জোয়ার ভাটা ও জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ (Tides and Causes of Tides)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 10/21/2021 - 11:29

জোয়ার ভাটা (Tides) : পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরে সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্রতরঙ্গ ছাড়া আরও একটি গতি রয়েছে । এই গতির ফলে সমুদ্রের জল প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য কোনো এক জায়গায় ফুলে ওঠে এবং অন্য কোনো জায়গায় নেমে যায় । মূলত চাঁদের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে এবং অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় সূর্যের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে নিয়মিতভাবে দিনে দু’বার করে পর্যায়ক্রমে সমুদ্রের জল এক জায়গায় ফুলে ওঠে, আবার এক জায়গায় নেমে যায় । চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রের জলরাশির এই নিয়মিত ফুলে ওঠা বা জলস্ফীতিকে জোয়ার (High Tide) এবং সমুদ্রের জলরাশির এই নিয়মিত নেমে যাওয়া বা সমুদ্রজলের অবনমনকে ভাটা (Low Tide) বলে । পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে আবর্তন করে বলে জোয়ারের স্রোত পৃথিবীর গতির বিপরীতে অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয় । লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে, উপকূলের কাছে সমুদ্রজলের গভীরতা কমে যায় বলে সেখানে জলরাশি অনেক বেশি ফুলে ওঠে বা নেমে যায় । তাই সমুদ্রের মোহনা থেকে নদীর গতিপথে কয়েক কিমি. এলাকা জুড়ে জোয়ার ভাটা পরিলক্ষিত হয় । সাধারণত সমুদ্রের সকল অংশে গ্রীষ্ম বা শীতকালের তুলনায় বর্ষাকালে জোয়ার ভাটার প্রভাব অধিক হয়ে থাকে ।

জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ (Causes of Tides) : প্রধানত দুটি কারণে সমুদ্রে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয় । যথা— (ক) চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব ও (খ) কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব ।

(ক) চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব (Gravitational Pull of the Moon and Sun) : পৃথিবীতে সমস্ত বস্তুই পরস্পরকে আকর্ষণ করে । এই আকর্ষণের নাম মহাকর্ষণ । মহাকর্ষণের ফলে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে এবং চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে বেড়ায় । আবার এই মহাকর্ষণের পরিমাণ সব জায়গায় সমান নয় । যে বস্তু যত বড় তার আকর্ষণ ক্ষমতা তত বেশি । কিন্তু দূরত্ব বাড়লে আকর্ষণের কার্যকরী ক্ষমতা বহু গুণে কমে যায় । সূর্য এবং চন্দ্র উভয়েই পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে । সূর্য চন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি বড় হলেও সূর্যের তুলনায় চন্দ্র পৃথিবীর কাছে আছে বলে জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সূর্যের আকর্ষণের তুলনায় চন্দ্রের আকর্ষণই বেশি কার্যকরী হয় । সূর্যের ভর চন্দ্রের ভরের তুলনায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও সূর্য চন্দ্রের প্রায় ৩৮০ গুণ দূরে অবস্থিত । এইজন্য পৃথিবীর জলভাগের ওপর চন্দ্রের আকর্ষণী ক্ষমতা সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সূর্যের চেয়ে প্রধানত চন্দ্রের আকর্ষণেই জোয়ারভাটা হয় । চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে কঠিন পদার্থের তুলনায় পৃথিবীর তরল জলরাশি খুব সহজে প্রবাহিত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে । পৃথিবীর জলরাশির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায়, চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ প্রভাবিত স্থানের দিকে পৃথিবীর জলরাশি চলে যাওয়ায় কম আকর্ষণযুক্ত স্থানে ভাটার সৃষ্টি হয় ।

(খ) কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব (Centrifugal force) : পৃথিবী তার অক্ষ বা মেরুদণ্ডের ওপর দ্রুতবেগে আবর্তন করার ফলে ভূপৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে নিক্ষিপ্ত হবার প্রবণতা লাভ করে । একে কেন্দ্রাতিগ শক্তি বলে । এর প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের জলরাশি নিক্ষিপ্ত হয়ে ফুলে ওঠে এবং জোয়ারের সৃষ্টি হয় । তবে কেন্দ্রাতিগ শক্তি ভূপৃষ্ঠে চতুর্দিকে কার্যকর হলেও চাঁদের আকর্ষণ শক্তি প্রধানত একদিকে অধিক কার্যকর হয় । তাই কেন্দ্রাতিগ শক্তি অপেক্ষা মূলত চাঁদের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবেই জোয়ারের সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

*****

Comments

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত