প্রশ্ন: কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি কাব্যাংশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি কিভাবে ধরা পড়েছে তা লেখ ।
উঃ- কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা 'অন্নদামঙ্গল' কাব্যের আখেটিক খন্ড থেকে 'কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশটি নেওয়া হয়েছে । এই কাব্যাংশটিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের যে ছবি তুলে ধরা হয়েছে তা হল—
কলিঙ্গদেশ ঘন মেঘে ঢেকে যায়, ঈশান কোণে ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যায় । ঘন ঘন বিদ্যুতের চমকানিতে কলিঙ্গের প্রজারা নিজেদের চেহারা দেখতে পায় না । গুরুগম্ভীর মেঘের গর্জনের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয় । টানা সাতদিন ধরে প্রবল বর্ষণে কলিঙ্গদেশ জলে ভেসে যায় । বৃষ্টিপাতের সঙ্গে শুরু হয় প্রবল ঝড় । প্রজারা ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রওনা দেয় । চারপাশের সবুজ প্রকৃতি ধুলায় মলিন হয়ে যায় । ঝড়-বৃষ্টির দাপটে সমস্ত শস্য নষ্ট হয়ে যায় । মুষলধারায় বৃষ্টি দেখে মনে হয়, আট দিকের আটটি হাতি যেন কলিঙ্গদেশকে জলে ভাসিয়ে দিতে চায়— 'চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ ।' জল ও স্থল মিশে একাকার হয়ে গেছে, মানুষ পথ খুঁজে পায় না । ঘন মেঘের অন্ধকারে চারিদিক এমন হয়ে গেছে যে, সকল দিন ও রাত্রির ভেদাভেদ মুছে গেছে । প্রজারা বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে । সাপের আশ্রয়স্থল জলে ভরে যাওয়ায় সাপ গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে চারিদিকে ভেসে বেড়ায় । প্রবল বৃষ্টিপাতে প্রজাদের ঘরবাড়ি, শস্য নষ্ট হয়ে যায় । প্রবল ঝড়ে মঠ, অট্টালিকাও ভেঙে পড়ে । পর্বতের সমান বড় বড় ঢেউ উঠে ঘরবাড়ি সব ধুলিস্যাৎ করে দেয় । প্রজারা এই চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অত্যন্ত দুর্বিপাকে পড়ে । সাতদিন ধরে চলে এরূপ প্রাকৃতিক তান্ডব । নিরুপায় হয়ে কলিঙ্গের মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয় ।
*****