বিশ্বের ত্রাস মহামারী করোনা

Submitted by Nandarani Pramanik on Sun, 03/14/2021 - 19:59

ভুমিকা:- একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার শিখরে বাস করেও মানুষ ভয়ঙ্কর এক মহামারির মোকাবিলা করতে পারেনি । সেই মহামারি হল করোনা । ধনী বা দরিদ্র কোন দেশই করোনা নামক মহামারির কবল থেকে রেহাই পায়নি । করোনা এমনই এক রোগ যা অতি দ্রুত মানুষকে সংক্রমিত করে । এটা নতুন রোগ সেজন্য এর প্রতিষেধক এখন সার্থকভাবে আবিষ্কার হয়নি । ফলে এই রোগে বহু মানুষ মারা গেছে এবং মরছে । এই রোগকে এখন শুধু মহামারি বললে সঠিক বলা হবে না, এটা অতিমারি ও বটে ।

করোনার লক্ষণ ও সংক্রমণ:- করোনা রোগীর সাধারণ লক্ষণগুলো হল কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে অল্প চিকিৎসায় মানুষ সুস্থ হয়ে যায় । কিন্তু বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা হৃদরোগে আক্রান্ত, ডায়াবেটিক, শ্বাসকষ্ট অথবা ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের জন্য এই রোগ বিপদজনক । করোনা একটি সংক্রামক ব্যাধি বা নভেল করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয় ।

কোভিদ-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত হয় 2019 সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশের একজন মানুষ । রোগটা শনাক্ত করার আগেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বহু মানুষকে সংক্রমিত করে । ২০২০ সালের ১১ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা রোগটি কে মহামারী বলে ঘোষণা করে । সারাবিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়লেও চীন, আমেরিকা, ইতালি, ব্রিটেন, ব্রাজিল, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে এই রোগ দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেয় । এই দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে বেশি ।

রোগ মুক্তির উপায়:-  করোনার প্রতিষেধক এখনো সঠিকভাবে আবিষ্কৃত না হওয়ায় এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে । এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কতগুলি সাবধানতা অবলম্বন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য । সেগুলি হল বারবার হাত ধোওয়া অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত শোধন করা, নিজের নাক, মুখে অপরিষ্কার হাত না দেওয়া, বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক । সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, বহু মানুষ একত্রে জমায়েত না হওয়া এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মত জীবন যাপন করলে এই রোগের হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যায় ।

পরিসংখ্যান:- পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৮ টা দেশে প্রায় সাড়ে ১৭ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে । তবে অনেক মানুষ সুস্থও হয়েছে । ভারতবর্ষে সংক্রমণের প্রথম খবর পাওয়া যায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে । পরে তা মহামারির রূপ ধারণ করে । সংক্রমণের নিরিখে আমেরিকা, ব্রাজিলের পরেই ভারতবর্ষের স্থান । করোনা মোকাবিলার জন্য আমাদের দেশে প্রায় ১০ মাস লকডাউন ছিল । দেশের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়ে । এই সময় কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকার মিলে করোনা মোকাবিলার জন্য বহু হাসপাতাল নির্মাণ করেন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন । গরিব মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ায় বিনা পয়সায় রেশনের ব্যবস্থা করেন । যাতে মানুষ না খেতে পেয়ে মরে । এইভাবে দেশে করোনা মোকাবিলার ব্যবস্থা করে আমাদের দেশ এবং দেশের মানুষ । ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে বছরের শেষের দিকে সবরকম সতর্কতা বজায় রেখে অল্প-বিস্তর অফিস, আদালত, বাজার, পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয় ।

উপসংহার:- অন্ধকার রাত্রির পর আসে একটা সুন্দর ঝকঝকে সকাল, তেমনি বিশ্বের 'গভীর গভীরতর অসুখ' -এর গ্লানি মুছে যাবে পৃথিবী আবার সুন্দর হবে । এই আশা নিয়ে মানুষ বাঁচে । 'মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারি নিয়ে ঘর করি' -মহামারির কবলে আগেও মানুষ পড়েছে । সেই অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ আশা করে যে, এই কাল দিনের হাত থেকেও আমরা উদ্ধার পাবো । আশার কথা সারা পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানীরা অনলস ভাবে চেষ্টা করে চলেছেন করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য । এঁদের চেষ্টা বৃথা যায়নি । অনেক দেশই দাবি করছেন যে তারা প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছেন । আমাদের ভারতবর্ষেও করোনা-টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হতে চলেছে ।

*****

Comments

Related Items

ছাত্র জীবনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা

'ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ' । ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা । পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করেই করা দরকার ।

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প

"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি । / দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী — / মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, / কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু / রয়ে গেল অগোচরে । বিশাল বিশ্বের আয়োজন ; / মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ ।" — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

যুগে যুগে বাংলার বুকে যে সকল ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে অন্যতম । ঈশ্বরচন্দ্রের পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মনিষ্ঠা, নির্ভীকতা, হৃদয়বত্তা মানবসমাজে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । হিমালয়ের মতো বিশাল ও উন্নত মনের মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র শুধুমাত্র বিদ্যাসাগর ছিলেন না, করুণার সিন্ধুও ছিলেন ।

রক্তদান — মানবকল্যাণের আর এক নাম

"দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, / ধন্য হবে জনন তোমার, মহৎ তোমার দান । "

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য

" ছয় সেবাদাসী / ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করে আসি ।"