অযৌন জনন

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/15/2012 - 10:19

অযৌন জনন (Asexual Reproduction)

সংজ্ঞা:-  যে পদ্ধতিতে কোনো কোনো পুর্নাঙ্গ জীব, নিজের দেহাংশ থেকে সমপ্রকৃতি সম্পন্ন অপত্য জীবের সৃষ্টি করে, তাকে অযৌন জনন বলে । অর্থাৎ যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামোট উত্পাদন ছাড়াই সরাসরি কোশবিভাজনের মাধ্যমে অথবা 'স্পোর' বা রেণুর সাহায্যে সদৃশ অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে । অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় জনন কোশের মিলন ঘটে না ।

উদাহরণ:- অ্যামিবা, ব্যাকটিরিয়া, মিউকর প্রভৃতি জীবেরা অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশ বিস্তার করে ।

অযৌন জননের প্রকারভেদ ও উদাহরণ (Types and examples of asexual Reproduction)

জীবদেহে পাঁচটি পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন হতে দেখা যায়, যেমন: [i] বিভাজন,  [ii] কোরকোদগম,  [iii] গেমিউল গঠন,   [iv] পুনরুত্পাদন  এবং [v] রেণু উত্পাদন

[i] বিভাজন [Fission]:- বেশির ভাগ এককোশী প্রাণী বিভাজন পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন করে । এই পদ্ধতিতে মাতৃ-কোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সম্পূর্ণভাবে বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক অপত্য কোশ সৃষ্টি করে ।

উদাহরণ:-  এককোশী প্রাণী অ্যামিবা, প্যারামিসিয়াম, ইউগ্লিনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই রকম বিভাজন দেখা যায় ।

 

[ii] কোরকোদগম [Budding]:- এক্ষেত্রে প্রথমে দেহের কোনো একটি স্থানে একটি উপবৃদ্ধি দেখা যায়, যাকে কোরক বা বাড [bud] বলে ।  কোরক মাতৃদেহ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে বৃদ্ধি পায় । কোরকটি পরিণত হলে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রাণীরূপে বসবাস করে ।

উদাহরণ:- হাইড্রা, এবং কয়েক রকম টিউনিকেটের [tunicates] ক্ষেত্রে কোরকোদগম পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় ।

[iii] গেমিউল গঠন [ Gemmule formation]:-  মিঠে জলে বসবাসকারী স্পঞ্জের দেহে গেমিউল গঠিত হয় । গেমিউল পরে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রাণীদেহ সৃষ্টি করে ।

[iv] পুনরুত্পাদন [Regeneration]:-  স্পাইরোগাইরা নামক শৈবালে এবং স্পঞ্জ, চ্যাপ্টা কৃমি ও একনালিদেহী প্রাণীদের পুনরুত্পাদন বা রিজেনারেশন পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় ।

[v] রেণু উত্পাদন [Spore formation or Sporulation]:-  বেশিরভাগ অপুষ্পক উদ্ভিদের অযৌন জনন রেণু উত্পাদনের দ্বারা সম্পন্ন হয় । উদ্ভিদদেহের থলির মতো আকৃতির যে অঙ্গের মধ্যে রেণু গঠিত হয়, তাকে রেণুস্থলী বা স্পোরাঞ্জিয়াম [sporangium] বলে । রেণু চলমান হলে (সিলিয়া বা ফ্লাজেলবিশিষ্ট রেণু চলমান হয়) তাকে চলরেণু অর্থাৎ জুস্পোর [zoospore] বলে, যেমন : ইউলোথিক্স -এর চলরেণু । রেণু নিশ্চল অর্থাৎ চলমান না হলে তাকে অচলরেণু অথবা অ্যাপ্লানোস্পোর [aplanospore],  স্পোরাঞ্জিওস্পোর [sporangiospores] প্রভৃতি বলে । মিউকর, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি ছত্রাকের রেণু অচলরেণু । রেণুস্থলী থেকে পরিণত রেণু নির্গত হয়ে বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনুকূল পরিবেশে প্রতিটি রেণু অঙ্কুরিত হয়ে নতুন উদ্ভিদ-দেহ সৃষ্টি করে ।

অযৌন জননের গুরুত্ব (Importance of asexual Reproduction)

অযৌন জননের প্রধান সুবিধা হল এই যে,

[i] এই রকম জননে কম সময়ে বেশি সংখ্যায় জীব সৃষ্টি হয় ।

[ii] এই রকম জননে জনিতৃ জীব ও অপত্য জীব সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয় ।

