আয়তন মাপক চোঙ

Submitted by arpita pramanik on Mon, 03/19/2018 - 19:22

আয়তন মাপক চোঙ (Measuring cylinder) :

তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের জন্য মাপক চোঙ ব্যবহার করা হয় । এটি একটি সম sylinder 1প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট একদিক বদ্ধ লম্বা কাঁচের চোঙ । এই চোঙের বাইরের গায়ে cm3 বা ml (মিলিলিটার) এককে আয়তন নির্দেশক দাগ কাটা থাকে । প্রতি cm3 কে 5 বা 10 টি সমান ভাগে ভাগ করা থাকে । কোনো তরলের আয়তন পরিমাপের সময় চোঙটিকে খাড়া ভাবে বসিয়ে তরলটিকে এর মধ্যে ঢালা হয় এবং তরলের ওপর তলের অবতল পৃষ্ঠের সর্বনিম্ন বিন্দু এবং পারদের ক্ষেত্রে উত্তল পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ বিন্দু স্কেলে কোন দাগের সঙ্গে মেলে তা দেখে নেওয়া হয় । এটিই তরলটির আয়তন । পাঠ নেবার সময় যেন লম্বন ত্রুটি (parallax error) না আসে সেটা খেয়াল রাখা দরকার ।

মাপক চোঙ-এর সাহায্যে অসম আকৃতির বস্তুর আয়তন নির্ণয় : মাপক চোঙের সাহায্যে অসম আকৃতির বস্তুর আয়তন নির্ণয় করা সম্ভব । sylinder 2এ ক্ষেত্রে এমন একটি তরলের সাহায্য নিতে হয় যা বস্তুটিকে দ্রবীভূত করে না, বস্তুটির সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটায় না এবং যার মধ্যে বস্তুটি ডুবে যায় এবং এমন একটি মাপক চোঙ নেওয়া দরকার যার ভিতরের আয়তন বস্তুটির আয়তনের তুলনায় চার-পাঁচ গুণ এবং যার প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল এমন যাতে বস্তুটিকে মাপক চোঙের মধ্যে সহজেই প্রবেশ করানো যায় । মাপক চোঙটিকে আংশিক তরল ভর্তি করা হল এবং লম্বন ত্রুটি (parallax error) দূর করে তরল তলের পাঠ নেওয়া হল । ধরা যাক এই অবস্থায় তরলের আয়তন V1 cm3 । এর পর পরীক্ষাধীন বস্তুটিকে সুতোর সাহায্যে বেঁধে তরলে সম্পূর্ণ ভাবে ডোবানো হল । বৃদ্ধি প্রাপ্ত তরল তলের পাঠ নেওয়া হল এখন ধরা যাক বস্তু সমেত তরলের আয়তন V2 cm3 । বস্তুটির আয়তন = (V2 - V1) cm3 । এই পাঠ থেকে নিমজ্জিত সুতোর আয়তন বাদ দিলে বস্তুর প্রকৃত আয়তন পাওয়া যাবে ।

আয়তন মাপক চোঙের সাহায্যে জল অপেক্ষা হালকা অদ্রাব্য একটি অসম আকৃতির বস্তুর আয়তন পরিমাপ :- জলের তুলনায় হালকা sylinder 3কোনো অসম বস্তুর আয়তন নির্ণয় করতে গেলে নিমজ্জকের সাহায্য নিতে হয় । নিমজ্জক ও বস্তুর মিলিত আয়তন মেপে নিমজ্জকের আয়তন বাদ দিলে বস্তুর আয়তন জানা যায় । আয়তন মাপক চোঙটি অর্ধেক পরিমাণ জল দ্বারা ভর্তি করা হল । এরপর একটি ভারী লোহার বা পাথরের টুকরো (নিমজ্জক) সুতোয় বেঁধে ওই জলে ডুবিয়ে দেওয়া হল । এর ফলে জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেল । চোঙের গায়ে অংশাঙ্কন থেকে ওই অপসারিত জলের আয়তন নির্ণয় করা হল । এই আয়তন হল নিমজ্জকের আয়তন (V1) । এরপর যে অসম আকৃতির বস্তুটির আয়তন পরিমাপ করতে হবে সেটিকে ওই নিমজ্জকটির সঙ্গে সুতো দিয়ে বেঁধে আবার জলে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেওয়া হল । এর ফলে অপসারিত জলের আয়তন পরিমাপ করা হল । এই আয়তন হল বস্তু ও নিমজ্জকের মিলিত আয়তন (V2) । এতএব বস্তুর আয়তন = v2 - V1

