Submitted by Nandarani Pramanik on Wed, 06/17/2020 - 18:11

মিড ডে মিল (Mid-Day-Meal):-

ভূমিকা:- শিশুদের শিক্ষার অধিকার সবচেয়ে বড় অধিকার । দারিদ্র্য পীড়িত ভারতে বেশির ভাগ শিশু এই অধিকার থেকে বঞ্চিত । পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য বেশির ভাগ শিশু, শিশুশ্রমিকে পরিণত হয় । শিশুদের শৈশবকে সুরক্ষিত করার জন্য ভারত সরকার এক জনমুখি প্রকল্প গ্রহণ করেন । এই প্রকল্পের নাম মিড-ডে-মিল । আর্থিক দিক থেকে দুর্বল ও সমাজের পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে টেনে আনাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য । এই প্রকল্পের ব্যয়ভারের ৭৫ শতাংশ বহন করে কেন্দ্রীয় সরকার আর ২৫ শতাংশ বহন করে রাজ্য সরকার । ২০০৩ সালে এই প্রকল্প চালু হয় । বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে সমস্ত সরকারি স্কুল, স্থানীয় স্বশাসিত ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত স্কুল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, পঞ্চায়েত পরিচালিত স্কুল, এস.এস.কে এবং এম.এস.কে বিদ্যালয়, সরকারি অনুমোদিত মাদ্রাসা প্রভৃতি । প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা মিড-ডে-মিল খায় । মিড-ডে-মিল চালু হওয়ায় স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে এবং পড়াশুনায় মনোযোগী হয়েছে ।

শিশুশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও মিড-ডে-মিল:— প্রায় ৭২/৭৩ বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আজও সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি । যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের মূল ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষিত সমাজ । দেশবাসী শিক্ষিত না হলে গণতন্ত্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায় । তাছাড়া শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি বা দেশ উন্নতি করতে পারে না । দরিদ্র পরিবারের শিশুরা খাদ্যের অভাবে সহজে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না । স্কুলে না গিয়ে কিছু অর্থের জন্য বা খাবারের জন্য বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হয় । শৈশবেই তাদের সমস্ত সম্ভাবনাময় বিকাশ ব্যর্থ হয় । এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার উপর সরকার জোর দিয়েছেন এবং বেতনবিহীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছেন । যাতে করে দরিদ্র বাবা-মা শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না করতে পারে তার জন্য পাঠ্যপুস্তক, বিদ্যালয়ের পোষাক এবং এক বেলা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থাও সরকার গ্রহণ করেছেন ।

শিশুশিক্ষার পথে বাধা:— শিশুশিক্ষার মূল বাধা হল— দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাব । দারিদ্রের কারণে মা-বাবা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চায় না । তারা মনে করে শিক্ষা গ্রহণের থেকে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করা ভালো । এইরূপ মনোভাবের কারণে অনেক মেধাবী ছাত্রও অকালে হারিয়ে যাচ্ছে ।

মিড-ডে-মিলের প্রয়োজনীয়তা :— শিশুশিক্ষায় মিড-ডে-মিলের প্রয়োজনীয়তা সবথেকে বেশি । কারণ এইসময় বাচ্চাদের বৃদ্ধির সময় । দরিদ্র পরিবারে বাচ্চাদের পুষ্টির অভাব বেশি থাকার জন্য তারা এই পড়ার চাপ নিতে পারে না । সেজন্য তারা স্কুলে আসতে চায় না । মিড-ডে-মিল চালু হওয়াতে স্কুল ছুটের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে । সুষম রান্না করা খাদ্যের আকর্ষনে তারা নিয়মিত স্কুলে আসছে । ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে । এছাড়া স্কুলে একসঙ্গে খাদ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের সামাজিক শিক্ষাও সম্ভব হচ্ছে । শৈশব থেকে ভিন্ন ধর্ম ও জাতের সহপাঠীর সঙ্গে একত্রে পড়া, খেলা ও খাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে সুস্থ মানসিকতা, সামাজিক ভেদাভেদ তুচ্ছ করে প্রত্যেকে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসায় আবদ্ধ হচ্ছে ।

মিড-ডে-মিলের বর্তমান সমস্যা:— মিড-ডে-মিলে রান্নাকরা খাবার পরিবেশন করতে গিয়ে কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে । প্রথমতঃ সব স্কুলে উপযুক্ত রান্নার পরিকাঠামো নেই । দ্বিতীয়তঃ অনেক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মিড-ডে-মিল রান্না ও পরিবেশন করতে হয় । এরফলে পড়াশুনায় ক্ষতি হয় । তৃতীয়তঃ ছাত্রপিছু যে টাকা বরাদ্দ থাকে তাতে তাদের বেশিরভাগ দিন খিচুড়ি খেতে হয় । ছাত্র-ছাত্রীরা একটানা খিচুড়ি খেতে চায় না, ইত্যাদি ।

উপসংহার:— বর্তমানে মিড-ডে-মিলের টাকার পরিমাণ বেড়েছে । ফলে ছাত্রছাত্রীদের সুষম খাদ্য দেওয়া সম্ভব হয়েছে । রান্নার ও পরিবেশনের জন্য রান্নাঘরের ব্যবস্থাদি সরকার থেকে করে দেওয়ার ফলে আগের মতো অসুবিধাগুলোর সম্মুখীন হতে হয় না । বর্তমানে অভিভাবকরাও অনেক সচেতন হয়েছে । ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার বিষয়ে এবং স্কুলে খাওয়ার বিষয়ে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন । সর্বশিক্ষা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য মিড-ডে-মিলের জন্য অনেকাংশে সফল হিসাবে ধরে নেওয়া যায় । এতে কোন সন্দেহ নেই ।

***

Comments

Related Items

ছাত্র জীবনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা

'ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ' । ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা । পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করেই করা দরকার ।

বিশ্বের ত্রাস মহামারী করোনা

ভুমিকা:- একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার শিখরে বাস করেও মানুষ ভয়ঙ্কর এক মহামারির মোকাবিলা করতে পারেনি । সেই মহামারি হল করোনা । ধনী বা দরিদ্র কোন দেশই করোনা নামক মহামারির কবল থেকে রেহাই পায়নি । করোনা এমনই এক রোগ যা অতি দ্রুত মানুষকে সংক্রমিত করে । এটা নতুন রো

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প

"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি । / দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী — / মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, / কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু / রয়ে গেল অগোচরে । বিশাল বিশ্বের আয়োজন ; / মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ ।" — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

যুগে যুগে বাংলার বুকে যে সকল ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে অন্যতম । ঈশ্বরচন্দ্রের পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মনিষ্ঠা, নির্ভীকতা, হৃদয়বত্তা মানবসমাজে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । হিমালয়ের মতো বিশাল ও উন্নত মনের মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র শুধুমাত্র বিদ্যাসাগর ছিলেন না, করুণার সিন্ধুও ছিলেন ।

রক্তদান — মানবকল্যাণের আর এক নাম

"দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, / ধন্য হবে জনন তোমার, মহৎ তোমার দান । "