ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর ।
১. 'সংস্কৃত ভাষা আত্মনির্ভরশীল'— সংস্কৃত ভাষাকে কেন আত্মনির্ভরশীল বলা হয়েছে ?
উঃ ভাষার আত্মনির্ভরশীলতা তার সমৃদ্ধ শব্দ-ভান্ডারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ।
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বহু ভাষায় অভিজ্ঞ । তিনি সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন এই কারণে যে সংস্কৃত ভাষার শব্দভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ । সংস্কৃত ভাষা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে সহজে অন্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করে না । বরং নিজের শব্দ ভান্ডার কে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে নেয় । এই কারণে সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল বলা হয় ।
২. 'আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব' — কোন প্রসঙ্গে লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন ?
উঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন যে বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় । এটি একটি মিশ্র ভাষা । বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বেশি । প্রাচীনকাল থেকে এদেশে সংস্কৃত ভাষা চর্চা ছিল । সেই কারণে প্রচুর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় ঢুকেছে । যতদিন সংস্কৃত চর্চা এদেশে থাকবে ততদিন এই শব্দ গ্রহণ চলবে । কারণ বাঙালির মনোভাব প্রকাশের জন্য প্রচুর পরিমাণে বাংলা শব্দ এখনও বাংলায় তৈরি হয়নি । তাই সংস্কৃত ভাষা থেকে সেই সকল শব্দ গ্রহণ করতে হয় । আর আমরা জানি সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার মাতৃ সম । এই কারণে লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন ।
৩. 'বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান' — কোন প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলী এই মন্তব্য করেছেন ?
উঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' রচনায় সত্য-শিব-সুন্দরের প্রতি বাঙালির চিরকালীন পক্ষপাতের কথা তুলে ধরেছেন । রাজনীতি, ধর্ম ও সাহিত্য ইত্যাদি যে যে ক্ষেত্রেই বাঙালি সত্য- শিব-সুন্দরের সন্ধান পেয়েছে, সেখানেই তা গ্রহণ করতে চেয়েছে । আর গতানুগতিকতা বা ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে কেউ সেই প্রচেষ্টায় বাধা দিতে গেলে বাঙালি বিদ্রোহ করেছে । আবার সেই বিদ্রোহ উশৃঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে বাঙালি । আর এই বিদ্রোহে বাঙালি মুসলমানরাও যোগ দিয়েছে । তার কারণ ধর্ম বদলে গেলেও জাতিসত্তা একই থেকে যায় ।
৪. পদাবলী কীর্তন সম্পর্কে লেখকের কোন ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় ?
উঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি হল পদাবলী কীর্তন । পদাবলী কীর্তন -এর প্রাণ এবং দেহ উভয়ই খাটি বাঙালি। মহাভারতের কৃষ্ণ চরিত্র এখানে কানুরূপ ধারণ করে পুরোপুরি বাঙালি হয়ে উঠেছেন । আর শ্রীমতি রাধাও খাঁটি বাঙালি ঘরের মেয়ে হয়েছে । এর জন্য পদাবলী কীর্তনের রাধা-কৃষ্ণ মহাভারতের বিশাল সমুদ্র থেকে তুলে এনে একেবারে বাঙালির নিজস্ব সম্পদ করে তুলে ধরা হয়েছে । পদাবলী কীর্তন বাঙালি মানসে একটি সুমধুর জায়গা করে নিয়েছে । তাই লেখকের মতে পদাবলী কীর্তন বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি ।
*****