মাপক চোঙের মধ্যে ঢুকবে না — এরূপ পাথরের টুকরোর আয়তন নির্ণয় : পাথরের টুকরোটি প্রবেশ করানো যাবে এমন প্রস্থচ্ছেদের sylinder 4ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট পার্শ্বনল যুক্ত একটি কাঁচের চোঙ নেওয়া হল । চোঙটিতে জল ঢালা হতে থাকলে এক সময় পার্শ্বনল দিয়ে জল বেরিয়ে যেতে থাকবে । জল ঢালা বন্ধ করে দিলে জলের লেভেল পার্শ্বনলের তল পর্যন্ত থাকে । পার্শ্বনলটির ঠিক নীচে মাপনী চোঙটিকে রাখা হল । এবার একটি মোম লাগানো সরু, শক্ত সুতোতে পাথরটিকে বেঁধে খুব ধীরে চোঙের জলে ডোবানো হল । পাথরটি সম-আয়তন জল অপসারণ করবে তাই ওই পরিমাণ জল পার্শ্বনল দিয়ে গিয়ে মাপনী চোঙে জমা হবে । মাপনী চোঙে জমা হওয়া জলের আয়তনই হল পাথরের টুকরোটির আয়তন । এই পাঠ থেকে নিমজ্জিত সুতোর আয়তন বাদ দিলে বস্তুর প্রকৃত আয়তন পাওয়া যাবে । 

*****

Comments

Related Items

ভৌতরাশির দৈর্ঘ্য পরিমাপে সাধারণ রৈখিক স্কেলের ব্যবহার

দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রকে রৈখিক স্কেল বলা হয় । স্কেল সাধারণত প্লাস্টিক, কাঠ বা ধাতুর তৈরি হয় এবং এর দৈর্ঘ্য বরাবর একধারে মিলিমিটার ও সেন্টিমিটারে এবং ওপর ধারে ইঞ্চি ও তার ভগ্নাংশে দাগ কাটা থাকে ।

মাত্রা (Dimensions)

কোনো ভৌতরাশিতে (Physical quantities) গুণ বা ভাগের মাধ্যমে উপস্থিত বিভিন্ন মৌলিক রাশিগুলির চিহ্নের উপযুক্ত ঘাত সমন্বিত সাংকেতিক রাশিমালাকে ওই ভৌতরাশির মাত্রা (Dimensions) বলে ।

বিভিন্ন মাপের একক

আমাদের সহজে বোধগম্য হওয়ার জন্য বা সহজে বুঝতে পারার জন্য, ক্ষুদ্র অনুজীব থেকে বৃহৎ জীব, ছোটো থেকে বড়ো বিভিন্ন জাগতিক বস্তুর পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানের একক আমরা ব্যবহার করে থাকি ।

এককের বিভিন্ন পদ্ধতি

বর্তমানে প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে সকল ভৌতরাশির একক প্রকাশ করা হয়ে থাকে । সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড বা cgs পদ্ধতি , আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা SI পদ্ধতি, মৌলিক এবং লব্ধ একক, মৌলিক একক বা প্রাথমিক একক , ঘনমিটার ও ঘন সেন্টিমিটারের মধ্যে সম্পর্ক ...

পরিমাপ ও একক

যে সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয়কে বা ঘটনা সম্পর্কিত যা কিছুকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা যায় তাদেরকেই ভৌতরাশি বা প্রাকৃতিক রাশি বলা হয় । যেমন – ঘরের দৈর্ঘ্য স্কেল বা ফিতে দিয়ে আমরা পরিমাপ করতে পারি, বাড়ি থেকে স্কুলে আসতে যে সময় লাগে তা ঘড়ি দিয়ে আমরা পরিমাপ ...