উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 11/30/2020 - 19:13

উনিশ শতকের বাংলা — শিক্ষা সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতিষ্ঠানে মূলত ধর্মীয় কাহিনি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি ভাষা এবং সাধারণ কিছু বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হত । ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম দিকে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে চায় নি । কারণ (১) তারা মনে করত ভারতীয়দের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য ব্রিটিশদের অর্থব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই । (২) ভারতবর্ষের ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে তারা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারে । (৩) ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে ভাবিষ্যতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জেগে উঠতে পারে ।

ইংরেজরা অত্যন্ত বাস্তব দুটি কারণে এদেশের শিক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে । প্রথমত তারা বুঝতে পারে প্রশাসনের উচ্চপদে কোম্পানির কর্মচারীরা থাকলেও প্রশাসনের নিম্নস্তর চালানোর জন্য উপযুক্ত লোকবল তাদের নেই । ভারতীয় কর্মচারীদের ওপর তাদের নির্ভর করতেই হবে । ইংরেজ আমলে প্রশাসনের ভাষা হিসেবে প্রচলিত ফারসি ভাষার জায়গায় ইংরেজি ভাষা স্থান দখল করে । কাজেই ভারতীয়দের জীবিকা নির্বাহের জন্য ন্যূনতম ইংরেজি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । শুধু জ্ঞানার্জন নয়, নিছক কেরানি তৈরির প্রয়োজনে কোম্পানির শাসকরা ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারে উদ্যোগী হয় । ইংরেজ আমলে শিক্ষাবিস্তার বলতে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারকেই বোঝাত । দ্বিতীয়ত ভারতে ইংরেজ শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে এদেশের মানুষকেই মনেপ্রাণে ইংরেজ করে তুলতে হবে ।

বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস -এর আমলে সর্বপ্রথম বিদ্যাচর্চার ওপর জোর দেওয়া শুরু হয় । প্রাচ্যবিদ্যার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে হেস্টিংস আরবি-ফরাসি ও মুসলিম আইনচর্চার লক্ষ্যে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে 'কলকাতা মাদ্রাসা' গড়ে তোলেন । প্রাচ্য বিদ্যাচর্চার লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি উইলিয়াম জোন্সের উদ্যোগে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারী 'এশিয়াটিক সোসাইটি' গড়ে ওঠে । ভারতে কর্মরত উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারীদের ভারতীয় ভাষা, আইন, সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে অবহিত করানোর উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুলাই 'ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ' গড়ে তোলেন ।

****

Comments

Related Items

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দো

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক