ক্ষারক ও ক্ষারকের ধর্ম (Properties of Base)
ক্ষারকের ধর্ম (Properties of Base)
ক্ষারকের গুলি হল---
1. ক্ষারকের জলীয় দ্রবণ নির্দেশকের (Indicators) বর্ণ পরিবর্তন করে । যেমন ক্ষারকের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে । ফেনলপথ্যালিনের বর্ণ গোলাপি করে এবং মিথাইল অরেঞ্জ এর বর্ণ হলুদ করে । এর মাধ্যমে ক্ষারককে শনাক্ত করা যায় ।
2. ক্ষারকের সঙ্গে অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় । যেমন ক্ষারক MgO এর সঙ্গে H2SO4 অ্যাসিডের এর বিক্রিয়ায় MgSO4 লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় । ক্ষারক NaOH এর সঙ্গে HCl অ্যাসিডের এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় ।
MgO + H2SO4 = MgSO4 + H2O
NaOH + HCl = NaCl + H2O
3.জলে দ্রাব্য গুলি জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে OH- আয়ন উৎপন্ন করে । যেমন জলীয় দ্রবণে NaOH বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়নরূপে OH- আয়ন উৎপন্ন করে ।
NaOH = Na+ + OH-
4. ক্ষারকের OH- আয়ন সর্বদাই অ্যাসিডের H+ আয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলের অনু গঠন করে । যেমন H+ + OH- = H2O এই কারণে ক্ষারককে H+ আয়ন বা প্রোটন গ্রাহক বলা হয় ।
ক্ষার (Alkali)
জলে দ্রবণীয় ক্ষারকীয় ধর্ম বিশিষ্ট ধাতব হাইড্রক্সাইডকে ক্ষার (Alkali) বলে । যেমন - ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড (Ca(OH)2, পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH), অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH4OH) ইত্যাদি ।
ক্ষারের ধর্ম (Properties of Alkali)
ক্ষারের গুলি হল---
1. ক্ষারের জলীয় দ্রবণ স্পর্শ করলে সাবানের মতো পিচ্ছিল মনে হয় ।
2. ক্ষারের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে । ক্ষারীয় দ্রবণে ফেনলপথ্যালিনের এর বর্ণ গোলাপি এবং মিথাইল অরেঞ্জ এর বর্ণ হলুদ হয় । এর মাধ্যমে ক্ষারককে শনাক্ত করা যায় ।
3. ক্ষার এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে ।
4. জলীয় দ্রবণে ক্ষার আয়নিত হয় এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন OH- উৎপন্ন করে ।
5. ক্ষার ধাতব লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতব হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন করে ।
MgSO4 + 2NaOH =Mg(OH)2 + Na2SO4
CuCl2 +2NaOH = Cu(OH)2 + 2NaCl
ক্ষারক বা ক্ষারের অম্লগ্রাহীতা (Acidity of Base)
কোন ক্ষারক বা ক্ষারের প্রতিটি অণুর মধ্যে যত সংখ্যক OH মূলক বর্তমান থাকে সেই সংখ্যাকে ওই ক্ষারক বা ক্ষারের অম্লগ্রাহীতা বলে । যেমন -
NaOH এর অম্লগ্রাহীতা =1, কারণ NaOH এর একটি অনুর মধ্যে একটি OH মূলক বর্তমান আছে বলে । Ca(OH) এর অম্লগ্রাহীতা =2, কারণ Ca(OH)2 এর একটি অনুর মধ্যে দুইটি OH মূলক আছে ।
যেসব ক্ষারকে OH মূলক থাকে না তাদের ক্ষেত্রে ক্ষারকের একটি অণু এক ক্ষারীর অ্যাসিডের যত সংখ্যক অণুর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে সেই সংখ্যাকে ওই ক্ষারকের অম্লগ্রাহীতা বলে । যেমন -
CaO + 2HCl = CaCl2 + H2O
MgO +2HCl = MgCl2 + H2O
সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয় কেন ?
সাধারণত ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড যৌগ গুলি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে, এদের ক্ষারক বলে । কিন্তু যে সমস্ত ক্ষারক জলে দ্রাব্য কেবল তাদেরকেই ক্ষার বলে । জিংক হাইড্রক্সাইড Zn(OH)2 , ফেরিক হাইড্রক্সাইড (Fe(OH)3 , অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (Al(OH)3 , জিংক অক্সাইড (ZnO) জলে দ্রবীভূত হয় না তাই এগুলো ক্ষারক হলেও ক্ষার নয় আবার ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)2 , সোডিয়াম অক্সাইড NaOH , ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) প্রভৃতি জলে দ্রাব্য । তাই এদের ক্ষারক বা ক্ষার উভয়ই বলা হয় । সুতরাং সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয় ।
তীব্র ক্ষারক বা ক্ষার এবং মৃদু ক্ষারক বা ক্ষার কি ?
যে ক্ষারক জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিনের ফলে বেশি পরিমাণ OH- আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র ক্ষারক বা ক্ষার বলে । NaOH, KOH ইত্যাদি ।
যে ক্ষারক জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিনের ফলে কম পরিমাণ OH- আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৃদু ক্ষারক বা ক্ষার বলে ।
*****