কৃষিকার্যে কৃত্রিম উদ্ভিদ-হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ

Submitted by arpita pramanik on Thu, 12/06/2012 - 15:06

কৃষিকার্যে কৃত্রিম উদ্ভিদ-হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ (Practical application of Synthetic Plant Hormone in Agriculture)

উদ্ভিদদেহে স্বাভাবিক হরমোন উত্পন্ন হলেও বর্তমানে কৃত্রিম হরমোন ও তৈরি হচ্ছে ।  এই সব কৃত্রিম হরমোনের মধ্যে ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA), ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA), ডাই-ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (2, 4-D) প্রভৃতি প্রধান । কৃত্রিম হরমোনগুলি কম পরিমাণে বেশি কার্যকরী হওয়ায় আজকাল কৃষিকার্যে এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে ।

কৃত্রিম হরমোনের কাজ ও গুরুত্ব:-

[১]  বীজহীন ফল উত্পাদন:-  নিষেকের আগেই অর্থাৎ পরাগযোগ ও নেষেক ছাড়া ডিম্বাশয়ে কৃত্রিম অক্সিন [IBA, IAA] প্রয়োগ করে বীজবিহীন এবং আয়তনে বড় ফল উত্পাদন করা হয় । এই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি  বলে । এইসব ফলের মধ্যে পেঁপে, পেয়ারা, খেজুর, আঙ্গুর, টম্যাটো, কলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । 

[২]  শাখা কলমে মূল সৃষ্টি:- শাখা কলমের দ্বারা বংশ বিস্তারের সময় নানান কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে কলমে তাড়াতাড়ি মূল সৃষ্টি করা হয় । গোলাপ, জবা, বেল ইত্যাদি ফুলগাছ এবং আম, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের গাছের শাখা কলম তৈরি করার সময় IBA ও NAA বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় । 

[৩]  আগাছা নির্মূল:- ধান, গম, যব ইত্যাদির খেতে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ অর্থাৎ আগাছা নির্মূল করার জন্য 2,  4-D,  MCAA ( মিথাইল ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড ) প্রভৃতি কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করা হয় । কারণ কৃষিকার্যে আগাছাগুলি হল বাঞ্ছিত উদ্ভিদের প্রধান শত্রু ।

[৪]  ক্ষতস্থান পূরণ:- চা, পাতাবাহার, আপেল, ন্যাসপাতি, ইত্যাদি গাছের ডাল ছাঁটার পর বেশি ঘনত্বের কৃত্রিম অক্সিন অর্থাৎ IAA (1%) দ্রবণ ছিটিয়ে ওই সমস্ত ক্ষতস্থান মেরামত করা হয় । এর ফলে ক্ষতস্থান রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে না ।

[৫]  উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গের মোচন রোধ:- কৃত্রিম হরমোনের (2, 4-D, NAA) দ্রবণ ছিটিয়ে উদ্ভিদের নানান অপরিণত অঙ্গের (যেমন: পাতা, মুকুল, ফুল, ফল ইত্যাদি ) অকালমোচন রোধ করা হয় ।

[৬]  অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত করা:- কৃত্রিম জিব্বেরেলিন প্রয়োগের দ্বারা বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটানো হয় ।

[৭]  মূকুলোদ্গম বিলম্বিত করা:- অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (abscisic acid) প্রয়োগ করে আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির মূকুলোদ্গম বিলম্বিত করা হয় ।

[৮]  ফল ধরতে সহায়তা করা:- আনারস, লেবু, আপেল, ইত্যাদি গাছের কৃত্রিম হরমোন ছিটিয়ে গাছের ফল ধারণ ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করা হয় ।

[৯]  ফলের বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা:- IBA বা 2, 4-D  নামক কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের আয়তন বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।

[১০] পুষ্প পরিস্ফুটনের নিয়ন্ত্রণ:- কৃত্রিম হরমোন (প্রধানত NAA) প্রয়োগ করে উদ্ভিদের পুষ্প-মুকুলের পরিস্ফুটন ত্বরান্বিত করা হয় । জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে দ্বি-বর্ষজীবী উদ্ভিদের প্রথম বছরে ফুল উত্পন্ন করা হয় ।

১১]  জরা রোধ:- কাইনিন হরমোন প্রয়োগ করে উদ্ভিদের জরা বিলম্বিত করা হয় ।

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স