এক্স-রশ্মি উৎপাদনের নীতি

Submitted by arpita pramanik on Fri, 02/01/2013 - 23:01

এক্স-রশ্মি উৎপাদনের নীতি (Principle of production of X-rays) :

সংজ্ঞা : তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন ইলেকট্রনের গতি উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কোনো কঠিন বস্তু (যেমন— প্লাটিনাম বা টাংস্টেন) দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হটাৎ কমে গেলে বা থেমে গেলে, এর গতিশক্তির কিছু অংশ তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । এই শক্তিশালী অদৃশ্য তরঙ্গকে এক্স-রশ্মি বলা হয় । 1895 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী রন্টজেন (Roentgen) এই রশ্মি আবিষ্কার করেন ।

[১] গ্যাস ভর্তি এক্স-রশ্মি নল (Gas filled X-ray tube) : একটি শক্ত কাচের নলের (তড়িৎ মোক্ষম নল) ভিতর বায়ুচাপ 0.001 মিমি পারদস্থম্ভের সমান রেখে নলের দুপ্রান্তে যুক্ত দুটি তড়িদ্দার অ্যানোড ও ক্যাথোডের ভিতর উচ্চ বিভব-প্রভেদ (30,000 থেকে 50,000 ভোল্ট) প্রয়োগ করা হয় । এর ফলে ক্যাথোড থেকে নির্গত ইলেকট্রনের স্রোত তীব্র বেগে উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট প্লাটিনাম বা টাংস্টেনের ধাতুর অ্যানোডে (টার্গেট) আঘাত করে এবং ইলেকট্রনের গতিশক্তির একাংশ এক্স-রশ্মিরূপে টার্গেট থেকে নিঃসৃত হয় । প্রচন্ড গতিবেগ সম্পন্ন ইলেকট্রন টার্গেটে আঘাত করার ফলে প্রচুর পরিমাণ তাপের সৃষ্টি হয় । এই তাপ অপসারণের জন্য শীতল জলের প্রবাহ ঘটিয়ে টার্গেটকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করা হয় ।

[২] কুলীজ নল : বিজ্ঞানী কুলীজের (Coolidge) তৈরি এক্স-রশ্মি যন্ত্রই বর্তমানে এক্স-রশ্মি উৎপন্নের জন্য ব্যবহৃত হয় । যন্ত্রটিকে কুলীজ নল (Coolidge tube) বলে ।

বর্ণনা : এই যন্ত্রে একটি কাঁচের গোলক থাকে । এই গোলকের মধ্যে প্রায় 10-5 মিমি পারদ স্থম্ভের চাপে বায়ু রাখা থাকে । গোলকটিতে পরস্পরের মুখোমুখি দুটি পার্শ্বনল থাকে । পার্শ্বনলের একটিতে ক্যাথোড C এবং অন্যটিতে অ্যানোড A প্রবেশ করানো থাকে । ক্যাথোড C হল টাংস্টেন তারের তৈরি একটি সরু ফিলামেন্ট । এই ফিলামেন্টটি মলিবডিনাম ধাতুর তৈরি একটি চোঙের মধ্যে রাখা থাকে । অ্যানোডটি উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট টাংস্টেন ধাতুর পাত (A) । এই পাতটিকে ক্যাথোড ও অ্যানোড সংযোগকারী সরলরেখার সঙ্গে 45° কোণে আনত রাখা হয় ।

কার্যপ্রণালী : প্রথমে ক্যাথোড C -কে তড়িৎপ্রবাহ দ্বারা প্রায় 2000°C পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয় । উত্তপ্ত অবস্থায় এই ফিলামেন্ট থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয় । এই অবস্থায় ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে খুব উচ্চ ভোল্টের বিভব-পার্থক্য সৃষ্টি করলে, উত্তপ্ত ফিলামেন্ট থেকে তীব্রবেগে ইলেকট্রন নির্গত হতে থাকে । এই তীব্র গতিসম্পন্ন ইলেকট্রনগুলি অ্যানোড পাতে ধাক্কা খায়, এর ফলে অ্যানোড পাত থেকে এক্স-রশ্মি নির্গত হয় । অ্যানোড পাতটি ইলেকট্রন কণার সঙ্গে সংঘর্ষে খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তাই রেডিয়েটারের সাহায্যে বা জলপ্রবাহ দ্বারা অ্যানোড পাতটিকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা থাকে । কুলীজ নলে 10-5 মিমি পারদস্থম্ভ চাপে বায়ুপূর্ণ থাকে । কম চাপে বায়ু থাকায় প্রচন্ড গতিশীল ইলেকট্রনগুলি বায়ুকণার সঙ্গে সংঘর্ষে বেশি গতিশক্তি হারায় না । কুলীজ নলে 50000 – 100000 ভোল্ট পর্যন্ত উচ্চ বিভব প্রয়োগ করে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এবং বেশি ভেদ ক্ষমতাসম্পন্ন এক্স-রশ্মি উৎপন্ন করা হয় ।

*****

Comments

Related Items

জৈব যৌগের গঠনগত সমাবয়বতা

একই আণবিক সংকেত বিশিষ্ট একাধিক যৌগে বিভিন্ন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতির জন্য যে সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়, তাকে কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা বলে । এই দুটি যৌগে উপাদান হিসাবে C, H এবং O -এর ওজনের অনুপাত একই কিন্তু এরা ভিন্ন প্রকৃতির যৌগ । একটি হল অ্যালকোহল ...

জৈব যৌগগুলির প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ

কার্যকরী মূলকের ওপর ভিত্তি করে জৈব যৌগগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা - হাইড্রোকার্বন, অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কিটোন, কার্বক্সিলিক অ্যাসিড যৌগ । নীচে জৈব যৌগের কয়েকটি শ্রেণি এবং প্রতিটি শ্রেণির প্রথম তিনটি সদস্যের নাম ও গঠন দেওয়া হল ...

জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক বা পরিচায়ক শ্রেণি

অসংখ্য জৈব যৌগকে, ওদের রাসায়নিক ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কতকগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে । দেখা যায় যে, এই রকম প্রতিটি শ্রেণিতে যৌগগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মূলক বর্তমান থাকে । এই মুলকের উপস্থিতির জন্য ওই শ্রেণির সমস্ত যৌগের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকম হয় ...

জৈব যৌগের বন্ধন প্রকৃতি

কর্বনের পারমাণবিক সংখ্যা 6, কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে জানা যায় কার্বনের প্রথম কক্ষে 2টি এবং বাইরের কক্ষে 4টি ইলেকট্রন আছে । কার্বন পরমাণু বাইরের কক্ষের 4টি ইলেকট্রন, অন্য পরমাণুর বাইরের কক্ষের ইলেকট্রনের সঙ্গে চারটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে সমযোজ্যতা দ্বারা জৈব ...

জীবজ অণু (Biomolecules)

সজীব কোশে সংশ্লেষিত ক্ষুদ্র অণু ও বৃহদ অণুকে একত্রে জীবজ অণু বলা হয় । প্রায় সমস্ত জীবজ অণুই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লীয়িক অ্যাসিড, লিপিড এই চারটি শ্রেণির কোনো একটির অন্তর্ভুক্ত । এগুলি কোশের জীবজ পলিমার । কার্বোহাইড্রেট সরল সুগারের ...