তাপের স্বরূপ ও উষ্ণতা বা তাপমাত্রা

Submitted by arpita pramanik on Sat, 01/12/2013 - 23:48

তাপের স্বরূপ ও উষ্ণতা বা তাপমাত্রা (Nature of Heat and Temperature) :

তাপের স্বরূপ (Nature of Heat)

সাধারণ ভাবে তাপের সংজ্ঞা দেওয়া যায় : যে প্রাকৃতিক কারণে ঠান্ডা ও গরমের অনুভূতি জাগে তাকে তাপ বলে । তাপ বলতে এমন কিছু বোঝায় যা গ্রহণ করলে কোনো বস্তু গরম হয় এবং বর্জন করলে ঠান্ডা হয় । তাপের কোনো আকার, আয়তন, ভর, গন্ধ বা বর্ণ নেই । অতএব তাপ জড় পদার্থ নয় ।

তাপ এক ধরনের শক্তি (Heat is a form of energy) : বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, কোনো-না-কোনো শক্তির বিনিময়ে তাপ সৃষ্টি হয় । শক্তির অবিনাশিতা সূত্র অনুযায়ী বলা যায় যে, তাপ সৃষ্টির জন্য যে শক্তি ব্যয়িত হয় সেই শক্তি নষ্ট না হয়ে তাপে রূপান্তরিত হয় । এই জন্য তাপকে এক প্রকার শক্তি বলে গণ্য করা হয় ।

সংজ্ঞা (Definition) : তাপ হল এক প্রকার শক্তি যা গ্রহণ করলে সাধারণভাবে বস্তু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বর্জন করলে ঠান্ডা হয়ে যায় । তাপ বা তাপশক্তির মাত্র = (ML2T2)

উষ্ণতা বা তাপমাত্রা (Temperature) : উষ্ণতা বা তাপমাত্রা হল বস্তুর তাপীয় অবস্থা । এই অবস্থাই স্থির করে দেয় যে, একটি বস্তুকে অন্য কোনো বস্তুর সংস্পর্শে রাখলে, প্রথম বস্তুটি দ্বিতীয় বস্তুকে তাপ দেবে কিংবা দ্বিতীয় বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করবে ।

তাপ ও উষ্ণতার মধ্যে পার্থক্য (Difference between Heat and Temperature)

তাপ

উষ্ণতা
১. তাপ হল শক্তির একটি বিশেষ রূপ ।  ১. উষ্ণতা হল বস্তুর এমন এক তাপীয় অবস্থা যা তাপপ্রবাহের অভিমুখকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
২. গলন, স্ফুটন ইত্যাদি ঘটনায় বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন না হলে তাপ গ্রহণে বস্তুর উষ্ণতা বাড়ে এবং তাপ বর্জনে উষ্ণতা কমে । অর্থাৎ তাপ হল উষ্ণতার কারণ ।  ২. উষ্ণতা হল তাপের ফল ।
৩. দুটি বস্তুর মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ওদের মোট তাপের ওপর নির্ভর করে না । ৩. দুটি বস্তুর মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ওদের উষ্ণতার পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে ।
৪. দুটি বস্তুর মধ্যে বিভিন্ন পরিমাণ তাপ থাকলেও বস্তু দুটির উষ্ণতা এক হতে পারে । ৪. দুটি বস্তুর মধ্যে একই পরিমাণ তাপ থাকলেও বস্তু দুটির উষ্ণতা যে একই হবে এমন কোনো কথা নেই ।
৫. বস্তুর দ্বারা গৃহিত বা বর্জিত তাপ মাপা হয় ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে । ৫. বস্তুর উষ্ণতা মাপা হয় থার্মোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে ।
৬. কোনো বস্তুর মধ্যস্থ তাপকে কোনো পাত্রে রাখা জলের পরিমাণের সঙ্গে তুলনা করা হয় ।   ৬. কোনো বস্তুর উষ্ণতাকে কোনো পাত্রে রাখা জলতলের উচ্চতার সঙ্গে তুলনা করা হয় ।
৭. অবস্থার পরিবর্তনের সময় মোট তাপের পরিবর্তন হয় । ৭. অবস্থার পরিবর্তনের সময় উষ্ণতা একই থাকে ।
৮. SI পদ্ধতিতে তাপের একক 'জুল' । CGS পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালোরি ।  ৮. SI পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক 'কেলভিন' । CGS পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক ডিগ্রি সেলসিয়াস (oC)  ।

 

***

 

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...