ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/24/2012 - 08:17

ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ (The Government of India Act, 1935) :

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে লন্ডনে তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । কংগ্রেস যথারীতি ওই বৈঠকে যোগদান করেনি । অন্যান্য দল ও সম্প্রদায়ের অনেক কম সংখ্যক প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন । তাঁরা ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে কয়েকটি প্রগতিশীল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে ব্রিটিশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে । তবে এই বৈঠক এবং পরবর্তী আলোচনা সমূহের ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন বিধিবদ্ধ হয় । ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটির রিপোর্ট, ব্রিটিশ সরকারের প্রকাশিত শ্বেতপত্র বা সরকারি দলিল প্রভৃতির সুপারিশ ও আলোচনার ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন রচনা করেন । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহারের পর ১৯৩০ ও ১৯৪০ -এর দশকে ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দুটি ধারায় চলতে থাকে । একটি কংগ্রেসের নেতৃত্বে জাতীয় আন্দোলন, অপরটি বামপন্থীদের নেতৃত্বে বামপন্থী আন্দোলন । কংগ্রেস নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পক্ষপাতি ছিলেন এবং বামপন্থীরা গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশের শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন । এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করার জন্য ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করেন ।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো (Federal Government) :

ভারত শাসন আইন অনুসারে ভারতে ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশ, দেশীয় রাজ্য এবং চিফ কমিশনার শাসিত প্রদেশগুলিকে নিয়ে এক সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা হয় । যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পরিচালক হন গভর্নর জেনারেল । গভর্নর জেনারেল তাঁর মনোনীত তিনজন সদস্য নিয়ে একটি পরিষদ গঠন করেন । এই তিন সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের সাহায্যে গভর্নর জেনারেল ভারতবর্ষের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি, খ্রিস্টধর্ম সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনা করতেন । অন্যান্য বিষয়গুলি পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয় । মন্ত্রীগণ তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকতেন । কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে গভর্নর জেনারেল মন্ত্রিসভার পরামর্শ গ্রহণ নাও করতে পারেন । যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা দুটি পরিষদ নিয়ে গঠিত হবে । উচ্চকক্ষের নাম হবে রাষ্ট্রীয় পরিষদ (Council of States) এবং নিম্নকক্ষের নাম হবে ব্যবস্থা পরিষদ (Federal Assembly) । রাষ্ট্রীয় পরিষদ একটি স্থায়ী সংসদ হবে এবং এর এক তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রতি তিন বছর অন্তর কার্যকাল শেষ হবে এবং সেই জায়গায় নতুন সদস্য নেওয়া হবে । অবসর গ্রহণকারী সদস্যরা পুনর্নির্বাচিত হতে পারবেন । রাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্য সংখ্যা হবে অনধিক ২৬০ । এঁদের মধ্যে ১৫৬ জন ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে নির্বাচিত হবেন এবং অনধিক ১০৪ জন দেশীয় রাজ্যের শাসকদের দ্বারা মনোনীত হবেন । নিম্নকক্ষ ব্যবস্থা পরিষদ (Federal Assembly) পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ঠিক হয় । এর সদস্য সংখ্যা হবে অনধিক ৩৭৫ । ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে ২৫০ জন এবং দেশীয় রাজ্যগুলি থেকে ১২৫ জন সদস্য পরিষদের জন্য নির্বাচিত হবেন ।

*****

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?