রেচনের ওপর উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা
রেচন প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, উদ্ভিদের পক্ষে যেসব রেচন পদার্থ ক্ষতিকারক, প্রাণীদের পক্ষে তা গ্রহনযোগ্য; আবার প্রাণীদের পক্ষে যা ক্ষতিকারক, উদ্ভিদের পক্ষে তা গ্রহণযোগ্য । প্রাণী কর্তৃক নিষ্কাশিত রেচন পদার্থগুলিকে উদ্ভিদ সার হিসাবে গ্রহণ করে । আবার উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ (যেমন; রজন, গঁদ, রবার, কুইনাইন, রেসারপিন, ধুনো কর্পূর মরফিন ইত্যাদি) মানুষের নানা প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় ।
রেচন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য :- রেচন প্রসঙ্গে অপর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, রেচন পদার্থগুলো দুষিত, ক্ষতিকারক এবং অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় এরা সমস্ত জীবদেহ থেকে নিষ্কাশিত হয় । কিন্তু প্রকৃতির কাছে ওই পদার্থগুলো আদৌ অপ্রয়োজনীয় বা দুষিত নয় । কারণ ওই সব রেচন পদার্থ আবার বিশ্লিষ্ট হয়ে সার পদার্থ হিসাবে প্রকৃতির বুকে ফিরে আসে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দ্বারা আবার ব্যবহৃত হয় । জীব দেহ থেকে নিষ্কাশিত রেচন পদার্থের জৈব উপাদানগুলি মাটির মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন রকম জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে জল, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য অজৈব পদার্থের লবন গঠন করে । ওই সব অজৈব উপাদান উদ্ভিদ মাটি থেকে শোষণ করে থাকে এবং উদ্ভিদ দেহে ওইগুলি আবার যৌগ পদার্থে পরিণত হয় । প্রাণীরা উদ্ভিদ-খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওই সব যৌগ-পদার্থ গ্রহণ করে ।
প্রকৃতির কোনো সম্পদই জীবেরা স্থায়ীভাবে অপসারিত করে না । জীব প্রকৃতির যা কিছু গ্রহণ করে, আবার তা রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে এবং মৃত্যুর পর দেহ-পচনের মাধ্যমে, প্রকৃতির বুকেই ফিরিয়ে দেয় । সেই জন্য কোটি কোটি বছর ধরে উদ্ভিদ এবং প্রাণীরা প্রকৃতির প্রভূত সম্পদ আহরণ করলেও, প্রকৃতি আজও রিক্ত এবং নিঃস্ব হয়ে যায় নি ।
*****
- 322 views