গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা : উনবিংশ শতকের বাংলায় গ্রামীণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কুমারখালীর পাঠশালার পন্ডিত হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদিত 'গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা' নামক পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই পত্রিকায় তৎকালীন বাংলার সমাজজীবনের যথেষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করা যায় । হরিনাথ মজুমদার 'কাঙাল হরিনাথ' নামে পরিচিত ছিলেন । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল থেকে প্রথম নয় বছর কলকাতার আপার সার্কুলার রোডের বাহির মিরজাপুরের গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্নের 'বিদ্যারত্ন প্রেস' থেকে এই পত্রিকাটি ছাপা হয় । পরে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি গ্রাম থেকে 'মথুরানাথ প্রেস' নামক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে পত্রিকাটির প্রকাশের কাজ চলতে থাকে ।
'গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা' পত্রিকাটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হওয়া শুরু করে । পরে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক্ষিক এবং ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয় । এই পত্রিকাটি ২২ বছর চলেছিল । হরিনাথের দারিদ্র ও বার্ধক্যের জন্য এবং ঋণের দায়ে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে এটি বন্ধ হয়ে যায় । এই পত্রিকায় সাধারণ সমস্যার সাথে রাজনৈতিক প্রসঙ্গও আলোচিত হত । এই পত্রিকায় গ্রামবাসীদের অবস্থা, তাদের কাজকর্ম, গ্রাম্য রীতিনীতি, গ্রামীণ সমাজসভ্যতার রোজকার জীবনের ছবি ধরা পড়ে । পত্রিকাটিতে গ্রামীণ সমাজের অসহায়, দরিদ্র চাষি ও গরিব মানুষদের প্রতি জমিদার, মহাজন, নীলকর সাহেবদের নির্মম অত্যাচার, পুলিশ ও মফসসলের রাজকর্মচারীদের অন্যায় আচরণ পরিবেশিত হয়েছে ।
১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হলে 'গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা' প্রজাদের পক্ষ নেয় এবং ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষ শুরু হলে কাঙাল হরিনাথ তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । শোষণ ও অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি এই পত্রিকায় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, বিপ্লবীদের শপথ ও বীরত্বগাথা প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা থাকত । লালন ফকিরের গান প্রথম এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় ।
****