বেলগ্রেড সম্মেলন (Conference in Belgrade, 1961)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 04/26/2012 - 21:20

বেলগ্রেড সম্মেলন (Non-Aligned Conference in Belgrade, 1961) :

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৬ই সেপ্টেম্বর যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির 'বেলগ্রেড সম্মেলন' অনুষ্ঠিত হয় । আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, ইথিওপিয়া, ঘানা, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, ব্রহ্মদেশ, কাম্বোডিয়া, সিংহল, কঙ্গো প্রভৃতি ২৫টি দেশ এই সম্মেলনে যোগদান করে । এছাড়া পরিদর্শক রূপে ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডার এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিল । ভারতের জওহরলাল নেহরু, মিশরের নাসের, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো ও শ্রীলঙ্কার সিরিমাভো বন্দরনায়েক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র নেতাগণ ও নেত্রীগণ এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন । এই সম্মেলনে আণবিক যুদ্ধ, উপনিবেশবাদ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং শান্তির সপক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় । ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি তাসখন্দ ঘোষণায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় পঞ্চশীল নীতির প্রতি গভীর আস্থার কথা ব্যক্ত করেন । লালবাহাদুর শাস্ত্রীর পর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধিও ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সগৌরবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের এক বিশেষ অধিবেশনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র ও শোষণমুক্ত এক নতুন বিশ্ব গঠনের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সকল সদস্যের প্রতি আবেদন জানান । ইন্দিরা গান্ধীর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ভারতের নির্জোট আন্দোলনের ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান । তাঁর চেষ্টায় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে ক্রেমলিন প্রাসাদে এক যুক্ত ঘোষণায় সোভিয়েত রাশিয়ার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট লিওনিড ব্রেজনেভ পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় পরিচালিত নির্জোট আন্দোলন -এর প্রতি সমর্থন জানান । ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এক যোগে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির যুগ্ম প্রচেষ্টায় সম্মত হন । এই ঘোষণায় তিনি পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধ, নিরস্ত্রীকরণ প্রভৃতির প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন । তাঁর ভ্রমণকালে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের উদ্যোগ ও নির্জোট আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভারতের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসের ভূয়সী প্রসংসা করেন । ভারতের স্বাধীনতার প্রাপ্তির পর ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ও গণতন্ত্রের কথাও তাঁর বক্তৃতায় স্থান পায় । তিনি দুটি দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে এক আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন । ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভ্রমণে আসা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জেমস কালাঘান -এর এক ঘোষণাতেও একই প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত হয় । বারে বারে ভারতের সরকার বদল হলেও ভারতের বিদেশনীতির বদল হয় নি । ভারতের সব প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারই নির্জোট আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রয়াস চালিয়েছেন । সেই সঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিকেও এই প্রচেষ্টায় সামিল করেছেন ।

*****

Related Items

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা (Critique of Colonial Ideas Regarding Education):-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতি

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education)

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education):-

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কার্জনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে দেশীয় প্রগতিশীল স্বদেশী ধাঁচে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রস

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute)

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-

ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের র