কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 02/27/2021 - 09:09

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Kashmir):-

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতীয় ভুখণ্ডের উল্লেখযোগ্য দেশীয় রাজ্য ছিল কাশ্মীর । 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত বা পাকিস্তানের যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয় ।   

ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী রাজ্য কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয় । কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দারা ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের । লর্ড মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরের শাসক মহারাজা হরি সিং -কে ভারত বা পাকিস্তান যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদানের আহ্বান জানান । কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল 'ন্যাশনাল কনফারেন্স' -এর সভাপতি শেখ আবদুল্লা ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পক্ষে জনমত গঠন করেন । ভারত কাশ্মীরে গণভোটের প্রস্তাব দিলে পাকিস্তান এর বিরোধিতা করে । এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিস্ত্ব রক্ষার পক্ষপাতী হলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে ।

এমতাবস্থায় পাক সেনাবাহিনীর পরোক্ষ মদতে পাঠান উপজাতি ও পাক সেনাদল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর দখলে অগ্রসর হয় । পাক সেনাবাহিনী ও পাক মদতপুষ্ট হানাদাররা সেখানে ব্যাপক হত্যালীলা, লুন্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে । এতে বিপর্যস্ত হয়ে মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সামরিক সাহায্য চাইলে ভারত সরকার জানিয়ে দেয় যে, মহারাজা হরি সিং 'ভারতভুক্তির দলিল' -এ স্বাক্ষর করলে তবেই ভারত সরকার কাশ্মীরে সেনাবাহিনী পাঠাবে । এদিকে পাক সেনাবাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থান দ্রুত দখল করতে থাকলে মহারাজা হরি সিং 'ভারতভুক্তি দলিল' -এ স্বাক্ষর করেন । পরের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে পাক হানাদারদের বিতাড়িত করে ও কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড উদ্ধার করে । ভারতের অধীনে শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে কাশ্মীরে এক আপাতকালীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় ।

কাশ্মীর দখলের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সুপরিকল্পিত ভাবে সীমান্তবর্তী উপজাতিভুক্ত হানাদারদের ছদ্দবেশে পাক সেনাবাহিনীকে কাশ্মীরে ঢুকিয়ে আক্রমণ চালালে ভারত-পাক যুদ্ধ বাধে । ভারত-পাক সংঘর্ষ বন্ধের জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারি ভারত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর সমস্যা উত্থাপন করে কাশ্মীরে পাকিস্তানি হস্তক্ষেপ বন্ধের আদেশ দেওয়ার জন্য ভারত জাতিপুঞ্জকে অনুরোধ জানায় । জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি ঘটলেও জম্মু-কাশ্মীরের এক অংশ পাকিস্তানের দখলেই থেকে যায় । পাকিস্তান তার দখলিকৃত কাশ্মীরে আজাদ কাশ্মীর নামে একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করে । কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা আজও অত্যন্ত হতাশাজনক রয়ে গেছে । কাশ্মীর না পাওয়ার হতাশা থেকে পাকিস্তান আজও ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে । 

*****

Comments

Related Items

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল ?

'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা' -কে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?

প্রশ্ন : 'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা' -কে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?

হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন : হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

প্রশ্ন : উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

প্রশ্ন : 'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?