দুই বোন --- পৃষ্ঠা-৩২

Submitted by administrator on Fri, 04/27/2012 - 01:16
দুই বোন

“শর্মি, ভেবো না আমি কাপুরুষ। দায়িত্ব ফেলে পালাব আমি, এত অধঃপতন কল্পনা করতেও পার?”

শর্মিলা কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললে, “কী হয়েছে আমাকে বুঝিয়ে বলো।”

শশাঙ্ক বললে, “আবার ঋণ করেছি তোমার কাছে, সে কথা ঢাকা দিয়ো না।”

শর্মিলা বললে, “আচ্ছা, বেশ।”

শশাঙ্ক বললে, “সেইদিনকার মতোই আজ থেকে আবার ঋণ শোধ করতে বসলুম। যা ডুবিয়েছি আবার তাকে টেনে তুলবই এই রইল কথা, শুনে রাখো। একদিন যেমন তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছিলে তেমনি আবার আমাকে বিশ্বাস করো।”

শর্মিলা স্বামীর বুকের উপর মাথা রেখে বললে, “তুমিও আমাকে বিশ্বাস কোরো। কাজ বুঝিয়ে দিয়ো আমাকে, তৈরি করে নিয়ো আমাকে, তোমার কাজের যোগ্য যাতে হতে পারি সেই শিক্ষা আজ থেকে আমাকে দাও।”
 

বাইরে থেকে আওয়াজ এল “চিঠি”।

ঊর্মির হাতের অক্ষরে দুখানা চিঠি। একখানি শশাঙ্কের নামে--

আমি এখন বোম্বাইয়ের রাস্তায়। চলেছি বিলেতে। বাবার আদেশমত ডাক্তারি শিখে আসব। ছয়-সাত বছর লাগবার কথা। তোমাদের সংসারে এসে যা ভাঙচুর করে গেলুম ইতিমধ্যে কালের হাতে আপনিই তা জোড়া লাগবে। আমার জন্যে ভেবো না, তোমার জন্যই ভাবনা রইল মনে।
 

শর্মিলার চিঠি—

দিদি, শতসহস্র প্রণাম তোমার পায়ে। অজ্ঞানে অপরাধ করেছি, মাপ কোরো। যদি সেটা অপরাধ না হয় তবে তাই জেনেই সুখী হব। তার চেয়ে সুখী হবার আশা রাখব না মনে। কিসে সুখ তাই বা নিশ্চিত কী জানি। আর, সুখ যদি না হয় তো নাই হল। ভুল করতে ভয় করি।

Related Items

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-২৪

দুই বোন স্নানাহারের সময় যায় পিছিয়ে, ঊর্মির উচ্চহাসির স্বরোচ্ছ্বাসে সমস্ত বাড়ি মুখরিত। শেষকালে শশাঙ্কের অস্বাস্থ্য-আশঙ্কায় দূতের পরে দূত পাঠিয়ে শর্মিলা এদের নিবৃত্ত করলে।

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-২৩

দুই বোন

ঊর্মি কটাক্ষ করে বলেছিল, “ভগবান মনু তবে কাকে প্রয়োগ করতে বলেন।”

শশাঙ্ক গম্ভীর মুখে বললে, “অসম্মানের সনাতন অধিকার ভগ্নীপতির। আমার পাওনা আছে। সেটা সুদে ভারী হয়ে উঠল।”

“মনে তো পড়ছে না।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-২২

দুই বোন বের করে তার উপরে মাথা গুঁজে বসে। তখন শশাঙ্কর পালা। বইগুলো টেনে নিয়ে পুনরায় বাক্সজাত করে সেই বাক্সর উপর সে চেপে বসে। ঊর্মি বলে, “শশাঙ্কদা, ভারি অন্যায়। আমার সময় নষ্ট কোরো না।”

শশাঙ্ক বলে, “তোমার সময় নষ্ট করতে গেলে আমারও সময় নষ্ট। অতএব শোধ-বোধ।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-২১

শশাঙ্কের আহারবিহার বেশবাসের চিরাচরিত ব্যবস্থায় নানারকম ত্রুটি হচ্ছে সন্দেহ নেই। যে পথ্যটা তার বিশেষ রুচিকর সেটাই খাবার সময় হঠাৎ দেখা যায় অবর্তমান। তার কৈফিয়ত মেলে, কিন্তু কোনো কৈফিয়তকে এ সংসার এত দিন আমল দেয় নি। এ-সব অনবধানতা ছিল অমার্জনীয়, কঠোর শাসনের যোগ্য; সেই বিধিবদ্ধ সংসারে আজ এত বড়ো যুগান্ত