ছাত্র জীবনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা

Submitted by Nandarani Pramanik on Tue, 09/14/2021 - 16:59

ভূমিকা :-

" ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ ।"

ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা । পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করেই করা দরকার । তবে পড়াশুনার সাথে সাথে শরীরচর্চা ও খেলাধূলার বিশেষ প্রয়োজন আছে । কারণ অসমর্থ ও দুর্বল শরীরে কখনো ভালো পড়াশুনা হয় না । এই প্রসঙ্গে তরুণদের উদ্দেশ্যে স্বামীজী বলেছেন "গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে ।" ফুটবল খেলা অর্থাৎ নিয়মিত খেলাধূলা মন ও শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখে একথা সবাই স্বীকার করে ।

খেলাধূলা ও শরীরচর্চা :-  খেলাধূলা আমাদের মনকে সতেজ করে শরীরকে সুস্থ রাখে । ছাত্রজীবনে অনাবিল আনন্দ দিতে পারে একমাত্র খেলাধূলা । খেলাধূলার জন্য চাই সবুজ মাঠ । আর এই সবুজ মাঠের অভাব বর্তমানে খুবই প্রকঠ । অভাব থাকা সত্ত্বেও স্কুলে বা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন যোগাসনের মধ্য দিয়ে শরীরচর্চা করানো একান্ত প্রয়োজন । সুস্থ শরীরের অধিকারীরাই পারে সুন্দর কিছু করতে ও লেখাপড়ায় আরও আগ্রহী হতে । প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দৌড়ানো বা বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলা করলে কেউ অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে না । এছাড়া মনে কোনো দুষ্টু বুদ্ধি বা কুচিন্তা বাসা বাঁধতে পারে না ।

খেলাধূলার প্রকারভেদ :- খেলাধূলা মূলত দুই প্রকারের । একটা হল ইনডোর গেম আর একটা হল আউটডোর গেম । ঘরে বসে যে খেলা গুলো করা হয় যেমন, লুডো, দাবা, তাস ইত্যাদিকে বলা হয় ইনডোর গেম । আর যেগুলো বাড়ির বাহিরে মাঠে খেলা হয় যেমন- ফুটবল, ভলিবল, কবাডি, ক্রিকেট ইত্যাদিকে বলা হয় আউটডোর গেম ।

খেলাধূলা ও চরিত্র বিকাশ - খেলাধূলা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে অনাবিল আনন্দ দেয় তা নয়, চরিত্রের বিকাশও ঘটায় । খেলাধূলা থেকে নিয়ম-শৃঙ্খলার বোধ জাগে যা চরিত্র গঠনে বিশেষ প্রয়োজনীয় । দলকে নেতৃত্ব দেওয়া, দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মানসিকতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বোধ খেলাধূলা থেকেই জন্ম নেয় । এই সব মানবিক মূল্যবোধ একজন প্রকৃত নাগরিকের একান্ত প্রয়োজন । এছাড়া খেলাধূলায় হার ও জিত অবশ্যম্ভাবী, কখনও একপক্ষ জয়লাভ করে আর অন্যপক্ষ হারে । এই সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারণা সহজে গ্রহণ করার শিক্ষা পাওয়া যায় খেলাধুলা থেকে । এই শিক্ষা পরবর্তী জীবনে সহজে সাফল্য বা ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতে পারে সবাই ।

আধুনিক জীবন ও খেলাধূলা :- আধুনিক জীবনে যৌথ পরিবার বা একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে গিয়ে ছোট ছোট নিউক্লিয় পরিবারে পরিণত হচ্ছে । এর ফলে বাচ্চারা বড় বেশি একাকিত্বে ভুগছে । এরপর আছে লেখাপড়ার চাপ, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার চাপ । এইসব টানাপোড়েনে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত । প্রবল চাপে অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে । এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে খেলাধূলা । খেলাধূলাই পারে মনের সব ক্লান্তি দূর করে দিতে । তাই আমাদের বড়দের এদিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম উন্মুক্ত প্রান্তরে একটু নিশ্বাস নিতে পারে এবং মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে পারে ।

খেলাধূলা ও জাতীয়-আন্তর্জাতিকতা :- বর্তমানে খেলাধূলা শুধু চিত্ত বিনোদন বা শরীর গঠন করে না, আরও বৃহত্তর জগতে পরিচিত হতে সাহায্য করে । খেলাধূলার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে । এক রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা হয় । সেখান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জাতীয়তা বোধের জন্ম নেয় । ক্রিকেট, দাবা, ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি খেলাধূলা আজ শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, পৃথিবীর বহু দেশের সঙ্গে ভারতীয়রা ক্রিকেট খেলছে । ব্যাডমিন্টন খেলে ভারতকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করছে । এইভাবে আন্তর্জাতিকতা বোধও জাগ্রত হচ্ছে ।

উপসংহার :- সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত খেলাধূলা ও শরীরচর্চা প্রয়োজন এ কথা আমরা সবাই স্বীকার করি । খেলাধূলার মাধ্যমে শরীর সুগঠিত হয় এবং নৈতিকতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও ভাতৃত্ববোধের জন্ম হয় । এইসব গুণের বিকাশের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় একজন প্রকৃত মানুষ । আধুনিক সমাজে তাই খেলাধূলার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধূলার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকেও এ বিষয়ে আরো বেশি নজর দিতে হবে ।

***

Comments

Related Items

বিশ্বের ত্রাস মহামারী করোনা

ভুমিকা:- একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার শিখরে বাস করেও মানুষ ভয়ঙ্কর এক মহামারির মোকাবিলা করতে পারেনি । সেই মহামারি হল করোনা । ধনী বা দরিদ্র কোন দেশই করোনা নামক মহামারির কবল থেকে রেহাই পায়নি । করোনা এমনই এক রোগ যা অতি দ্রুত মানুষকে সংক্রমিত করে । এটা নতুন রো

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প

"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি । / দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী — / মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, / কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু / রয়ে গেল অগোচরে । বিশাল বিশ্বের আয়োজন ; / মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ ।" — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

যুগে যুগে বাংলার বুকে যে সকল ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে অন্যতম । ঈশ্বরচন্দ্রের পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মনিষ্ঠা, নির্ভীকতা, হৃদয়বত্তা মানবসমাজে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । হিমালয়ের মতো বিশাল ও উন্নত মনের মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র শুধুমাত্র বিদ্যাসাগর ছিলেন না, করুণার সিন্ধুও ছিলেন ।

রক্তদান — মানবকল্যাণের আর এক নাম

"দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, / ধন্য হবে জনন তোমার, মহৎ তোমার দান । "

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য

" ছয় সেবাদাসী / ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করে আসি ।"