হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড

Submitted by arpita pramanik on Sun, 02/24/2013 - 08:05

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (Hydrogen Chloride and Hydrochloric acid) :

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের আণবিক সংকেত হল — HCl এবং আণবিক ভর হল — 36.5

সুচনা :- 1648 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী গ্লোবার (Glauber) রক সল্ট (NaCl) ও গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিডের (H2SO4) বিক্রিয়া ঘটিয়ে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস তৈরি করেন । বিজ্ঞানী প্রিস্টলী 1772 খ্রিস্টাব্দে সমুদ্রের লবণ থেকে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রস্তুত করেন । তিনি এই অ্যাসিডের নাম দেন সামুদ্রিক অ্যাসিড বা মিউরিয়েটিক অ্যাসিড (Muriatic acid) । বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভি প্রমাণ করেন, এই অ্যাসিড হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন দ্বারা গঠিত একটি যৌগ । তিনি এর নাম দেন হাইড্রোজেন ক্লোরাইড । এটি একটি গ্যাস । এই গ্যাস জলে দ্রবীভূত হয়ে যে জলীয় দ্রবণ উৎপন্ন হয়, তাকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বলে । প্রাণীর পাকস্থলীতে পাচক রস রূপে এই অ্যাসিড সামান্য পরিমাণে থাকে । সাধারণ লবণ (NaCl) হল এই অ্যাসিডের প্রধান উৎস ।

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি (Laboratory method of preparation of Hydrogen Chloride and Hydrochloric acid) :-

 হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস প্রস্তুত প্রণালী :-

প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য :- (i) গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4),  (ii) সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) ।

[১] নীতি (Principle) :-  রসায়নের নীতি অনুসারে— কোনো উদ্বায়ী অ্যাসিড বা ক্ষারক অনুদ্বায়ী অ্যাসিড বা ক্ষারক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় । এখানে HCl হল উদ্বায়ী অ্যাসিড, কিন্তু গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) অনুদ্বায়ী । তাই H2SO4 দ্বারা HCl অপসারিত হবে । সাধারণ লবণ (NaCl) -এর সঙ্গে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় । বিক্রিয়াটি দুটি পর্যায়ে ঘটে—

প্রথম পর্যায় : 150°C — 200°C উষ্ণতায়, সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) সঙ্গে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম বাই-সালফেট এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

      NaCl + H2SO4 = NaHSO4 + HCl ↑

দ্বিতীয় পর্যায় :  500°C উষ্ণতায়, সোডিয়াম বাই-সালফেটের সঙ্গে অবিকৃত সোডিয়াম ক্লোরাইডের বিক্রিয়ায় সোডিয়াম সালফেট এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

      NaCl + NaHSO4 = Na2SO4 + HCl ↑

প্রথম পর্যায়ে সৃষ্ট NaHSO4 বেশ নরম, ফলে পরীক্ষার শেষে পাত্র থেকে সহজে বের করে নেওয়া যায় । কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে সৃষ্ট Na2SO4 পাত্রের তলায় কঠিন আস্তরণরূপে জমা হয় এবং পরিষ্কার করা সহজ হয় না । তাই উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রথম পর্যায়ে রাখা হয় ।

[২] পদ্ধতি:

[i] একটি গোলতল ফ্লাস্কের মধ্যে কিছু পরিমাণ সোডিয়াম ক্লোরাইড নিয়ে ফ্লাস্কটির মুখে একটি কর্ক লাগিয়ে কর্কের মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘনল ফানেল এবং দুবার সমকোণে বাঁকানো একটি নির্গম নল লাগানো হল । দীর্ঘ নল ফানেলের শেষ প্রান্তটি যেন ফ্লাস্কের তলদেশ পর্যন্ত পৌছায় ।

[ii] নির্গম-নলের অপর প্রান্তটি একটি শুষ্ক গ্যাস জারের মধ্যে প্রায় তলদেশ পর্যন্ত প্রবেশ করানো থাকে ।

[iii] ফ্লাস্কটিকে তিন পা ওয়ালা স্ট্যান্ডে রাখা তারজালির উপর বসিয়ে ধারকের সাহায্যে একটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকানো হল ।

