সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শাখা সমূহ (Organs of the United Nations)
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ৭নং সনদে উল্লেখিত ছয়টি সংস্থার মাধ্যমে জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করে থাকে । সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ছয়টি শাখা যথা—
(১) সাধারণ পরিষদ (General Assembly)
(২) নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council)
(৩) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council (ECOSOC)
(৪) অছি পরিষদ (United Nations Trusteeship Council)
(৫) আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice)
(৬) সদর কার্যালয় (Secretariat)
(১) সাধারণ পরিষদ (General Assembly) : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সমস্ত সদস্যদেশ ‘সাধারণ পরিষদের’ সদস্য । এইসব রাষ্ট্রের প্রত্যেকের ভোট একটি হলেও প্রতিনিধি সংখ্যা পাঁচ বা তার কিছু বেশি হতে পারে । আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি যে কোনো আন্তর্জাতিক বিষয় বা সমস্যা এই পরিষদে আলোচিত হয় ।
(২) নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council) : এই পরিষদের স্থায়ী সদস্য হল পাঁচটি দেশ যথা— (ক) ইংল্যান্ড, (খ) আমেরিকা, (গ) রাশিয়া, (ঘ) ফ্রান্স এবং (ঙ) চিন । স্থায়ী সদস্য ছাড়া প্রতি দু-বছরের জন্য অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র থেকে দশজন অস্থায়ী সদস্য নির্বাচন করা হয় । একমাত্র স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি প্রত্যেকে ভেটো (Veto) নামক এক বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের দ্বারা নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত যে কোনো প্রস্তাব বাতিল করে দিতে পারে । ভারত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রূপে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে ।
নিরাপত্তা পরিষদের কাজ :
(ক) নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা,
(খ) পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা পরিষদ যে কোনো বিষয়ে তদন্ত, সালিশি বিচার ও শাস্তিদান করতে পারে ।
(গ) শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।
(৩) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council : অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজ হল বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনগণের নাগরিক অধিকার, বেকার সমস্যা ইত্যাদি বিষয়গুলির তথ্যসংগ্রহ করা এবং উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করা ।
(৪) অছি পরিষদ (United Nations Trusteeship Council) : অছি পরিষদ সাধারণ সভার সদস্য ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় । মূলত সোমালিল্যান্ড, টেগোল্যান্ড, ক্যামেরুন -এর মতো অনুন্নত দেশগুলির আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য রাষ্ট্র সংঘের আছি পরিষদ কতিপয় ভুখন্ডের দেখাশুনা করে ।
(৫) আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice) : আন্তর্জাতিক বিবাদের মিমাংসার জন্য ১৫ জন বিচারপতিকে নিয়ে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচারালয় গঠিত হয়েছে । সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে বিচারপতিরা নয় বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন । তবে কোনো রাষ্ট্র থেকে দুজনের বেশি বিচারপতি নিয়োগের নিয়ম নেই ।
(৬) সদর কার্যালয় (Secretariat) : সদর কার্যালয় হল নিউইয়র্কে অবস্থিত রাষ্ট্রসংঘের সচিবালয় । এখান থেকে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব তাঁর কর্মচারীবৃন্দের সহায়তায় এই বিশ্বসংস্থার পরিচালনা করেন । নরওয়ের বিদেশমন্ত্রী ট্রিগভি লি ছিলেন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রথম মহাসচিব ।
জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৃথিবী বেশ কয়েকবার যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে । কিন্তু এর সদস্যগণ পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সেই সব যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে বা যুদ্ধের সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করেছে । বিশ্বে উত্তেজনা প্রশমনে এবং বিকাশশীল দেশ সমূহের সর্বাত্মক উন্নতিকল্পে রাষ্ট্রসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আজ আর অস্বীকার করা যায় না ।
*****
- 3859 views