সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণ

Submitted by arpita pramanik on Mon, 01/14/2013 - 14:05

সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) বা খাদ্য লবণ (Common salt) :

প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে লবণ আমরা খেয়ে থাকি তাকেই খাদ্য লবণ বলে ।

প্রকৃতি:-

[i] সোডিয়াম ক্লোরাইডের রাসায়নিক সংকেত হল NaCl  ।

[ii] সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) -এর গলনাঙ্ক 807°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 1465°C ।

[iii] সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি অজৈব নর্মাল লবণ ।

[iv] সাধারণ উষ্ণতায় সোডিয়াম ক্লোরাইড কঠিন, সাদা এবং কেলাসিত পদার্থ ।

[v] খাদ্য লবণ গন্ধহীন এবং অনুদ্বায়ী পদার্থ ।

[vi] NaCl জলে দ্রাব্য । এর জলীয় দ্রবণে অ্যাসিড বা ক্ষারের কোনো ধর্ম প্রকাশ পায় না ।

[vii] সোডিয়াম ক্লোরাইড -এর কেলাসের আকার ছয়তল বিশিষ্ট ঘনকের মতো ।

[viii] সোডিয়াম ক্লোরাইড তড়িৎযোজী যৌগ ।

ব্যবহার:-

[i] এই লবণ আমাদের খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান । এই ক্ষেত্রে এই লবণ আয়োডিনযুক্ত হওয়া দরকার, না হলে থাইরয়েড-হরমোন জনিত রোগের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে ।   

[ii] কলেরা রোগীর দেহে জলের ভাগ অনেক কমে যায় বলে লবণ-জলের ইনজেকশন দিতে হয় ।  

[iii] সোডিয়াম ক্লোরাইড জীবাণুনাশক এবং পচননিবারক, সেজন্য মাছ, মাংস প্রভৃতিতে লবণ মাখিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত অবিকৃত রাখা যায় ।   

[iv] হিম মিশ্রণ প্রস্তুতিতে সোডিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহৃত হয়, বরফের সঙ্গে লবণ মেশালে উষ্ণতা (-20°C) -এ নেমে আসে ।  

[v] চিনা মাটির বাসন পালিশ করতে সোডিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহৃত হয় ।

[vi] ধাতব সোডিয়াম, সোডিয়াম কার্বনেট, কস্টিক সোডা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, ক্লোরিন, সোডিয়াম সালফেট প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতিতে সোডিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহৃত হয় ।

টেবিল সল্ট (Table Salt) :- খাদ্যলবণের গাঢ় জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস চালনা করলে বিশুদ্ধ NaCl কেলাসিত হয়ে দ্রবণ থেকে আলাদা হয়ে যায়, একে টেবিল সল্ট বলে ।

সৈন্ধব লবণ (Rock Salt) ঈষৎ লাল হয়, কারণ— খনিজ সৈন্ধব লবণ রূপে কঠিন অবস্থায় খাদ্য লবণ পাওয়া যায় । সৈন্ধব লবণে সামান্য পরিমাণে আয়রণ অক্সাইড অশুদ্ধি হিসাবে থাকায় সৈন্ধব লবণকে ঈষৎ লাল দেখায় ।

বর্ষাকালে খাদ্য লবণ ভিজে যায়, কারণ— খাদ্য লবণে অশুদ্ধি হিসাবে MgCl2, CaCl2 ইত্যাদি থাকে । বিশুদ্ধ NaCl উদ্গ্রাহী নয় । কিন্তু MgCl2 এবং CaCl2 উভয়েই উদ্গ্রাহী পদার্থ—  এরা বায়ু থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে । বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে বলে সাধারণ খাদ্য লবণ ভিজে যায় ।

*****

Related Items

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --