উদ্ভিদ হরমোন : অক্সিন (Auxin)

Submitted by arpita pramanik on Mon, 10/08/2012 - 11:57

অক্সিন (Auxin)

অক্সিন উদ্ভিদদেহের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন । এই হরমোন হেটরো-অক্সিন [Heteroauxin] নামেও পরিচিত । এর রাসায়নিক নাম ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড [Indole Acetic Acid বা IAA] ।

সংজ্ঞা:- উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রভাগ, মুকুলাবরণী, বর্ধনশীল পাতার কোশ ইত্যাদি থেকে উত্পন্ন নাইট্রোজেন ঘটিত যেসব জৈব অ্যাসিড উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের একসঙ্গে অক্সিন বলে । যথা : ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড [IAA] প্রভৃতি । 

অক্সিনের উৎসস্থল [Site of Auxin formation]:-  অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুলাবরণী বা কোলিওপটাইল, ভ্রূণ ও কচিপাতা বা বর্ধনশীল পাতার কোশে উত্পন্ন হয় ।

অক্সিনের কাজ (Functions of Auxin)

[1]  বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রণ:- অক্সিন প্রধানত উদ্ভদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়া অক্সিনের প্রভাবে :

(i) উদ্ভিদ কোশ বিভাজিত হয় ।

(ii) কোশ আয়তনে প্রসারিত হয় ।

(iii) ক্যাম্বিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় ।

(iv) কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, ফলে উদ্ভিদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে ।

[2]  ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ:- অক্সিন উদ্ভিদের ফটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করে । অক্সিন আলোর উত্সের বিপরীত দিকে বেশি মাত্রায় সঞ্চিত হয়ে ওই অঞ্চলের কোশগুলির দ্রুত বিভাজন ঘটায়, ফলে উদ্ভিদের কান্ড আলোর উত্সের দিকে বেঁকে যায় । উদ্ভিদের মুল স্বল্প অক্সিনে বেশি অনুভূতিশীল হওয়ায় আলোর উত্সের দিকের কোশগুলি দ্রুত বিভাজিত হয়, ফলে মূল আলোর উত্সের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায় ।  

 [3]  অঙ্গমোচন রোধ:- অক্সিন উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গের (পাতা, মুকুল, ফুল, ফল ইত্যাদি) অকাল পতন রোধ করে ।

[4]  অঙ্গ বিভেদ নিয়ন্ত্রণ:- লঘু ঘনত্বের অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গের, যেমন মূল, কান্ড, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদির পরিস্ফুটন ঘটায় । এইভাবে অক্সিন উদ্ভিদের ফল ও বীজ গঠনেও সাহায্য করে ।

[5]  ফলের পরিস্ফুটন:- অক্সিনের প্রভাবে নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয়টি ফলে পরিণত হয়, ফলে বীজহীন ফল সৃষ্টি হয় ।  অক্সিনের প্রভাবে নিষেক ছাড়াই বীজ বিহীন ফল সৃষ্টি হওয়ায় এই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে ।

[6]  উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণ:- উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে ।

অক্সিনের ব্যবহারিক প্রয়োগ :- কৃষিকার্যে অক্সিন হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ হল :

[1]  বীজহীন ফল উত্পাদন:-  বীজহীন ফল (টম্যাটো, বেগুন, লঙ্কা, লাউ, কুমড়ো, পেঁপে, তরমুজ আঙ্গুর প্রভৃতি) উত্পাদনের জন্য অক্সিন প্রয়োগ করা হয় ।

[2]  কলম তৈরি:- শাখা কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তারের জন্য নানান ফুল ও ফলের গাছে অক্সিন প্রয়োগ করে দ্রুত সৃষ্টি করা হয় ।

[3]  আগাছা দমন:- চাষের খেতে আগাছা দমনের জন্য কৃত্রিম অক্সিন [2,4-D] ব্যবহার করা হয় ।

[4]  অকাল পতন রোধ:- পাতা, ফুল ও ফলের মোচন অর্থাৎ ঝরে পড়া রোধ করার জন্য কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করা হয় ।

[5]  ক্ষত নিরাময়:- উদ্ভিদ-অঙ্গ (প্রধানত ডালপালা ) ছাঁটার পর ওই অঞ্চলের ক্ষতস্থান পূরণের জন্য কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করা হয় ।

অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন -এর পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য অক্সিন জিব্বেরেলিন সাইটোকাইনিন
১. প্রকৃতি এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ । এটি নাইট্রোজেনবিহীন জৈব যৌগ । এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ ।
২. উত্পত্তিস্থল  এটি প্রধানত কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলায় উত্পন্ন হয় । এটি প্রধানত পরিণত বীজ, অঙ্কুরিত চারা গাছ এবং     বীজপত্রে উত্পন্ন হয়  । এটি প্রধানত শস্য কলায় এবং ফুল ও ফলের নির্যাসে পাওয়া যায় ।
৩. কাজ এটি প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে । এটি প্রধানত উদ্ভিদের ফুল সৃষ্টিতে এবং বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদগমে      সাহায্য করে  । এটি প্রধানত উদ্ভিদের কোষ বিভাজন ঘটায় ।

৪. বিশেষ ভূমিকা

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের বিশেষ ভূমিকা আছে

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই ।

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এর কোনো ভূমিকা নেই ।

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স