তড়িৎপ্রবাহের ওপর চুম্বকের ক্রিয়া

Submitted by arpita pramanik on Sun, 01/27/2013 - 23:38

তড়িৎপ্রবাহের ওপর চুম্বকের ক্রিয়া (Action of magnet on current) :

তড়িৎপ্রবাহ যেমন চুম্বকের ওপর ক্রিয়া করে চুম্বক-মেরুকে বিক্ষিপ্ত করার সময় ওর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে, সেই রকম চুম্বক- মেরুও তড়িৎপ্রবাহের ওপর ক্রিয়া করে । এর ফলে চুম্বক-মেরু তড়িদ্বাহী পরিবাহীর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে, ফলে পরিবাহী নিজ অবস্থান থেকে বিক্ষিপ্ত হয় ।

চুম্বকের ক্রিয়ায় তড়িদ্বাহী পরিবাহীর গতির অভিমুখ নির্ণয় :

ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত নিয়ম (Fleming’s left hand rule) : তড়িৎপ্রবাহের দিক এবং চৌম্বক-ক্ষেত্রের  অভিমুখ জানা থাকলে, চুম্বকের ক্রিয়ায় তড়িদ্বাহী একটি পরিবাহী কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হবে তা ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত নিয়ম থেকে জানা যায় ।

বামহস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলি, মধ্যমা এবং তর্জনীকে পরস্পরের সঙ্গে সমকোণে রেখে প্রসারিত করলে যদি তর্জনী চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক নির্দেশ করে এবং মধ্যমা তড়িৎপ্রবাহের দিক নির্দেশ করে, তবে বৃদ্ধাঙ্গুলি তড়িদ্বাহী পরিবাহীর গতির অভিমুখ নির্দেশ করে

বার্লোর চক্র (Burlow’s wheel) : তড়িৎপ্রবাহের ওপর চুম্বকের ক্রিয়া বার্লোর চক্রের সাহায্যে দেখানো যায়

বর্ণনা : এই যন্ত্রে অনেকগুলি লম্বা লম্বা দাঁতবিশিষ্ট তামার পাতের একটি চক্র (R) থাকে । চক্রটি অনুভূমিক অক্ষের চারিদিকে ঘুরতে পারে । XY ধাতব দন্ডের সাহায্যে চক্রটি এমনভাবে রাখা যে, ঘোরার সময় ওর প্রতিটি দাঁত নীচের কাঠের পাটাতনের ওপর সরু লম্বা গর্ত M -এর মধ্যে রাখা পারদ স্পর্শ করে যায় । একটি শক্তিশালী অশ্বখুরাকৃতি চুম্বক (NS) কাঠের পাটাতনের ওপর এমনভাবে রাখা থাকে যেন পারদপূর্ণ গর্তটি চুম্বকের দুই মেরুর মাঝে থাকে । এখন চক্র এবং পারদকে S1 এবং S2 স্ক্রু -এর সাহায্যে যথাক্রমে একটি ব্যাটারির দুই মেরুর সঙ্গে যুক্ত করলে বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ হবে এবং দেখা যাবে চক্রটি ঘুরছে ।

কার্যপদ্ধতি : বার্লোর চক্রের কার্যনীতি ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত নিয়মের সাহায্যে নির্ণয় করা যায় । চৌম্বক ক্ষেত্রের অভিমুখ যদি পার্শ্বের চিত্রের মতো হয় এবং চক্র দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ যদি ওপর থেকে নীচে পারদের দিকে হয়, তাহলে প্রযুক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত নিয়মে চক্রটি প্রদর্শিত তীর চিহ্নের দিকে ঘুরতে থাকবে । যখন একটি দাঁত পারদ থেকে উঠে আসবে, গতি জাড্যের ফলে তখন পরের দাঁতটি এসে পারদ স্পর্শ করে এবং তড়িৎপ্রবাহ বজায় থাকে । যতক্ষণ পর্যন্ত তড়িৎপ্রবাহ চলবে ততক্ষণ চক্রটি ঘুরতে থাকবে ।

তড়িৎপ্রবাহের মাত্রা বাড়ালে চাকাটির ঘূর্ণন বেগ বেড়ে যায় । তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ একই রেখে চুম্বকের মেরুদ্বয়ের অবস্থান উল্টে দিলে চাকাটি উল্টোদিকে ঘুরতে থাকবে ।  

বার্লোচক্রকে একটি মোটর বলা যায় কী ?

বার্লোচক্রে তড়িৎ-শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে তড়িৎ-শক্তির সাহায্যে যান্ত্রিক ঘূর্ণন সৃষ্টি করলে, ওই যন্ত্রকে  সাধারণভাবে মোটর বলা হয় । তাই বার্লোচক্রকে একটি মোটর বলা হয় এবং তড়িৎপ্রবাহের সাহায্যে যান্ত্রিক ঘুর্ণনকে মোটর-নীতি বলা হয় ।

*****

Comments

Related Items

জৈব যৌগের গঠনগত সমাবয়বতা

একই আণবিক সংকেত বিশিষ্ট একাধিক যৌগে বিভিন্ন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতির জন্য যে সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়, তাকে কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা বলে । এই দুটি যৌগে উপাদান হিসাবে C, H এবং O -এর ওজনের অনুপাত একই কিন্তু এরা ভিন্ন প্রকৃতির যৌগ । একটি হল অ্যালকোহল ...

জৈব যৌগগুলির প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ

কার্যকরী মূলকের ওপর ভিত্তি করে জৈব যৌগগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা - হাইড্রোকার্বন, অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কিটোন, কার্বক্সিলিক অ্যাসিড যৌগ । নীচে জৈব যৌগের কয়েকটি শ্রেণি এবং প্রতিটি শ্রেণির প্রথম তিনটি সদস্যের নাম ও গঠন দেওয়া হল ...

জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক বা পরিচায়ক শ্রেণি

অসংখ্য জৈব যৌগকে, ওদের রাসায়নিক ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কতকগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে । দেখা যায় যে, এই রকম প্রতিটি শ্রেণিতে যৌগগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মূলক বর্তমান থাকে । এই মুলকের উপস্থিতির জন্য ওই শ্রেণির সমস্ত যৌগের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকম হয় ...

জৈব যৌগের বন্ধন প্রকৃতি

কর্বনের পারমাণবিক সংখ্যা 6, কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে জানা যায় কার্বনের প্রথম কক্ষে 2টি এবং বাইরের কক্ষে 4টি ইলেকট্রন আছে । কার্বন পরমাণু বাইরের কক্ষের 4টি ইলেকট্রন, অন্য পরমাণুর বাইরের কক্ষের ইলেকট্রনের সঙ্গে চারটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে সমযোজ্যতা দ্বারা জৈব ...

জীবজ অণু (Biomolecules)

সজীব কোশে সংশ্লেষিত ক্ষুদ্র অণু ও বৃহদ অণুকে একত্রে জীবজ অণু বলা হয় । প্রায় সমস্ত জীবজ অণুই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লীয়িক অ্যাসিড, লিপিড এই চারটি শ্রেণির কোনো একটির অন্তর্ভুক্ত । এগুলি কোশের জীবজ পলিমার । কার্বোহাইড্রেট সরল সুগারের ...