স্নায়ু ও স্নায়ুর কাজ

Submitted by arpita pramanik on Wed, 11/28/2012 - 08:28

স্নায়ু ও স্নায়ুর কাজ (Nerve and Function of Nerve)

স্নায়ু (Nerve)

যোগ কলার আবরণবেষ্টিত স্নায়ুতন্তুকে সাধারণ ভাবে স্নায়ু বা নার্ভ বলে । স্নায়ুতন্তুর চারদিকে যে যোগ কলার আবরণ থাকে তাকে এন্ডোনিউরিয়াম (endoneurium) বলে । এন্ডোনিউরিয়াম-আবরণযুক্ত কয়েকটি স্নায়ুতন্তু আবার পেরিনিউরিয়াম (perineurium) নামক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে । মোটা ও বড় স্নায়ুর (nerve trunk) ক্ষেত্রে কয়েকটি পেরিনিউরিয়াম আবরণযুক্ত স্নায়ুতন্তুর গুচ্ছ একসঙ্গে একটি এপিনিউরিয়াম (epineurium) নামক যোগকলার আবরণ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে । যোগ কলার এই রকম আবরণগুলিতে রক্তবাহ (blood vessels) থাকে ।

স্নায়ুর সংজ্ঞা [Definition of Nerve]:- রক্তবাহ সমন্বিত এবং পেরিনিউরিয়াম নামক যোগকলার আবরণদ্বারা আবৃত এক বা একাধিক স্নায়ুতন্তু বা স্নায়ুতন্তুগুচ্ছকে নার্ভ বা স্নায়ু বলে । 

স্নায়ুর প্রকারভেদ:- কাজ অনুসারে স্নায়ু প্রধানত তিন প্রকারের হয়, যেমন: [i] অ্যাফারেন্ট বা অন্তর্বাহী স্নায়ু    [ii] ইফারেন্ট বা বহির্বাহী স্নায়ু      [iii] মিশ্র স্নায়ু ।

[i] অ্যাফারেন্ট বা অন্তর্বাহী স্নায়ু:-

সংজ্ঞা:- যে স্নায়ু গ্রাহক বা রিসেপটর থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে স্নায়ু উদ্দীপনা বহন করে নিয়ে যায়, তাকে অ্যাফারেন্ট নার্ভ বা অন্তর্বাহী স্নায়ু বলে ।

বৈশিষ্ট্য : এই ধরনের স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য হল, এই যে :

(i) এটি সেনসরি নিউরোন দিয়ে গঠিত ।

(ii) এটি স্নায়ু-সংবেদকে গ্রাহক বা রিসেপটর থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে নিয়ে যায় ।

উদাহরণ:- অলফ্যাক্টরি স্নায়ু, অপটিক স্নায়ু প্রভৃতি ।

[ii] ইফারেন্ট বা বহির্বাহী স্নায়ু:-

সংজ্ঞা:- যে স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারক বা ইফেক্টরে সাড়া (বা নির্দেশ ) বহন করে নিয়ে আসে, তাকে বহির্বাহী স্নায়ু বা ইফারেন্ট নার্ভ বলা হয় ।

বৈশিষ্ট্য:- এই ধরনের স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য হল, এই যে :  

(i) এটি মোটর নিউরোন দিয়ে গঠিত ।

(ii) এটি স্নায়ু-সংবেদকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারক বা ইফেক্টরে বহন করে নিয়ে যায় ।

উদাহরণ:- অকিউলোমোটর স্নায়ু ।

[iii] মিশ্র স্নায়ু:-

সংজ্ঞা:- যে স্নায়ু সেনসরি এবং মোটর এই দুই রকম নিউরোনের সমন্বয়ে গঠিত,তাকে মিশ্র স্নায়ু বলে ।

বৈশিষ্ট্য:- এই ধরনের স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য হল, এই যে;

(i) এই রকম স্নায়ু সেনসরি এবং মোটর উভয় প্রকার নিউরোন দিয়েই গঠিত ।

(ii) এরা উভয় মুখে স্নায়ুস্পন্দন পরিবহন করতে পারে ।

উদাহরণ:- ভেগাস নার্ভ, ফেসিয়াল নার্ভ প্রভৃতি স্নায়ু ।

অ্যাফারেন্ট ও ইফারেন্ট স্নায়ুর পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য অ্যাফারেন্ট স্নায়ু ইফারেন্ট স্নায়ু
১.গঠন এই রকম স্নায়ু সেনসরি নিউরোন দিয়ে গঠিত। এই রকম স্নায়ু মোটর নিউরোন দিয়ে গঠিত।
২.কার্য এই রকম স্নায়ু স্নায়ুস্পন্দনকে রিসেপ্টর থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পাঠায় । এই রকম স্নায়ু স্নায়ুস্পন্দনকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে ইফেক্টেরে পাঠায় ।

স্নায়ুর কাজ (Function of Nerve)

স্নায়ুর প্রধান কাজ হল :

[i] বিভিন্ন জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অনুভুতি গ্রহন করা ।

[ii] অন্তর্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে অনুভুতিকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পাঠানো ।

[iii] বহির্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নির্দেশকে কারক অঙ্গে বয়ে নিয়ে আসা ।

[iv] বিভিন্ন পেশির সংকোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা ।

 

নিউরোন ও স্নায়ুর মধ্যে সম্পর্ক:-

(i)  নিউরোন স্নায়ুতন্ত্রের একক । অন্যদিকে নার্ভ বা স্নায়ু অসংখ্য নিউরোনের অ্যাক্সনের সমন্বয়ে গঠিত ।

(ii) অন্তর্বাহী স্নায়ু সেনসরি নিউরোন দিয়ে এবং বহির্বাহী স্নায়ু মোটর নিউরোন দিয়ে গঠিত ।

(iii)  নিউরোন স্নায়ু-স্পন্দন পরিবহন করে । আবার স্নায়ুর কাজও স্নায়ুস্পন্দন পরিবহন করা । নিউরোন তাই স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক এবং নিউরোন ও স্নায়ুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক হল কোষ ও কলার । 

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স