ক্ষারক ও ক্ষারকের ধর্ম

Submitted by arpita pramanik on Mon, 09/21/2020 - 20:35

ক্ষারক ও ক্ষারকের ধর্ম (Properties of Base)

 

ক্ষারকের ধর্ম (Properties of Base)

ক্ষারকের গুলি হল---

1. ক্ষারকের জলীয় দ্রবণ নির্দেশকের (Indicators) বর্ণ পরিবর্তন করে ।  যেমন ক্ষারকের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে । ফেনলপথ্যালিনের বর্ণ গোলাপি করে এবং মিথাইল অরেঞ্জ এর বর্ণ হলুদ করে । এর মাধ্যমে ক্ষারককে শনাক্ত করা যায় ।

2. ক্ষারকের সঙ্গে অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় । যেমন ক্ষারক MgO এর সঙ্গে H2SO4 অ্যাসিডের এর বিক্রিয়ায় MgSO4 লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় । ক্ষারক NaOH এর সঙ্গে HCl অ্যাসিডের এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় ।

MgO + H2SO4 = MgSO4 + H2O

NaOH + HCl = NaCl + H2O
 

3.জলে দ্রাব্য গুলি জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে OH- আয়ন উৎপন্ন করে । যেমন জলীয় দ্রবণে NaOH বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়নরূপে OH- আয়ন উৎপন্ন করে ।

NaOH = Na+ + OH-

4. ক্ষারকের OH- আয়ন সর্বদাই অ্যাসিডের H+ আয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলের অনু গঠন করে । যেমন H+ + OH- = H2O এই কারণে ক্ষারককে H+ আয়ন বা প্রোটন গ্রাহক বলা হয় ।

ক্ষার (Alkali)

জলে দ্রবণীয় ক্ষারকীয় ধর্ম বিশিষ্ট ধাতব হাইড্রক্সাইডকে ক্ষার (Alkali) বলে । যেমন - ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড (Ca(OH)2,  পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH4OH) ইত্যাদি ।

 

ক্ষারের ধর্ম (Properties of Alkali)

ক্ষারের গুলি হল---

1. ক্ষারের জলীয় দ্রবণ স্পর্শ করলে সাবানের মতো পিচ্ছিল মনে হয় ।

2. ক্ষারের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে । ক্ষারীয় দ্রবণে ফেনলপথ্যালিনের এর বর্ণ গোলাপি এবং মিথাইল অরেঞ্জ এর বর্ণ হলুদ হয় । এর মাধ্যমে ক্ষারককে শনাক্ত করা যায় ।

3. ক্ষার এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে ।

4. জলীয় দ্রবণে ক্ষার আয়নিত হয় এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন OH- উৎপন্ন করে ।

5. ক্ষার ধাতব লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতব হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন করে ।

MgSO4 + 2NaOH =Mg(OH)2 + Na2SO4

CuCl2 +2NaOH = Cu(OH)2 + 2NaCl

 

ক্ষারক বা ক্ষারের অম্লগ্রাহীতা (Acidity of Base)

কোন ক্ষারক বা ক্ষারের প্রতিটি অণুর মধ্যে যত সংখ্যক OH মূলক বর্তমান থাকে সেই সংখ্যাকে ওই ক্ষারক বা ক্ষারের অম্লগ্রাহীতা বলে । যেমন -

NaOH এর অম্লগ্রাহীতা =1 কারণ NaOH এর একটি অনুর মধ্যে একটি OH মূলক বর্তমান আছে বলে । Ca(OH) এর অম্লগ্রাহীতা =2 কারণ Ca(OH)2 এর একটি অনুর মধ্যে দুইটি OH মূলক আছে ।

যেসব ক্ষারকে OH মূলক থাকে না তাদের ক্ষেত্রে ক্ষারকের একটি অণু এক ক্ষারীর অ্যাসিডের যত সংখ্যক অণুর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে সেই সংখ্যাকে ওই ক্ষারকের অম্লগ্রাহীতা বলে যেমন -

CaO + 2HCl = CaCl2 + H2O

MgO +2HCl = MgCl2 + H2O

 

সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয় কেন ?

সাধারণত ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড যৌগ গুলি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে, এদের ক্ষারক বলে । কিন্তু যে সমস্ত ক্ষারক জলে দ্রাব্য কেবল তাদেরকেই ক্ষার বলে । জিংক হাইড্রক্সাইড Zn(OH)2 , ফেরিক হাইড্রক্সাইড (Fe(OH)3 , অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (Al(OH)3 , জিংক অক্সাইড (ZnO) জলে দ্রবীভূত হয় না তাই এগুলো ক্ষারক হলেও ক্ষার নয় আবার ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)2 , সোডিয়াম অক্সাইড NaOH ,  ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) প্রভৃতি জলে দ্রাব্য । তাই এদের ক্ষারক বা ক্ষার উভয়ই বলা হয় । সুতরাং সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয়

 

তীব্র ক্ষারক বা ক্ষার এবং মৃদু  ক্ষারক বা ক্ষার কি ?

যে ক্ষারক জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিনের ফলে বেশি পরিমাণ OH- আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র ক্ষারক বা ক্ষার বলে । NaOH, KOH ইত্যাদি ।

যে ক্ষারক জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিনের ফলে কম পরিমাণ OH- আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৃদু ক্ষারক বা ক্ষার বলে ।

*****

 

 

 

Comments

Related Items

কার্য ও কার্যের পরিমাপ

বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ এর গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় । কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ বলের অভিমুখে এক একক হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে একক কার্য বলে । কার্যের একক, কার্যের ব্যবহারিক একক ...

দ্রবণের প্রকারভেদ

ভৌত অবস্থা অনুযায়ী দ্রবণকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়- কঠিনে কঠিনের দ্রবণ, কঠিনে তরলের দ্রবণ, তরলে কঠিনের দ্রবণ, তরলে তরলের দ্রবণ, তরলে গ্যাসের দ্রবণ, গ্যাসে গ্যাসের দ্রবন ...

দ্রবণের বৈশিষ্ট্য

দ্রবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -.দ্রবণে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না অর্থাৎ দ্রবণে দ্রাবক (Solvent) ও দ্রাবের (Solute) নিজস্ব ধর্ম বজায় থাকে। দ্রবণের প্রতিটি অংশের উপাদান গঠন এবং ধর্ম একই অর্থাৎ দ্রবণ সবসময় সমসত্ব হবে। দ্রবণের মধ্যে দ্রাবের (Solute) কনাগুলিকে খালি চোখে বা খুব শক্তিশালী অণুবীক্ষণ ..

প্রশমন ক্রিয়া (Neutralisation)

অ্যাসিড ও ক্ষারের মধ্যে যে বিক্রিয়ার ফলে অ্যাসিড ও ক্ষারের ধর্ম সম্পূর্ণভাবে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয় সেই বিক্রিয়াকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে ।যেমন তুল্যাঙ্ক পরিমাণ ক্ষার NaOH এর সঙ্গে তুল্যাঙ্ক পরিমাণ অ্যাসিড HCl এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয় ...

লবণ ও লবণের ধর্ম

অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু ধাতু বা অপর কোন ধাতুধর্মী মূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে লবণ বলে। যেমন- সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, জিংক সালফেট, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি।