অভিযোজনের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/22/2012 - 11:09

অভিযোজনের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা (Definition and Explanation of Adaptation)

অভিযোজন (Adaptation)

সূচনা [Introduction]:-  প্রত্যেক জীব সব সময়েই চেষ্টা করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিতে এবং সেই পরিবেশ থেকে নানান রকমের সুবিধা পেতে । পরিবেশের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে ঠিক মতো মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য জীবের নানান রকমের পরিবর্তন ঘটে; —এই পরিবর্তন গঠনগত হতে পারে, শারীরবৃত্তীয় হতে পারে কিংবা আচরণগত হতে পারে । এর ফলে জীব যে বৈশিষ্ট্য অর্জন করে তা পরের প্রজন্মেও সঞ্চারিত হয় । এভাবে প্রত্যেক প্রজন্মে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাধ্যমে এক সময় সরল জীব থেকে নতুন জটিল জীবের উদ্ভব ঘটে, অর্থাৎ জৈব বিবর্তন ঘটে । যে সমস্ত পরিবর্তন জৈব বিবর্তনে সাহায্য করে তাদেরকেই অভিযোজন [Adaptation] বলা হয় ।

অভিযোজনের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা (Definition and Explanation of Adaptation)

সংজ্ঞা:- পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে যা বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে জৈব অভিব্যক্তির পথকে সুগম করে, তাকেই অভিযোজন [Adaptation] বলে

বিভিন্ন জীব বিভিন্ন পরিবেশে বসবাস করে । ওই পরিবেশে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়ে চলার জন্য জীবের বিভিন্ন অঙ্গের পরিবর্তন ঘটে । যেমন মাছ জলে বাস করার জন্য তার দেহটি মাকু আকৃতির হয়েছে । জলে সাঁতার কাটার জন্য পাখনা এবং শ্বাসকার্য চালানোর জন্য ফুলকা সৃষ্টি হয়েছে । এইভাবে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য জীবদেহের যেসব বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে এবং জীবদেহের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত যে সব পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তাদের অভিযোজন বলে ।

অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য (Importance and Purpose of Adaptation)

অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা [Importance of Adaptation]:- অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । যেহেতু পরিবেশ নিয়ত পরিবর্তনশীল, সেজন্য কোনও পরিবেশে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেখানকার জীবদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, নতুবা তাদের অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে । এই কারণেই পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য সেখানকার জীবদের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত অর্থাৎ অভিযোজিত হওয়া অবশ্য প্রায়োজনীয়  ।

অভিযোজনের উদ্দেশ্য (Purpose of Adaptation)

অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য হল :

[a] পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়ে জীবনধারণ ও বংশবিস্তার করাই হল অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য ।

[b] পরিবর্তিত পরিবেশে গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত নানান পরিবর্তন ঘটিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকাই হল অভিযোজনের অন্যতম উদ্দেশ্য ।

[c] পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নানান পরিবর্তন ঘটিয়ে আপন প্রজাতির অস্তিত্বরক্ষা হল অভিযোজনের আর একটি উদ্দেশ্য ।

[d] অভিযোজনের ফল হিসেবে জীবদেহে যে অনুকূল পরিবর্তন আসে তা বংশপরম্পরায় উত্তর পুরুষের দেহে সঞ্চারিত হয়ে বিবর্তনের পথকে সুগম করে ।

সংক্ষেপে বলা যায় যে, পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াবার অবিরাম প্রচেষ্টাই হল অভিযোজনের মূলসূত্র

*****

Related Items

ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ : অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম

ক্রোমোজোমে দু'ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়, যথা: হিস্টোন এবং নন-হিস্টোন। ক্ষারীয় প্রোটিন সাধারণত হিস্টোন জাতীয় প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়, এর মধ্যে প্রধানত আর্জিনিন , হিস্টিডিন ও লাইসিন জাতীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে । DNA অম্লধর্মী এবং হিস্টোন ক্ষারধর্মী, তাই ক্রোমোজোমে ...

আর.এন.এ. বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA)

বেশিরভাগ প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশে DNA ছাড়াও আর এক রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড নামে পরিচিত । RNA কোশের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় এবং রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে । তবে ক্রোমোজোম ...

ডি.এন.এ. বা ডি-অক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA)

ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে গঠিত যে নিউক্লিক অ্যাসিড জীবের সমস্ত জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে DNA বা ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বলে। কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকমের সজীব কোশেই DNA থাকে । প্রধানত নিউক্লিয়াসের মধ্যে ...

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন ও উপাদান

যে-কোনো কোশের প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি প্রধান অংশ থাকে, যথা -ক্রোমাটিড এবং সেন্ট্রোমিয়ার। প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতোর মতো অংশ গঠন করে, তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। প্রতিটি ক্রোমাটিড ...

ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম, DNA, RNA ও জিন

1902 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী টি.বোভেরি ও ডব্লু. এস. সাটনের পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, জিন হল ক্রোমোজোমের একটি অংশ । পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিন হল ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা D.N.A. -র একটি অংশ। এরপর বিজ্ঞানী গ্রিফিথ, অ্যাভারি, ম্যাকলয়েড ...