দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/01/2014 - 09:11

দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ (Second Carnatic War) :

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধে ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হয়নি । এদিকে কর্ণাটক ও হায়দরাবাদে নিজামের রাজ্যে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয় । নিজামের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর পুত্র নাসির জঙ্গ নিজাম পদে অভিষিক্ত হন । কিন্তু নিজামের নাতি মুজফফর জঙ্গও ওই পদের প্রত্যাশী ছিলেন । ফলে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় । অন্যদিকে কর্ণাটকের সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন সেখানকার পূর্বতন নবাবের জামাতা চাঁদা সাহেব । তাঁর সঙ্গে আনোয়ানউদ্দিনের বিরোধ বাধে । সুযোগসন্ধানী ও ধুরন্দর রাজনীতিবিদ ডুপ্লে দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে ফরাসি প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি বিস্তার করবার নীতি গ্রহণ করেন । তাঁর লক্ষ্য ছিল বিবদমান দুই পক্ষের যে কোন একজনকে সমর্থন করে তাঁকে যথাক্রমে কর্ণাটক ও হায়দরাবাদের সিংহাসনে বসিয়ে বকলমে ফরাসি সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করা । প্রথম কর্ণাটক যুদ্ধ তাঁকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও আত্মবিশ্বাসী করেছিল । তিনি চাঁদা সাহেব ও মুজফফর জঙ্গকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন । ১৭৪৯ খ্রীষ্টাব্দে অম্বুরের যুদ্ধে আনোয়ার নিহত হয় । তাঁর পুত্র মহম্মদ আলি ত্রিচিনোপল্লি পালিয়ে যান । তখন ইংরেজরা নড়েচড়ে বসে এবং নাসির জঙ্গ ও মহম্মদ আলির পক্ষ নেয় । ইতিমধ্যে নাসির জঙ্গও নিহত হন ও কৃতজ্ঞতার চিহ্ন স্বরূপ মুজফফর ডুপ্লেকে কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণে অবস্থিত রাজ্যগুলির গভর্নর নিযুক্ত করেন । ডুপ্লের ক্ষমতা শীর্ষে ওঠে । ডুপ্লের স্বপ্ন অবশ্য সফল হয়নি । ইংরেজরা মহম্মদ আলির সমর্থনে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ায় ভাগ্যচক্র ঘুরতে থাকে । ডুপ্লে ত্রিচিনোপল্লি অধিকার করতে ব্যর্থ হন । এদিকে ইংরেজরা ক্লাইভের তৎপরতায় কর্ণাটক অধিকার করেন । চাঁদা সাহেব নিহত হন । কর্ণাটকে ফরাসি আধিপত্য বিলুপ্ত হয় । হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করবার আগেই ফরাসি কর্তৃপক্ষের আদেশে ডুপ্লে স্বদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন । পরবর্তী ফরাসি গভর্নর গডেহু ইংরেজদের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নেন ।

ডুপ্লের মূল্যায়ন (Evaluation) : ডুপ্লে একজন ব্যর্থ নায়ক । তবে তাঁর অনুসৃত নীতিতে কোন ভুল ছিল না । পরবর্তী কালে এই নীতি অনুসরণ করেই ইংরেজরা সফল হয়েছিল । আসলে ডুপ্লের ব্যর্থতার জন্য ফারাসি কর্তৃপক্ষই বেশি দায়ী ছিল । তারা ডুপ্লের সঙ্গে যথাযথ সাহায্য করেননি । তাঁকে সুযোগও দেয়নি । ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এখানেই ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তফাত । তাঁর ব্যর্থতার জন্য ডুপ্লে নিজেও কিছুটা দায়ী ছিলেন । তাঁর উদ্ধত আচরণ, সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ ও তাদের অসহযোগিতা, ইংরেজদের শক্তি ও কূটনীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাঁর পতনের জন্য দায়ী ছিল ।

*****

Related Items

ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও তার ফলাফল

ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার নানাবিধ কারণের মধ্যে একটি বড়ো কারণ ছিল পুঁজির জোগান । এই পুঁজির অনেকটাই এসেছিল ঔপনিবেশিক ব্যবসাবাণিজ্য থেকে । ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে দুটি সমস্যা দেখা দেয় ...

ইউরোপীয় ধনতন্ত্র ও ঔপনিবেশিক অর্থনীতি

ভারত ইতিহাসে ইংরেজ শাসনের তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে ধনতন্ত্র ও ঔপনিবেশিক অর্থনীতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার । কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মানদণ্ড অচিরেই রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছিল । আগে যেসব বহিরাগত জাতি ভারতে এসেছিল, তাদের সঙ্গে ...

দেওয়ানি লাভ ও দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব

বক্সারের যুদ্ধে ত্রিশক্তির পরাজয়ের পর প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে ইংরেজদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য স্থাপনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । এই অবস্থায় ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে বাংলায় ক্লাইভের পুনরাগমন ঘটে । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের এলাহাবাদ চুক্তিতে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কারা ও এলাহাবাদ ছাড়া ...

বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব

কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুটি, মুঙ্গের ও উদয়নালায় পরপর ছয়টি যুদ্ধে মিরকাশিম পরাজিত হন । এই অবস্থায় ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মিরকাশিমকে সিংহাসনচ্যুত করে ইংরেজরা মিরজাফরকে আবার বাংলার মসনদে বসান । কিন্তু মিরকাশিম হাল না ছেড়ে মুঘল সম্রাট শাহ আলম ...

মির কাশিম (Mir Kasim)

কোম্পানির প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ এবং বর্ধমান, মেদিনীপুর, চট্টোগ্রামের জমিদারি প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মিরকাশিম বাংলার মসনদ লাভ করেন । ইংরেজদের সাহায্যে বাংলার মসনদ দখল করলেও তিনি ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন । অহেতুক ইংরেজ বিরোধিতা তাঁর ...