Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/01/2012 - 22:24

কর্ণ বা কান (Ear)

সংজ্ঞা :- যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল: (ক) বহিঃকর্ণ,    (খ) মধ্য কর্ণ    এবং (গ) অন্তঃকর্ণ

(ক) বহিঃকর্ণের গঠন:- মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা:- [i] কর্ণছত্র,   [ii] কর্ণকুহর     এবং [iii] কর্ণপটহ

[i] কর্ণছত্র:-  কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক পেশি ও তরুণাস্থি দিয়ে গঠিত ।

[ii] কর্ণকুহর:-  কর্ণছত্রের কেন্দ্র থেকে শুরু করে কর্ণপটহ পর্যন্ত বিস্তৃত ঈষৎ বাঁকা নালি বিশেষ ।

[iii] কর্ণপটহ:- কর্ণকুহরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত পাতলা পর্দা

কাজ:- এর মাধ্যমে শব্দ গৃহীত হয়ে মধ্যকর্ণে প্রেরিত হয় ।

(খ) মধ্য কর্ণের গঠন:- এটি ছোটো ও বায়ুপূর্ণ প্রকোষ্ঠ । মধ্যকর্ণের এই প্রকোষ্ঠে মেলিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস নামে তিনটি ছোট হাড় শিকলের মতো থাকে । মধ্যকর্ণ ইউস্টেচিয়ান নালীর সাহায্যে গলবিলের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।

কাজ:- বহিঃকর্ণ থেকে গৃহীত শব্দ মধ্যকর্ণের তিনটি অস্থির মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে ।

(গ) অন্তঃকর্ণের গঠন:- অন্তঃকর্ণ প্রধানত ককলিয়া এবং ভেস্টিব্যুলার যন্ত্র নিয়ে গঠিত ।

ককলিয়া:- এটি শামুকের খোলাকের মতো পেঁচানো নালি বিশেষ । ককলিয়ার মধ্যে শ্রুতিগ্রাহক যন্ত্র বা কটি যন্ত্র অবস্থিত ।

ভেস্টিব্যুলার যন্ত্র:- এটি প্রধানত তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালি এবং একটি অটোলিথ যন্ত্র নিয়ে গঠিত ।

কাজ:- অন্তঃকর্ণের ককলিয়ার ভিতরের শ্রুতিগ্রাহক যন্ত্র শব্দের-উদ্দীপনা গ্রহণ করে অডিটরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রে প্রেরণ করে, ফলে শব্দটি আমরা শুনতে পাই । অর্ধবৃত্তাকার নালী এবং অটোলিথ যন্ত্র প্রাণীদেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ।

কর্ণপটহ থেকে অন্তঃকর্ণে শব্দতরঙ্গ সঞ্চারণ : কর্ণপটহ থেকে শব্দতরঙ্গ মধ্যকর্ণে অবস্থিত মেলিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস নামে তিনটি অস্থির মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে সঞ্চালিত হয় । বহিরাগত শব্দতরঙ্গ কর্ণছত্রের দ্বারা সংগৃহীত হয়ে বহিঃকর্ণ নালির মাধ্যমে বাহিত হয়ে কর্ণপটহে ধাক্কা মারে এবং কর্ণপটহে কম্পন সৃষ্টি করে । কর্ণপটহ থেকে এই কম্পন মধ্যকর্ণের অস্থিত্রয়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের ককলিয়ায় প্রবেশ করে । ককলিয়া মধ্যস্থ শ্রুতি গ্রাহক বা কটি যন্ত্র সেই শব্দতরঙ্গ গ্রহণ করে অডিটর স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রে প্রেরণ করে । ফলে শব্দটি আমরা শুনতে পাই ।

বায়ুতে শব্দ তরঙ্গ → কর্ণকুহর → কর্ণপটহ → মধ্যকর্ণের অস্থি → শ্রুতিগ্রাহক বা কটি যন্ত্র → অডিটরি স্নায়ু → মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্র → শ্রবণ 

কর্ণের বিভিন্ন অংশের অবস্থান ও কাজ সংক্ষেপে ছকের সাহায্যে দেখানো হল

কর্ণের অংশ অবস্থান কাজ
১.কর্ণছত্র মস্তিষ্কের দু'পাশে অবস্থিত । শব্দ-তরঙ্গ সংগ্রহ করে তা কর্ণকুহরে প্রেরণ করে ।
২.কর্ণকুহর কর্ণছত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং কর্ণপটহ পর্যন্ত বিস্তৃত । শব্দ-তরঙ্গকে কর্ণপটহে বহন করা ।
৩.কর্ণপটহ কর্ণকুহরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত । শব্দ-তরঙ্গ মধ্যকর্ণে প্রেরণ করে ।

৪.কর্ণ-অস্থি (মেলিয়াস,

ইনকাস,স্টেপিস)

মধ্যকর্ণে অবস্থিত । এই তিনটি অস্থি শব্দ-তরঙ্গকে কর্ণপটহ থেকে অন্তঃকর্ণে প্রেরণ করে ।
৫.ইউস্টেচিয়ান নালী মধ্যকর্ণ ও গলবিলের মাঝে অবস্থিত বায়ু চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ।
৬.ককলিয়া অন্তঃকর্ণে অবস্থিত । শ্রবণ-অনুভূতি গ্রহণ করে তা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে ।
৭.অর্ধবৃত্তাকার নালী অন্তঃকর্ণে অবস্থিত । দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে ।
৮.কটি যন্ত্র বা শ্রুতিযন্ত্র ককলিয়ার মধ্যে অবস্থিত । শ্রবণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে ।
৯.অটোলিথ অর্ধবৃত্তাকার নালীর মধ্যে অবস্থিত ।   দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে ।  

*****

Related Items

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা

ডারউইনের মতে, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় 3 কোটি ডিম পাড়ে । একটি ঝিনুক একবারে 12 কোটি ডিম্বাণু উত্পাদন করে ...

ডারউইনের তত্ত্ব ও প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি

ডারউইনের মতে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার ...

অভিব্যক্তির তত্ত্বাবলি ও ল্যামার্কের তত্ত্ব

অভিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির অথবা একটি প্রজাতি থেকে অন্য একটি প্রজাতির উত্পত্তি হয় । অভিব্যক্তির কৌশল সম্পর্কে যেসব বিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্বাবলি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে ল্যামার্ক এবং ডারউইনের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । এখানে অভিব্যক্তির বিভিন্ন তত্ত্বাবলি ...

জীবাশ্মঘটিত বা প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ

ভূগর্ভের শিলাস্তরে সুদীর্ঘকাল যাবৎ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত কিন্তু আজকের পৃথিবীতে লুপ্ত জীবদেহের সামগ্রিক বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা অথবা তার ছাপকে জীবাশ্ম বলে । বিবর্তন সম্পর্কে যেসব প্রমাণ আছে তাদের মধ্যে জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সব থেকে জোরালো । ...

অভিব্যক্তির স্বপক্ষে অঙ্গসংস্থান অঙ্গসংস্থানগত ও জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ

জীবদেহের যে সমস্ত অঙ্গের বাহ্যিক গঠন ও কাজ আলাদা হলেও উত্পত্তি এবং অভ্যন্তরীণ গাঠনিক কাঠামো মূলগতভাবে এক, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে । বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গের প্রাথমিক গঠনগত মিল দেখে জৈব-বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় । এগুলির মধ্যে মেরুদন্ডী ...