কিন্তু অযৌন জননের প্রধান অসুবিধা হল এই যে, এই জননে উত্পন্ন জীবগুলির মধ্যে ভেদ [variation] দেখা না দেওয়ায়, পরিবেশের কোনোরকম বিরাট পরিবর্তন ঘটলে এরা সহজেই অবলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ।

অঙ্গজ জনন ও অযৌন জননের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য অঙ্গজ জনন অযৌন জনন
১. জনন কোথায় দেখা যায় এই রকম জনন সাধারণত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় । এই রকম জনন উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায় ।
২. জনন পদ্ধতি এই রকম জননে উদ্ভিদ দেহের কোনও অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে । এই রকম জননে দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গে উত্পন্ন অযৌন জননের এককের (অর্থাৎ 'স্পোর' বা রেণুর) সাহায্যে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় ।
৩. স্পোর বা রেণুর ভূমিকা অঙ্গজ জনন প্রধানত কোশ বিভাজনের মাধ্যমেই ঘটে । এখানে স্পোর বা রেণুর কোনও ভূমিকা নেই । প্রধানত স্পোর বা রেণুর নামে অযৌন জননের এককের দ্বারাই এই রকম জনন ঘটে ।
৪. মাইটোসিস / মিয়োসিস কোশ বিভাজন অঙ্গজ জননে প্রধানত মাইটোসিস কোশ বিভাজন লক্ষ করা যায় । অযৌন জননে মাইটোসিস ও মিয়োসিস উভয় রকম কোশ বিভাজনই লক্ষ করা যায় ।

 ৫. জনুক্রম

জনুক্রম দেখা যায় না ।

কখনও কখনও জনুক্রম দেখা যায় ।

*****

Related Items

নিউরোনের শ্রেণিবিভাগ ও কাজ

কাজ অনুযায়ী নিউরোন তিন প্রকার; যথা- সংজ্ঞাবহ বা সংবেদজ নিউরোন, আজ্ঞাবহ বা চেষ্টিয় নিউরোন, সহযোগী নিউরোন । সেনসরি রকম নিউরোনগুলো রিসেপটর থেকে স্নায়ুস্পন্দন অর্থাৎ আবেগকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে । সংজ্ঞাবহ নিউরোনের দ্বারা আবেগ বাইরে থেকে ...

স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ ও গঠনগত উপাদান

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকান্ড নিয়ে গঠিত । প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র - কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে নির্গত সমস্ত রকম স্নায়ুসমূহ নিয়ে এই স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়েছে । স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র - যেসব স্নায়ু প্রাণীদেহের আন্তর যন্ত্র তথা অনৈচ্ছিক পেশিগুলিতে বিস্তৃত থেকে তাদের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ...

মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের সংজ্ঞা ও কাজ

উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া জীবের একটি বিশেষ ধর্ম । পরিবেশ থেকে আসা নানান রকম উদ্দীপনা যেমন; চাপ, তাপ, ব্যথা, স্পর্শ, আলো, শব্দ, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি গ্রহণের জন্য প্রাণীদেহে রিসেপ্টর নামে এক রকমের গ্রাহক যন্ত্র থাকে । রিসেপ্টর থেকে গৃহীত উদ্দীপনা পরিবহনের জন্য প্রাণীদেহে ...

রেচনের ওপর উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা

রেচন প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, উদ্ভিদের পক্ষে যেসব রেচন পদার্থ ক্ষতিকারক, প্রাণীদের পক্ষে তা গ্রহনযোগ্য; আবার প্রাণীদের পক্ষে যা ক্ষতিকারক, উদ্ভিদের পক্ষে তা গ্রহণযোগ্য । প্রাণী কর্তৃক নিষ্কাশিত রেচন পদার্থগুলিকে উদ্ভিদ সার হিসাবে গ্রহণ করে । আবার উদ্ভিদের বিভিন্ন ...

উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন ক্রিয়ার পার্থক্য

রেচন পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য উদ্ভিদ দেহে কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গ থাকে না । এরা পত্রমোচন, বাকল মোচন, গঁদ নিঃসরণের মাধ্যমে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে । প্রাণীর দেহে রেচন পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ ও তন্ত্র থাকে । অধিকাংশ উদ্ভিদ তাদের রেচন পদার্থ গুলোকে অদ্রাব্য কেলাস বা ...