ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 11/24/2014 - 10:04

ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি (Irrigation System of India) : ভারতে সাধারণত তিনটি পদ্ধতির সাহায্যে জলসেচ করা হয়, যথা— (১) কুপ ও নলকূপ, (২) পুকুর ও জলাশয় এবং (৩) সেচখাল ।

(১) কুপ ও নলকূপ (Wells and Tube-wells) : ভারতের যেসব অঞ্চলে ভৌম জলের প্রাচুর্য বেশি, অর্থাৎ যে সব অঞ্চলে বৃষ্টির জল পাললিক শিলাস্তর ভেদ করে মাটির নিচে জমা হতে পারে, সাধারণত সেইসব অঞ্চলে কুপ ও নলকুপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে । উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে কুপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে ।

(২) পুকুর ও জলাশয় (Ponds and Lakes) : বর্ষাকালে বৃষ্টির জল প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার অথবা পুকুরে সঞ্চয় করে রেখে সেচের কাজে লাগানো হয় । পাথুরে ভূমি এবং কঠিন ও অপ্রবেশ্য শিলায় গঠিত দাক্ষিণাত্য মালভূমির অপ্রবেশ্য শিলাস্তর ভেদ করে বৃষ্টির জল মাটির নিচে সঞ্চিত হতে পারে না, তাই দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পুকুর বা জলাশয় তৈরি করে তা থেকে সেচ করা হয় ।

(৩) সেচ খাল (Irrigation Canal) : প্রধানত নদনদী বহুল অঞ্চলে সেচখালের সাহায্যে জলসেচ করা হয় । সাধারণত সেচখাল গুলি দু-রকমের হয়,  যেমন— (ক) নিত্যবহ খাল ও (খ) প্লাবন খাল ।

(ক) নিত্যবহ খাল : সারাবছর জল থাকে এমন নদী থেকে কাটা খালকে নিত্যবহ খাল বলে । নদিতে বাঁধ দিয়ে জল উঁচু করে রাখবার ফলে নিত্যবহ খালে সারা বছর জল থাকে । আর এই জল সেচের কাজে লাগানো হয় । পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত নিত্যবহ খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয় ।

(খ) প্লাবন খাল : প্লাবন খাল সাধারণত বর্ষার প্লাবনে জলপূর্ণ হয় । তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে অনেক প্লাবন খাল দেখা যায় ।

বহুমুখী নদী পরিকল্পনা (Multi-purpose River Project) : নদীবহুল ভারতবর্ষের নদীগুলির মোট জল প্রবাহের কেবলমাত্র ৬ শতাংশ জলসেচের জন্য এবং ১.৫ শতাংশ জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়, বাকি অংশ অব্যবহৃত থাকে । এছাড়া ভারতের নদীগুলি বিশেষ করে বর্ষাকালে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে । স্বাধীনতা লাভের পর সরকার এই জল সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন । এই পরিকল্পনা অনুসারে নদী গুলির ওপর বাঁধ দিয়ে জলাশয় বা কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি করা হয় ।

সংজ্ঞা (Definition) : যে পরিকল্পনার সাহায্যে নদীগুলির উপর বাঁধ দিয়ে একই সঙ্গে বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন, বিশেষ করে নদীর অববাহিকা অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবন যাত্রার মানের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য নদী প্রবাহকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, তাকে ‘বহুমুখী নদী পরিকল্পনা’ বলা হয় ।

যেমন— দামোদর নদী পরিকল্পনা, ভাকরা নাঙ্গাল নদী পরিকল্পনা ।

*****

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত