প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা ...

মানবদেহের রেচন ক্রিয়া

মানব দেহের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক । এছাড়া চর্ম, ফুসফুস, যকৃৎ ইত্যাদি রেচনে সাহায্য করে বলে এদের সহায়ককারী রেচন অঙ্গ বলে । মানবদেহের রেচন তন্ত্র এক জোড়া বৃক্ক, এক জোড়া গবিনী, একটি মুত্রাশায়, এবং একটি মুত্রনালী নিয়ে গঠিত । মানুষের বৃক্ক দুটি দেখতে শিমের বীজের মতো ...

প্রাণীদের রেচন

প্রাণীদেহে অপচিতি বিপাকের ফলে অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, প্রভৃতি নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ সৃষ্টি হয় । এগুলো সাধারণত প্রাণীদের মুত্র ও ঘামের সাহায্যে দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায় । এগুলো ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড, কিটোন বডি, বিলিরুবিন, বিলিভারডিন ...