হিমবাহ পৃষ্ঠের প্রকৃতি : ভূবিজ্ঞানী মঙ্কহাউস -এর মতে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহের উপরে নানা ধরনের ফাটল দেখা যায় । এই ফাটলগুলি প্রধানত তিন প্রকারের হয় যথা—
(১) বার্গশ্রুন্ড (Bergschrund) : হিমবাহ উঁচু পার্বত্য উপত্যকা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসার সময় হিমবাহ পৃষ্ঠে যে প্রায় উলম্ব গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়, তাকে বার্গশ্রুন্ড বলে । এই ফাটলগুলি হিমবাহ-পৃষ্ঠ থেকে তলদেশ পর্যন্ত প্রসারিত থাকে । বার্গস্রুন্ড কেবলমাত্র গ্রীষ্মকালেই পরিলক্ষিত হয় । বছরের অন্য সময় এইসব ফাটলগুলো পাতলা তুষার দ্বারা ঢেকে যায়, তখন এদের উপস্থিতি ওপর থেকে বোঝা যায় না । এই জন্য কখনো কখনো বার্গস্রুন্ডগুলি পর্বতারোহীদের কাছে চরম বিপদসংকুল হয়ে ওঠে ।
(২) ক্রেভাস (Crevasses) : হিমবাহ যখন উঁচু পার্বত্য উপত্যকা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে থাকে, তখন হিমবাহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে প্রবাহের গতির তারতম্য ঘটলে হিমবাহপৃষ্ঠে অনেক সময় অসংখ্য তির্যক ও সমান্তরাল ফাটলের সৃষ্টি হয়, তাদের ক্রেভাস বলে । হিমবাহ যদি আগাগোড়া সমান ঢাল বিশিষ্ট অঞ্চল এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তবে ক্রেভাসেস -এর সৃষ্টি হয় না । কিন্তু যখন হিমবাহ উপত্যকার ঢাল বেড়ে যায়, তখন হিমবাহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে গতির পার্থক্য ঘটে । ফলে হিমবাহের পৃষ্ঠে টান পড়ে, তখনই ক্রেভাসেসের [Crevasses] সৃষ্টি হয় । ক্রেভাসগুলি পাতলা তুষারে ঢাকা থাকে বলে সহজে এদের অবস্থান বোঝা যায় না । তাই পর্বতারোহীদের ক্ষেত্রে এগুলি বিপদের সম্ভাবনার সৃষ্টি করে ।
(৩) র্যাণ্ডক্লুফট (Randkluft) : দিনের বেলা পর্বতগাত্র থেকে বিকিরিত উত্তাপের প্রভাবে পর্বতের দেওয়াল ও হিমবাহের মধ্যে যে ফাঁকের সৃষ্টি হয় তাকে র্যাণ্ডক্লুফট বলে । এগুলিও পর্বতারোহীদের পক্ষে বিপজ্জনক ।
*****