সমযোজী যৌগগুলির বৈশিষ্ট্য

Submitted by arpita pramanik on Thu, 02/14/2013 - 20:40

সমযোজী যৌগগুলির বৈশিষ্ট্য :

[i] ভৌত অবস্থা :- সাধারণ তাপমাত্রায় বেশির ভাগ সমযোজী যৌগ সাধারণত তরল কিংবা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে কিন্তু বেশি আণবিক গুরুত্ববিশিষ্ট সমযোজী মৌল বা যৌগগুলি কঠিন বা তরল হয় ।

[ii] স্থায়িত্ব :- সমযোজী যৌগে সমযোজী বন্ধন দৃঢ় প্রকৃতির, তার ফলে অণুগুলি স্থায়ী হয় ।

[iii] বন্ধনের অভিমুখ :- সমযোজী বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকার জন্য সমযোজী যৌগের অণুগুলি নির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক আকার লাভ করে । সমযোজী জৈব যৌগের মধ্যে অনেক সময় সমাবয়বতা দেখা যায় । [ ভিন্ন গঠন সংকেত এবং ভিন্ন ধর্মযুক্ত যৌগকে একই আণবিক সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করলে সেই ধর্মকে সমাবয়বতা (isomerism) বলে । যেমন : ডাইমিথাইল ইথার ও ইথাইল অ্যালকোহল উভয়ের গঠন সংকেত যথাক্রমে CH3—O—CH3 এবং C2H5OH কিন্তু এদের আণবিক সংকেত হল C2H6O ] ।

[iv] তড়িৎ পরিবাহিতা :- সাধারণত বিশুদ্ধ সমযোজী যৌগগুলি তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না, কারণ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যৌগগুলি আয়নিত হয় না ।

[v] গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক :- অণু মধ্যস্থ আকর্ষণ কম হওয়ার জন্য সমযোজী মৌলগুলির গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক অনেক কম । ব্যতিক্রম হিরে প্রভৃতি কেলাসাকার অণুগুলির গলনাঙ্ক অনেক বেশি ।

[vi] দ্রাব্যতা :- সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়, যেমন— ক্লোরোফর্ম, ইথার, বেনজিন ইত্যাদি ।

[vii] রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রকৃতি :- সমযোজী অণুগুলি ধীর গতিতে বিক্রিয়া করে ।

তড়িৎযোজী এবং সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তুলনা :-

তড়িৎযোজী যৌগ সমযোজী যৌগ
(i) সাধারণ উষ্ণতায় তড়িৎযোজী যৌগগুলি কঠিন ও কেলাসাকার । (i) সাধারণ উষ্ণতায় সমযোজী যৌগগুলি তরল ও গ্যাসীয় । কিন্তু কঠিন হলে তার প্রকৃতি হয় মোমের মতো নরম ।
(ii) এই যৌগের অণু ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের তড়িৎ আকর্ষণ দিয়ে তৈরি, তার ফলে এদের অণুতে প্রকৃত কোনো বন্ধন থাকে না । (ii) এরা সাধারণত অধাতব পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন জোড় গঠন করে মৌল অণু বা যৌগিক অণু গঠন করে, তার ফলে এদের মধ্যে প্রকৃত বন্ধন থাকে ।
(iii) তড়িৎযোজী যৌগগুলি গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে পরিণত হয় যার দ্বারা তড়িৎ পরিবহন করে । (iii) বিশুদ্ধ সমযোজী মৌলগুলি গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে পরিণত হয় না, যার ফলে তড়িৎ পরিবহন করে না ।
(iv) এইসব যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত বেশি এবং যৌগগুলি অনুদ্বায়ী । (iv) এইসব যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম এবং উদ্বায়ী প্রকৃতির ।
(v) এই যৌগগুলি সাধারণত জলে দ্রাব্য কিন্তু জৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য । (v) বিশুদ্ধ সমযোজী অণুগুলি অজৈব দ্রাবকে দ্রাব্য কিন্তু জলে অদ্রাব্য ।
(vi) তড়িৎযোজী বন্ধনী দৃঢ় নয় এবং কোনো অভিমুখ নেই । (vi) সমযোজী বন্ধন দৃঢ় প্রকৃতির এবং নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে ।
(vii) তড়িৎযোজী যৌগের মধ্যে সমাবয়বতা দেখা যায় না । (vii) সমযোজী যৌগের মধ্যে সমাবয়বতা দেখা যায় ।

*****

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...