রক্তদান — মানবকল্যাণের আর এক নাম:-
ভূমিকা :- "সকলের তরে সকলে আমরা / প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"
পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়া, সহযোগিতা ও সহানুভূতির ভিত্তিতে আমাদের এই সমাজ গড়ে ওঠে । মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । একা একা কেউ বাঁচতে পারে না । সকলকে নিয়েই মানুষ বাঁচে । তাই সকলের উচিত সকলের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো । পরের মঙ্গলের জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেন, তাঁরা মহান ব্যক্তি । রক্তদানও এক মহৎ কর্ম কারণ একটু রক্তদান মানে একটা জীবন দান ।
রক্তের বিভাগ : বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বহু জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধি সহজেই নিরাময় হচ্ছে । মুমূর্ষু রোগীর দেহে রক্ত সঞ্চালন করে অনেক রোগ সারানো হয় । কিন্তু যে-কোনো মানুষের রক্ত নির্বিচারে অন্য মানুষের দেহে সঞ্চালিত করা যায় না । কারণ রক্তের উপাদান এক হলেও ব্যক্তিভেদে তার তারতম্য ঘটে । ভিয়েনার চিকিৎসাবিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০১ সালে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে অনেক গবেষণা করে মানুষের রক্তকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত করেন । এগুলি A , B , AB এবং O গ্রুপ । রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে সুস্থ ব্যক্তির দেহের রক্ত নিয়ে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সঞ্চালিত করা হয় ।
মানবদেহে রক্তের প্রয়োজনীয়তা : রক্ত মানবদেহের একটি অপরিহার্য উপাদান । রক্ত মানবদেহে সঞ্জীবনী শক্তি দান করে এবং জীবনধারাকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে । কোনো রোগভোগের কারণে বা দুর্ঘটনা ঘটলে দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে শরীরে রক্তের ঘাটতি পড়ে । সেই ঘাটতি পূরণের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয় । মানবদেহে অন্য কোনো প্রাণীর রক্ত দেওয়া যায় না এবং কোনো রাসায়নিক পদ্ধতিতে রক্ত তৈরীও করা যায় না । মানুষের রক্তই মানবদেহে সঞ্চারিত করতে হয় । তাই রক্তের প্রয়োজনে মানুষ মানুষের কাছেই ছুটে আসে । সতেজ ও বিশুদ্ধ রক্তের ছোঁয়ায় মুমূর্ষু মানুষ প্রাণ ফিরে পায় ।
রক্তদান ও রক্তসংরক্ষন :- শুভ চেতনা সম্পন্ন মানুষের কাছে রক্তদান এক মহৎ কাজ । উপযুক্ত বয়সের এবং সুস্থ মানুষের দেহ থেকে ২৫০ সি.সি রক্ত এক বারে টেনে নেওয়া যায় । এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না । ঘাটতি রক্ত সাত দিনেই পূর্ণ হয়ে যায় । ১৯২৫ সালে কলকাতায় শুরু হয় রক্তদান সঞ্চালনের কাজ । এখন বিভিন্ন ক্লাবে, কলেজে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রক্তদান শিবির হয় যেখানে যুবক যুবতীরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে রক্ত দান করেন । অর্থের বিনিময়ে অনেক দরিদ্র নিরুপায় মানুষও রক্তদান করে । রক্ত সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্লাডব্যাংক তৈরি হয়েছে । সেখানে সঠিক পদ্ধতিতে রক্ত সংরক্ষণ করে রাখা হয় । প্রায় তিন মাসের মতো সময় সীমায় রক্ত বিশুদ্ধ থাকে ।
রক্তদান একটা পূণ্য কাজ:- যে কোনো দানই মহৎ কাজ, অন্নহীনে অন্নদান, গৃহহীনকে আশ্রয়দান, তৃষ্ণার্তকে জল দান, সবই পুণ্যের কাজ । কিন্তু মুমূর্ষুকে রক্তদান — এর চাইতে বড় কর্ম এবং ধর্ম আর কিছু নেই । তাই রক্তদানের আরেক নাম জীবনদান । বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় রক্তের পরিমাণ খুব অল্প । রক্তদানের জন্য আরো প্রচার বাড়াতে হবে । এই কাজে এগিয়ে আসার জন্য মানুষকে সচেতন করতে এবং অনুপ্রাণিত করতে আমাদেরকে আরও বেশি করে সচেষ্ট হতে হবে ।
উপসংহার :- রক্তদান মানুষের সমস্ত সদগুণগুলির মধ্যে অন্যতম গুণ । রক্তের রং লাল । এখানে সাদাকালোর ভেদাভেদ, জাতি ধর্মের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেয় । কারণ সবার রক্তের রং লাল । জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রক্তদান এক পবিত্র কর্তব্য ।
"দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, / ধন্য হবে জনম তোমার, মহৎ তোমার দান । "
*******