Submitted by arpita pramanik on Thu, 02/14/2013 - 10:56

রাসায়নিক বন্ধনী (Chemical bonding) :

দুই বা ততোধিক মৌলের রাসায়নিক সংযোগে যৌগ গঠিত হয় । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মৌলের পরমাণুগুলিই অংশগ্রহণ করে । সকল যৌগের রাসায়নিক সংস্থিতি সুনির্দিষ্ট এবং এতে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি সরল অনুপাতে যুক্ত থাকে । অপর মৌলের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠনের ক্ষমতাকে মৌলের যোজ্যতা বলা হয় । বিজ্ঞানী লিউইস (Lewis) এবং কোসেল (Kossel) পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রনের সজ্জার ওপর নির্ভর করে যোজ্যতার ইলেকট্রনীয় মতবাদ প্রকাশ করেন ।

রাসায়নিক বন্ধন (Chemical bond) :

সংজ্ঞা :-  রাসায়নিক সংযোগের ফলে বিক্রিয়ায় উপাদানগুলির পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান অথবা যৌথভাবে ইলেকট্রন যুগল ব্যবহারের ফলে যে বন্ধনের সৃষ্টি হয়, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে । এই রাসায়নিক বন্ধনই যৌগিক পদার্থ এবং মৌলিক পদার্থের গঠনে পরমাণুর উপাদানগুলিকে সংযুক্ত রাখে । অর্থাৎ পরমাণুগুলির ইলেকট্রন কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের ফলেই যৌগ গঠিত হয় । মৌলগুলির পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের ইলেকট্রন কক্ষগুলির মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদান অথবা ইলেকট্রন যুগলের বন্ধন ঘটে । এই কারণে পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষকে যোজ্যতা কক্ষ (valency orbit) বলে ।

যোজ্যতার ইলেক্ট্রনীয় মতবাদ (Electronic theory of valency) :

পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষে (যেমন K, L, M ইত্যাদি) বিভিন্ন সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে কিন্তু সবচেয়ে বাইরের কক্ষে সাধারণ অবস্থায় কখনো আটটির বেশি ইলেকট্রন থাকতে পারে না । নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির ইলেকট্রন বিন্যাস লক্ষ করলে দেখা যায়, শুধু হিলিয়াম ছাড়া অন্য সব নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সবচেয়ে বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা আট ।

নিষ্ক্রিয় গ্যাস K L M N O

হিলিয়াম [He]

নিয়ন [Ne]

আরগন [Ar]

ক্রিপ্টন [Kr]

জেনন [Xe]

2

2

2

2

2

 

8

8

8

8

 

 

8

18

18

 

 

 

8

18

 

 

 

 

8

বিজ্ঞানীরা এই ধারণা পোষণ করেন যে, রাসায়নিক মিলনের সময় অন্যান্য পরমাণুরগুলিও নিজেদের সবচেয়ে বাইরের কক্ষের ইলেকট্রন প্রদান করে কিংবা গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ কিংবা ওদের নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করতে চেষ্টা করে । পরমাণুরগুলির এই বিন্যাস লাভ করার প্রবণতাকে অষ্টক নিয়ম (Octet rule) বলা হয় । যে সমস্ত মৌলের পরমাণুর সবচয়ে বাইরের কক্ষে আটটির কম ইলেকট্রন আছে, তারা সর্বদা নিজেদের পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে আটটি (হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে 2টি) ইলেকট্রন রাখতে চায় ।

এই অবস্থায় দুটি প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়,

(i) পরমাণুগুলির ইলেকট্রন বর্জন, বা ইলেকট্রন গ্রহণ করার মাধ্যমে, অথবা

(ii) বিক্রিয়াশীল প্রতিটি পরমাণুর বাইরের কক্ষে সমসংখ্যক ইলেকট্রন এসে নিজেদের মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় গঠন করার মাধ্যমে— এইভাবে পরমাণুগুলির নিজ নিজ নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করতে পারে ।

বিভিন্ন পরমাণুগুলির পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় সাধারণত মৌলের প্রধানত দুরকম যোজ্যতা প্রকাশ পায়—

(1) ইলেকট্রনীয় যোজ্যতা বা তড়িৎ-যোজ্যতা (Electro-valecy) ।

(2) সমযোজ্যতা (Co-valency) ।

এছাড়া আর এক ধরনের যোজ্যতা দেখা যায় যাকে অসমযোজ্যতা (Coordinate Co-valency) বলে । এটি হল বিশেষ ধরনের সমযোজ্যতা ।

*****

Comments

Related Items

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --