ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম, D.N.A. , R.N.A. ও জিন (Genaral idea about Cromosome, D.N.A., R.N.A. and Gene of Eukaryotic Cells)
বংশগতির মৌলিক সূত্রগুলির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের (1866) সময় ক্রোমোজোম ও জিনের চরিত্র সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা ছিল না । বিজ্ঞানী ওয়ালডেয়ার (Waldeyer, 1888) প্রথম ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন । 1902 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী টি.বোভেরি ও ডব্লু. এস. সাটনের পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, জিন হল ক্রোমোজোমের একটি অংশ । পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিন হল ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা D.N.A. [Deoxyribonucleic acid] -র একটি অংশ ।
এরপর বিজ্ঞানী গ্রিফিথ (1928), অ্যাভারি, ম্যাকলয়েড এবং ম্যাককার্টি (1944) -র গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রাণীদের জিনগত বা বংশগত বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহন করে নিয়ে যায় D.N.A. । তাই DNA কে কোশের জিনগত বা জেনেটিক উপাদান বলা হয় ।
অবশ্য কোনও কোনও ভাইরাসের ক্ষেত্রে RNA [Ribo nucleic acid] কোশের জিনগত উপাদান হিসেবে কাজ করে, এইসব ভাইরাসকে রেট্রোভাইরাস বলা হয় (যেমন : AIDS ভাইরাস, HIV [Human Immunodeficiency Virus] প্রভৃতি ।
ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক গঠন (Morphological structure of Eukaryotic Cromosome)
ক্রোমোজোমের সংজ্ঞা:- ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয় জালিকা থেকে সৃষ্ট এবং প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত, স্ব-প্রজননশীল যে সুতোর মতো অংশ জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যাবলি বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহন করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে ।
ক্রোমোজোমই হল জিনের বাহক —এই তত্ত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর থেকেই ক্রোমোজোমের গঠন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা শুরু হয়ে যায় । এইসব গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রোক্যারিওটিক কোশ বা সরল কোশ (যেমন : ব্যাকটেরিয়ার কোশ ) এবং ইউক্যারিওটিক কোশ বা জটিল কোশের (বহুকোশি জীবের কোশ) ক্রোমোজোমের গঠন বিন্যাস ও চরিত্র কিছুটা আলাদা । আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশে একটি মাত্র ক্রোমোজোম থাকে ।
অন্য দিকে ইউক্যারিওটিক কোশে একাধিক ক্রোমোজোম থাকে, যারা সব সময় জোড়ায় জোড়ায় (In pairs) অবস্থান করে । এক একটি জোড়ার ক্রোমোজোম দুটির প্রত্যেকটির আকৃতি (Shape) ও আকার (Size) একেবারে এক ও অভিন্ন হয় । এই রকম জোড়া বাঁধা দুটি ক্রোমোজোম সংখ্যাকে একসঙ্গে ডিপ্লয়েড (2n) ক্রোমোজোম বলা হয় । কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি জীবের দেহকোশের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সব সময় নির্দিষ্ট অর্থাৎ ধ্রুবক থাকে ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মানুষের দেহকোশের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা সব সময় 23 জোড়া, আবার ড্রসোফিলা নামে মাছির দেহকোশের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা 4 জোড়া, প্রভৃতি ।
অনেক সময়ে দেহকোশের কোনও কোনও ক্রোমোজোম জোড়া বেঁধে না থেকে এককভাবে (In Single Set) অবস্থান করে —এই ধরনের ক্রোমোজোম সংখ্যাকে হ্যাপ্লয়েড (n) বা একক সংখ্যক বলে । জননকোশ বা গ্যামোটে (Gamete) হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে ।
ক্রোমোজোমের আকৃতি:- যে-কোনও ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমগুলোকে শুধুমাত্র মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সময়ই দেখা যায় । কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলোকে দেখতে অনেকটা লাঠির মতো বা সুতোর মতো হয় ।
ক্রোমোজোমের গঠন ও আকৃতি কোশ বিভাজনের বিভিন্ন দশায় বিভিন্ন রকম থাকে । ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট কোনো আকৃতি থাকে না । প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোম কুণ্ডলী পাকাতে শুরু করে, মেটাফেজ ও অ্যানাফেজ দশায় সবচেয়ে কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে এবং তখন এর প্রকৃতি গঠন বোঝা যায় । টেলোফেজ দশায় ক্রোমোজোম আবার অকুণ্ডলীকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হতে থাকে ।
*****
- 4382 views