Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 14:12

খেদা-কয়রা আন্দোলন (Kheda-Khaira Movement) :

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের কয়রা বা খেদা জেলায় খরা হওয়ায় দারুন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । গান্ধিজি খরা পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জমির খাজনা বন্ধ রাখতে বলেন । এই করদান বন্ধ আন্দোলনে তাঁর প্রধান সহায় ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল । গান্ধিজির আন্দোলনের ফলে সরকার শেষ পর্যন্ত জমির খাজনা মকুব করে দেন । এভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে একের পর এক রাজনৈতিক আন্দোলন সফল হতে থাকলে ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজির প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় ও তিনি কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে রাজনৈতিক আন্দোলনে সামিল করেন । এভাবে ভারতের রাজনীতির ক্ষেত্রে গান্ধিজির আবির্ভাব জাতীয় আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে । ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেস ছিল মোটামুটি শহুরে বাবু এবং বুদ্ধিজীবিদের সংগঠন । এই দলের সঙ্গে সাধারণ জনগণের তেমন কোনো যোগ ছিল না । সত্যিকার গণআন্দোলন বলতে যা বোঝায় তা প্রকৃত পক্ষে গান্ধিজিই গড়ে তুলেছিলেন ।

এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তৎকালীন ভারতসচিব এডউইন মন্টেগু ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে—

(ক) নতুন শিল্পগঠনের মাধ্যমে ভারতের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো হবে ও

(খ) শাসন সংস্কারের মাধ্যমে ভারতীয়দের বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূরণ করা হবে ।

ব্রিটিশের এই মনোভাব লক্ষ করে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস নেতারা, এমনকি চরমপন্থী নেতা লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক ব্রিটিশ সরকারকে সমস্ত রকম সাহায্য করার জন্য সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানান । ফলে ভারতীয়রা অর্থ, অস্ত্র, রসদ, সেনা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীকে সাহায্য করে । তাঁদের আশা ছিল যুদ্ধের অবসানে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যত্নবান হবেন । কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হয়ে ব্রিটেন সেই প্রতিশ্রুতি পালনে মোটেই উৎসাহ দেখায় নি । ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য পরাধীন জাতিগুলির মতো ভারতবাসীদের মনে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দেয় ও ভারতবাসীর মোহভঙ্গ হয় । কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে ইংরেজ শাসন নীতির সমালোচনা আরম্ভ হয় । এই অবস্থায় নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হন । চরমপন্থীরা বিভেদ ভূলে গিয়ে কংগ্রেসের মূল স্রোতে ফিরে আসেন ও কংগ্রেসে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের অবিসম্বাদিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় । ভারতের জাতীয় নেতারা ব্রিটিশের তোষণ নীতি ছেড়ে সরকার বিরোধিতায় অবতীর্ণ হন ।

*****

Related Items

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar)

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে অংশ নি

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha)

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha):-

বিংশ শতকে জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে জাতীয় আন্দোলগুলি ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হলে বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে । এই সময় নারীদের সংগঠিত করে বিপ্লবী কার্যকলাপে শামি

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ (Nature of Women's Role in the Armed Revolution Struggles):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Quit India Movement):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । এই অর্থনৈতিক মন্দা ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে । ভারতের কৃষিজাত পণ্