[iv] এইবার দীর্ঘনল ফানেলের মধ্য দিয়ে ফ্লাস্কের মধ্যে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) ঢালা হল । লক্ষ রাখতে হবে যেন দীর্ঘনল ফানেলের শেষ প্রান্তটি অ্যাসিডের মধ্যে ডুবে থাকে ।

[v] এখন ফ্লাস্কটিকে বার্নার দিয়ে উত্তপ্ত (150°C) করা হল । এর ফলে সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিডের (H2SO4) বিক্রিয়ায়, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় । উৎপন্ন গ্যাস নির্গম নলের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে ।

[৩] সংগ্রহ : যেহেতু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস বাতাসের থেকে ভারী, তাই হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) বাতাসের ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা গ্যাস জারে জমা হয় ।

গ্যাস জারটি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড দ্বারা ভর্তি হয়েছে কি না জানতে হলে একটি কাচ দন্ড অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইডের মধ্যে ডুবিয়ে গ্যাস জারের মুখে ধরলে যদি সাদা ধোঁয়া (NH4Cl) উৎপন্ন হয়, তবে বুঝতে হবে যে, গ্যাস জারটি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস দ্বারা ভর্তি হয়েছে ।

    NH4OH + HCl = NH4Cl + H2O

[৪] বিশুদ্ধিকরণ :- এইভাবে প্রাপ্ত HCl গ্যাসের সঙ্গে জলীয় বাষ্প মিশে থাকে । গ্যাসটিকে গাঢ় H2SO4 -পূর্ণ বোতলের মধ্য দিয়ে চালনা করে জল মুক্ত করা হয় ।

*****

Related Items

মেথিলেটেড স্পিরিট

95% ইথাইল অ্যালকোহলের জলীয় দ্রবণকে রেকটিফায়েড স্পিরিট বলে । রেকটিফায়েড স্পিরিটকে পানের অযোগ্য করার জন্য রেকটিফায়েড স্পিরিটের সঙ্গে মিথাইল অ্যালকোহল (10%), সামান্য পিরিডিন (0.5%), ন্যাপথা এবং রবার নির্যাস কাওকোসিন মিশিয়ে বিষাক্ত করে দেওয়া হয় । ...

সাবান (Soap)

সাবান হল উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি অ্যাসিড -এর সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ । একাধিক জৈব অ্যাসিডের লবণ হওয়ায় সাবানের নির্দিষ্ট কোনো সংকেত নেই । সাবান একটি মিশ্র লবণ । সাধারণ উষ্ণতায় সাবান অনুদ্বায়ী কঠিন পদার্থ ও জলে দ্রাব্য । ...

ইউরিয়া বা কার্বাইড (Urea)

ইউরিয়া নাইট্রোজেন ঘটিত একটি সার । 1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোলার অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেট -কে উত্তপ্ত করে ইউরিয়া প্রস্তুত করেন । ইউরিয়া সাদা, গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী, কেলাসাকার কঠিন জৈব পদার্থ।এটি জলে দ্রাব্য । মানবদেহের এবং প্রাণীদেহের ...

অ্যামোনিয়াম সালফেট

অ্যামোনিয়াম সালফেট হল একটি নাইট্রোজেন ঘটিত অজৈব রাসায়নিক সার। অ্যামোনিয়াম সালফেট সাদা রঙের, গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী একটি অজৈব কেলাসিত লবণ । অ্যামোনিয়াম সালফেট জলে দ্রাব্য ও এর জলীয় দ্রবণ অম্লধর্মী । অ্যামোনিয়াম সালফেট তাপে ঊর্ধ্ব পাতিত হয় ...

কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল

কেলাস-জলযুক্ত কিউপ্রিক সালফেটকে ব্লু-ভিট্রিয়ল বলে। ব্লু-ভিট্রিয়ল সাধারণভাবে তুঁতে নাম পরিচিত । কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী ও গাঢ় নীলবর্ণের কেলাসিত অজৈব কঠিন পদার্থ। এটি একটি শমিত লবণ । জলে দ্রাব্য এবং জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে। ...