জিভ, ত্বক ও নাসিকা (Tongue, Skin and Nose)
জিহ্বা বা জিভ (Tongue)
জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় [Organ of taste] বলে । জিহ্বার সাহায্যে স্বাদ ছাড়াও ঠান্ডা, গরম, চাপ এবং স্পর্শ অনূভব করা যায় ।
অবস্থান [Location]:- মানুষের মুখবিবরের মেঝেয় মাংসল জিহ্বাটি অবস্থিত ।
গঠন [Structure]:- জিহ্বাটি ঐচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত । জিহ্বার উপরের পৃষ্ঠ কর্কশ এবং নীচের পৃষ্ঠ অর্থাৎ তলদেশ মসৃন । জিহ্বাটি একটি পাতলা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি বা মিউকাস পর্দা [mucous membrane] দ্বারা আবৃত ।
স্বাদকোরক:- জিহ্বার উপরিভাগে স্বাদ গ্রহণে সহায়ককারী যে অসংখ্য ছোটো ছোটো গুটিকা থাকে তাদের স্বাদকোরক বলে । আমাদের জিহ্বায় প্রায় 10,000 স্বাদকোরক থাকে । স্বাদ কোরকের মধ্যে স্বাদগ্রাহী কোষ এবং ধারক কোষ থাকে । জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টি [sweet] এবং পশ্চাদভাগে তিক্ত বা তেতো [bitter] স্বাদ-গ্রাহক থাকে, অগ্রভাগের কিছু ওপরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা নোনতা [salty] এবং দু'পাশে অম্ল [sour] স্বাদ-গ্রাহক স্থান অবস্থিত ।
কাজ [Functions of tongue]:- জিহ্বার বিশেষ কাজগুলি হল: (১) স্বাদ গ্রহণ, (২) কথা বলা, (৩) খাদ্য চর্বণ এবং (৪) খাদ্য গলাধঃকরণে সহায়তা করা ।
জিহ্বায় কীভাবে স্বাদ গৃহীত হয় ? জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টি, পশ্চাদভাগে তিক্ত, অগ্রভাগের কিছু ওপরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা নোনতা এবং দু'পাশে অম্ল স্বাদ-গ্রাহক স্থান অবস্থিত । কোনও খাদ্যবস্তু যখন নির্দিষ্ট স্বাদকোরকের সংস্পর্শে আসে তখন স্বাদকোরকগুলি উদ্দীপিত হয় । ওই উদ্দীপনা স্বাদ কোরক থেকে নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে [গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল স্নায়ু] মস্তিষ্কের স্বাদ কেন্দ্রে পৌঁছয় । ফলে আমরা স্বাদটি অনুভব করি ।
লালারসের সঙ্গে খাবারের মিশ্রণ → জিভের বিভিন্ন স্বাদকোরকের সঙ্গে লালারসে সিক্ত খাবারের সংস্পর্শ → স্বাদগ্রাহক কোষগুলিতে উদ্দীপনার সৃষ্টি → গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল স্নায়ুপথে উদ্দীপনার মস্তিষ্কের স্বাদ-কেন্দ্রে পৌঁছয় → বিভিন্ন স্বাদের অনুভব ।
ত্বক বা চর্ম (Skin)
সংজ্ঞা:- যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে ।
কাজ:- ত্বকের সাহায্যে আমরা স্পর্শ অনুভব করি, তাই ত্বককে স্পর্শেন্দ্রিয় [organ of touch] বলে । স্পর্শ ছাড়াও চাপ, তাপ, ঠান্ডা, ব্যথা ইত্যাদি অনুভূতিগুলিও ত্বকের সাহায্যে অনুভব করা যায় । ত্বকে উদ্দীপনা গ্রহণের জন্য অসংখ্য রিসেপ্টর [receptor] বা গ্রাহক থাকে, বিভিন্ন সময়ে এরা চাপ-গ্রাহক, তাপ-গ্রাহক, স্পর্শ-গ্রাহক, বেদনা-গ্রাহক প্রভৃতি হিসেবে কাজ করে । তাছাড়া স্পর্শের মাধ্যমে ত্বক বিভিন্ন বস্তু সনাক্তকরণে সাহায্য করে ।
নাসিকা বা নাক (Nose)
নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় ।
কাজ:- নাসা-গহ্বরের ছাদে অবস্থিত ঘ্রাণ-ঝিল্লি [Olfactory epithelium] ঘ্রাণগ্রাহক হিসেবে কাজ করে । ঘ্রাণ ঝিল্লিতে অবস্থিত বাইপোলার স্নায়ু কোষ বা অলফ্যাক্টরি কোষ ঘ্রাণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে ।
ঘ্রাণ [Smell]:- বহিরাগত কোনো রকম গন্ধ গ্যাসীয় মাধ্যমে নাসা-গহ্বরে প্রবেশ করলে নাসিকার অলফ্যাক্টরি অংশ থেকে নিঃসৃত গ্রন্থিরসে দ্রবীভূত হয়ে বাইপোলার স্নায়ুকোষগুলিকে উত্তেজিত করে । এই উদ্দীপনা তখন অলফ্যাক্টরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ঘ্রাণ কেন্দ্রে প্রেরিত হয়, ফলে আমরা গন্ধটিকে অনুভব করতে পারি ।
*****
- 10033 views