সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 10/19/2021 - 08:52

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents) : সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে, নির্দিষ্ট দিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয় । সমুদ্রজলের এই প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে । সমুদ্রস্রোত সাধারণত একমুখী হয় । বায়ুপ্রবাহ দ্বারা তাড়িত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় বলে এর গতিবেগ খুবই কম, ঘন্টায় মাত্র ৫ - ১০ কিমি. হয়ে থাকে । সমুদ্রের জলরাশি যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোত এবং যখন সমুদ্রের ৪০০ মিটার গভীর অংশের মধ্য দিয়ে চলাচল করে, তাকে অন্তঃস্রোত বলে । মোট সমুদ্রজলের মাত্র ১০% পৃষ্ঠস্রোতরূপে এবং ৯০% অন্তঃস্রোতরূপে প্রবাহিত হয় । সমুদ্র স্রোত যে দিকে প্রবাহিত হয় সেই দিক অনুসারে বা যে দেশের পাশ দিয়ে চলে যায় তার নামানুসারে সমুদ্রস্রোতের নামকরণ হয় ।

সমুদ্রতরঙ্গ (Waves) : সমুদ্রে যখন ঢেউ ওঠে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশি কোনো দিকে প্রবাহিত না হয়ে একই স্থানে ওঠানামা করলে তাকে সমুদ্রতরঙ্গ বলে । অন্যভাবে বলা যায়, সমুদ্রের জলকণাগুলি বৃত্তাকার কক্ষপথে উলম্বভাবে ঘুরতে থাকলে জলের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়, সমুদ্র জলের এই আলোড়নকে সমুদ্রতরঙ্গ বলে । বিজ্ঞানী আর্থার হোমস -এর মতে 'সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষেত্রে জলরাশি না এগিয়ে কেবলমাত্র জলপৃষ্ঠ ওঠানামা করে, তরঙ্গের অবয়ব বা ঢেউ সামনের দিকে এগিয়ে যায়' । সমুদ্র জলপৃষ্ঠের সঙ্গে প্রবল বায়ুপ্রবাহের সংঘর্ষে সমুদ্রতরঙ্গের সৃষ্টি হয় । সমুদ্রতরঙ্গ যখন বেগে সৈকতভূমির ওপর আছড়ে পড়ে, তাকে সম্মুখতরঙ্গ বা সোয়াশ বলে । আবার তরঙ্গের জলরাশি যখন সৈকতের ঢাল বরাবর পুনরায় সমুদ্রে ফিরে যায়, তাকে অন্তঃতরঙ্গ বা ব্যাকওয়াশ বলে ।

সমুদ্রতরঙ্গ ও সমুদ্রস্রোতের তুলনা

সমুদ্রতরঙ্গ সমুদ্রস্রোত
(১) সমুদ্র জলপৃষ্ঠের একই স্থানে ছন্দোবদ্ধ উঠানামাকে সমুদ্রতরঙ্গ বলে । (১) সমুদ্রজলের নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে ।
(২) প্রবল বায়ুপ্রবাহ, ভূমিকম্প প্রভৃতি সমুদ্রতরঙ্গের সৃষ্টি করে ।       (২) নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, পৃথিবীর আবর্তন গতি প্রভৃতি সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় ।
(৩) সমুদ্রতরঙ্গ আড়াআড়িভাবে উপকূলভূমিতে এসে আছড়ে পড়ে ।  (৩) সমুদ্রস্রোত উপকূলভূমির পাশ দিয়ে উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয় ।
(৪) সমুদ্রতরঙ্গের দ্বারা উপকূলের জলবায়ু প্রভাবিত হয় না ।  (৪) সমুদ্রস্রোত উপকূল অঞ্চলের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে ।
(৫) সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলভূমিকে ক্ষয় করে ক্ষয়জাত পদার্থসমূহকে সঞ্চয় করে ।    (৫) সমুদ্রস্রোত সামুদ্রিক উপাদান ও ক্ষয়জাত পদার্থসমূহকে বহন করে ।

উষ্ণতার তারতম্যে সমুদ্রস্রোত দু-প্রকারের হয় । যথা— (ক) উষ্ণ স্রোত ও (খ) শীতল স্রোত ।

(ক) উষ্ণ স্রোত : সমুদ্রের উষ্ণ জলরাশি যখন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে উষ্ণ স্রোত বলে । এই প্রকারের স্রোত নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয়ে পৃষ্ঠস্রোতরূপে মেরু অঞ্চলের শীতল সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় ।

(খ) শীতল স্রোত : সমুদ্রের শীতল জলরাশি যখন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে স্রোতরূপে প্রবাহিত হয়, তাকে শীতল স্রোত বলে । এই স্রোত মেরু অঞ্চলের শীতল সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয়ে অন্তঃস্রোতরূপে ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় ।

******

Comments

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত