আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/15/2022 - 20:18

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

(১) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিশিষ্ট বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর ইচ্ছা অনুসারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ।

(২) নেতাজির রণধ্বনি ‘দিল্লী চলো’ ও ‘জয় হিন্দ’ মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারত সীমান্তে এসে পৌঁছায় ।

(৩) নেতাজি জাপানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেখানে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে দ্বীপগুলির নতুন নামকরণ করেন শহিদ ও স্বরাজ দ্বীপ ।

(৪) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে নেতাজির নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রহ্মদেশ পার হয়ে মণিপুর রাজ্যে প্রবেশ করে এবং কোহিমা ও মৈরাং সহ ভারতীয় এলাকার প্রায় ১৫০ মাইল ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করার পর মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল অধিকারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয় । ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষা শুরু হলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান ব্যাহত হয় ।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রধান কারণ—

(১) দূর্গম পার্বত্য এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনায় নানান অসুবিধা এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রবল বর্ষা নামায় আজাদ হিন্দ বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।

(২) অস্ত্রশস্ত্র, খাদ্য ও সরঞ্জামের অভাবের ফলে আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকরা পিছু হটতে বাধ্য হয় ।

(৩) ঐতিহাসিক এ. এম. নায়ারের মতে, জাপান ও সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত অভিযানের পরিকল্পনা সময় উপযোগী ছিল না ও রণকৌশল ছিল ত্রুটিপূর্ণ ।

(৪) এই সময়ে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আক্রমণে জাপান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে । জাপানের সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় । জাপানিরা পিছু হটায় পরিস্থিতি পাল্টে যায় ও আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশ ফৌজের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ।

*****

Comments

Related Items

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Hyderabad):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to the Accession of Princely State with India):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪)

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪) [Post-Colonial India : Second Half od the 20th Century (1947-1964)]:-

দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবলিদানের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

হিন্দু জাতিভুক্ত নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায় । নমঃশূদ্ররা হিন্দু জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত । নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । ...

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় জুড়ে সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত । সমাজের তথাকথিত ওপর তলার উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষ রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির সবকিছুর হাল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে রাখত । নিচু তলার মানুষ ভীত, ...