গুরু নানক জয়ন্তী

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 11/05/2019 - 07:24

 ৮ই নভেম্বর, ২০২২ গুরু নানক জয়ন্তী 

 

Guru-Nanak

 গুরু নানক দেব ১৪৬৯ সালের ২০ শে অক্টোবর জন্ম গ্রহন করেন ।  তিনি শিখ ধর্মের প্রবক্তা এবং এই ধর্মের ১০ জন প্রধান গুরুর মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন । তিনি বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত নানকানা সাহেব নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন । ১৫৩৯ সালের ৭ই মে বর্তমান ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের করতারপুর নামক স্থানে তার মৃত্যু হয় । আসলে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি । তিনি একসময় সবার অলক্ষ্যে চলে গিয়েছিলেন । শিখ ধর্মের প্রবক্তা ছাড়াও তিনি হিন্দু ধর্মানুসারীদের কাছে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন । তার মতে সমাজের প্রতি মানুষের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে কার্যসিদ্ধিতে বিশেষ তৎপরতা এবং চিন্তার একাগ্রতা ।

জীবনী:- গুরু নানক ১৪৬৯ সালের ২০শে অক্টোবর  বেদী ক্ষত্রী গোত্রের এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার জন্মস্থান পাকিস্তানের লাহোরের নিকটে অবস্থিত রায় ভয়দি তালবন্দী গ্রামে । বর্তমানে এই গ্রামের নাম গুরুর নামানুসারে নানকানা সাহেব রাখা হয়েছে । তার জন্মস্থানে বর্তমানে শিখদের একটি বৃহৎ উপাসনালয় রয়েছে যার নাম গুরুদুয়ারা জনম আস্থান । তাঁর পিতার নাম মেহতা কল্যাণ দাস বেদী । মেহতা কল্যাণ দাস বেদী মেহতা কালু নামে পরিচিত ছিলেন । তিনি  একজন পাটোয়ারি ছিলেন, অর্থাৎ সরকারের ভূমি রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন । তিনি গ্রামের মুসলিম জমিদার রায় বুল্লারের অধীনে চাকরি করতেন । নানকের মায়ের নাম তৃপ্তা দেবী এবং তার এক বড় বোন ছিল যার নাম নানাকি । জনমসাক্ষীর মাধ্যমে নানকের জন্মের সময়কার সকল তথ্য জানা যায় । এই সূত্রমতে জানা যায়, যে জ্যোতিষী তার জন্মের কোষ্ঠী লিখতে এসেছিলেন তিনি শিশুটিকে দেখে হাত জোড় করে তার নিকট প্রার্থনা করেন এবং তিনি এই বলে দুঃখ প্রকাশ করেন যে, এই শিশু যখন হিন্দু এবং মুসলিম সবার কাছে বিশেষ প্রভাবশালী এবং উপাসনার লক্ষ্য হয়ে উঠবে তখন তিনি তা দেখতে পারবেন না ।

গুরু নানক দেবজির জন্মদিন টিকে শিখরা  গুরু নানক জয়ন্তী হিসাবে উদযাপন করে থাকেন । এই উৎসব সারা বিশ্বজুড়ে বিশেষ সমারোহে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে । গুরু নানক ছিলেন শিখ ধর্মের প্রথম গুরু । তিনিই শিখ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন ।  গুরু নানক জয়ন্তী পালনের দিনটি প্রতি বছর পরিবর্তিত হয় হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক পূর্ণিমায় অর্থাৎ কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে । সাধারণ ভাবে এই তারিখটি পড়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে । তিনদিন ব্যাপী এই উৎসব শিখদের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহিব পাঠের মাধ্যমে সূচনা হয় । এই গ্রন্থসাহিব কোনোরকম বিরাম না দিয়ে পাঠ করা হয় একটানা ৪৮ ঘন্টা ধরে, একে অখন্ড পাঠ বলে । গুরু নানক জয়ন্তীর আগের দিনে এই পাঠ সমাপ্ত করা হয় । তারপর সকালে মিছিলের আয়োজন করা হয় যাকে প্রভাত ফেরি বলা হয় । এই প্রভাত ফেরি গুরুদুয়ারা থেকে শুরু হয় আর বিভিন্ন লোকালয়ের দিকে এগিয়ে যায় । মিছিলের আগে আগে পাঁচ জন সশস্ত্র রক্ষী নিশান সাহিব পতাকা বহন করে নিয়ে যায় । মিছিলের সাথে সাথে পবিত্র গুরু গ্রন্থ সাহিবকে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করে  একটি পালকিতে বহন করে নিয়ে চলে । মিছিলে অংশ গ্রহনকারীরা ধর্মীয় গান গাইতে গাইতে এগিয়ে চলে ।  ভোর  ৪টা বা ৫টা  থেকে  আশা-দি-ভর গান গেয়ে গুরু নানক  জয়ন্তী শুরু হয় এবং দুপুর পর্যন্ত চলে । দুপুরে গুরুদুয়ারায় উপস্থিত লোকজনদের লঙ্গরখানায় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয় । প্রচুর শিখ ধর্মালম্বী সেবা ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করে থাকেন ।

******

Comments

Related Items