মানব দেহে রক্ত ও রক্ত কণিকা

Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/29/2013 - 23:15

মানব দেহে রক্ত ও রক্ত কণিকা (Human Blood and Blood Cell)

রক্ত (Blood)

সংজ্ঞা - রক্ত এক প্রকার অসচ্ছ, লমনাক্ত, ক্ষার ধর্মী তরল যোগ কলা।

রক্তকে তরল যোগ কলা বলার কারণ

১৷ রক্ত ভ্রূণজ মেসোডার্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করে।

২৷ রক্তে ভিত্তি পর্দা থাকে না।

৩৷ রক্তে কোষীয় উপাদানের তুলনায় ধাত্রের পরিমাণ বেশি থাকে।

৪৷ রক্ত তার তরল ধাত্রের সাহায্যে দেহের বিভিন্ন কলা, অঙ্গে ও তন্তের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

রক্তের পরিমাণ - একজন সুস্থ স্বাভাবিক উচ্চতা ও ওজন বিশিষ্ট ( উচ্চতায় 5 ফুট এবং ওজনে 70 কেজি ) প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের রক্তের পরিমাণ 5000 cc বা 5 লিটার।

রক্তের বর্ণ - লাল

 

রক্তের কাজ (Function of Blood)

১৷ পরিবহণ মাধ্যম (Transporation) - রক্তের মাধ্যমে পুষ্টিদ্রব্য, ভিটামিন, খনিজ লবণ, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, হরমোন এবং বপাকজাত দূষিত পদার্থ সমূহ দেহের বিভিন্ন কলা কোষে পরিবাহিত হয়।

২৷ রক্ত তঞ্চন (Coagulation) - রক্ত তার তঞ্চন ধর্মের সাহায্যে আঘাত প্রাপ্ত স্থান থেকে রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করে। রক্তে থাকা প্রোথ্রমবিন, ক্যালসিয়াম আয়ন এবং অণুচক্রিকা থেকে ক্ষরিত থ্রম্বোপ্লাসটিনের সহায়তায় রক্ত তঞ্চিত হয়। রক্তে হেপারিন থাকায় রক্তবাহে রক্ত তঞ্চিত হয় না।

৩৷ অনাক্রম্যতা (Immunity) - রক্তের লিম্ফোসাইট শ্বেত কণিকা অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে দেহে রোগ জীবাণু প্রতিরোধ করে অর্থাৎ কোনো বিজাতীয় প্রোটিনের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তলে।

৪৷ প্রতিরক্ষা - রক্তের শ্বেত কণিকা বিশেষ করে মনোসাইট ও নিউট্রোফিল দেহে প্রবিষ্ট রোগ জীবাণু ধ্বংস করে দেহকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। রক্তের লিম্ফোসাইট,শ্বেত কণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয় এবং টক্সিন পদার্থ ধ্বংস করে।

৫৷ তাপ নিয়ন্ত্রণ - শ্বসনে উৎপন্ন তাপকে রক্ত সারা দেহে ছড়িয়ে দেয় বলে দেহ উষ্ণ থাকে। আবার কোনো কারণে দেহের বিভিন্ন তাপমাত্রা বেড়ে গেলে রক্ত দ্রুত দেহের পরিধিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাপ মোচন করে, ফলে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

 

রক্তের বিভাগ (Blood Group)

ভিয়েনার চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ড স্টেইনার ( Karl Land Steiner, 1901 ) রক্তে অবস্থিত অ্যাগ্লুটিনোজেন বা অ্যান্টিজেন ও অ্যাগ্লুটিনিন বা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি অনুযায়ী রক্তকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করেছে।

রক্তের এই চারটি বিভাগ হল ১৷ A , ২৷ B , ৩৷ AB , ৪৷ O

রক্তের বিভাগ

লোহিত রক্ত কণিকায় অবস্থিত অ্যাগ্লুটিনোজেন

রক্তরসে অবস্থিত অ্যাগ্লুটিনিন

A

A

[tex]\beta [/tex]

B

B

[tex]\alpha [/tex]

AB

A , B

থাকে না

O

থাকে না

[tex]\alpha ,\beta [/tex]

 

 

রক্তের বিভাগ

রক্ত দান করতে পারে

রক্ত গ্রহণ করতে পারে

A

A , AB

A , O

B

B ,AB

B , O

AB

AB

A , B , AB , O

O

A , B , AB , O

O

 

মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্ত প্রবাহের কারণ কি ?

মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে প্রধান সংবহন মাধ্যম হল রক্ত। হৃৎপিণ্ড পাম্পের ন্যায় কাজ করে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ ঘটায়। রক্ত প্রবাহের উদ্দেশ্য গুলি হল

১৷ প্রাণীদেহে পৌষ্টিক নালি থেকে শোষিত তরল খাদ্য উপাদান রক্তের মাধ্যমে সজীব কোষে পৌঁছায়।

২৷ রক্তের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গ থেকে অক্সিজেন প্রতিটি কলা কোষে পৌঁছায় এবং প্রতিটি কলা কোষে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গে পৌঁছায়।

৩৷ বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে পৌঁছায়।

৪৷ কোষে বিপাক জাত বর্জ্য পদার্থ রক্তের মাধ্যমে রেচন অঙ্গে পৌঁছায়।

৫৷ রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।

*****

Related Items

আরশোলার গমন

চলা ফেরা বা হাঁটার জন্য আরশোলার তিন জোরা সন্ধিল পদ বর্তমান। আরশোলার পৃষ্ঠ দেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডকে মোট দু জোরা ডানা আছে। আরশোলার দু জোরা ডানার মধ্যে প্রথম ডানা জোরা শক্ত ও পুরু। তারা উড্ডয়নে সাহায্য করে না। দ্বিতীয় ডানা জোরা স্বচ্ছ ও পাতলা ...

কেঁচোর গমন

প্রাণীর নাম – কেঁচো, গমন অঙ্গের নাম, গমনে সাহায্যকারী পেশীর নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - কেঁচোর দেহ খণ্ডতলের অঙ্গীয় তলে অবস্থিত আণুবীক্ষণিক এক আয়তন কণ্টক সদৃশ্য অঙ্গ হল সিটি । সিটির এক প্রান্ত দেহ অভ্যন্তরস্ত থলির মধ্যে থাকে। ...

অ্যামিবার গমন

প্রাণীর নাম - অ্যামিবা, গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - ক্ষনপদ হল অ্যামিবার কোষ পর্দা সমূহ দেহ প্রোটোপ্লাজমের অংশ বিশেষ যা নলাকারে প্রসারিত হয়। গমনের সময় ক্ষনপদ সামনের দিকে প্রসারিত হয় এবং কোনো কঠিন বস্তুর সঙ্গে ক্ষনপদটিকে দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ করে।

উদ্ভিদ দেহে ন্যাস্টিক চলন

উদ্ভিদের স্থায়ী অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের তীব্রতা বা ব্যাপ্তি অনুসারে হয় , তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে। ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ , ফটোন্যাস্টি, থার্মোন্যাস্টি, নিকটিন্যাস্টি, কেমোন্যাস্টি, সিসমোন্যাস্টি। ...

উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন

উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসরন করে হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিজম বলে। ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ, ফটোট্রপিক চলন, ফটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা, জিওট্রপিক চলন, জিওট্রপিক চলনের পরীক্ষা, হাইড্রোট্রপিক চলন ...