'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/29/2022 - 11:05

প্রশ্ন : 'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দীনবন্ধু মিত্রের নাটক 'নীল দর্পণ' -এ সে সময়ের নীলচাষ এবং নীলকরদের অত্যাচারে বাংলার সমাজ জীবনে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার মর্মান্তিক ছবি ফুটে উঠেছ । অষ্টাদশ শতকের শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের বস্ত্রশিল্পে নীলের চাহিদা প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেলে মুনাফালোভী ইংরেজরা দাদনের জালে আবদ্ধ করে ছলে, বলে, কৌশলে দিল্লি থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করে, অন্যথায় চলে অকথ্য অত্যাচার, গৃহে আগুন, লুটপাট, শারীরিক নির্যাতন, চাবুক-শ্যামাচাঁদের ব্যবহার, স্ত্রী-কন্যার অপহরণ, লাঞ্ছনা, পুলিশি নির্যাতন, খাদ্যাভাব— যার প্রতিবাদে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় নীলবিদ্রোহ ।

নীলবিদ্রোহ ছিল কৃষকদের মানসিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত, সম্পূর্ণ ধর্ম নিরপেক্ষ ঐকবদ্ধ সংগ্রাম যা এ নাটকে সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে । অসহায়, অত্যাচারিত কৃষকদের দুঃখদুর্দশা, নীলকরদের অত্যাচার, জমিদারদের এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সামাজিক মানসিকতা, পারস্পরিক কর্তব্যবোধ, পিতৃভক্তি, অপত্যস্নেহ, সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক মেলবন্ধন সবই প্রতিফলিত হয়েছে 'নীলদর্পণ' নাটকে ।

অক্ষয়কুমার দত্তের 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা', হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের 'হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকা, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের 'সংবাদ প্রভাকর' প্রভৃতি পত্রিকায় কৃষকদের প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হয়েছিল । এছাড়াও শিশিরকুমার ঘোষ, হরিনাথ মজুমদার, মাথুরানাথ মৈত্র সোচ্চার হলেও সাহিত্যে প্রতিবাদের চরম প্রকাশ ঘটেছিল দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ' নাটকে, যার ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও প্রকাশ করেছিলেন নিজ নামে রেভারেন্ড জেমস লঙ । বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'নীলদর্পণ' কে হ্যারিয়েট বিচার স্টো -র নাটক 'আংকেল টমস কেবিন' -এর সঙ্গে তুলনা করেছেন । নীলকরদের অকথ্য অত্যাচার ও নদীয়ার গুয়াতলির মিত্র পরিবারের বিপর্যয়ের কাহিনীকে ভিত্তি করে লেখা এই নাটকে তৎকালীন সমাজজীবনের অবস্থা, অনুভূতি, শাসন-শোষণ সংগ্রাম ও সম্প্রীতির চিত্র সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ।

*****

Comments

Related Items

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha)

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha):-

বিংশ শতকে জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে জাতীয় আন্দোলগুলি ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হলে বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে । এই সময় নারীদের সংগঠিত করে বিপ্লবী কার্যকলাপে শামি

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ (Nature of Women's Role in the Armed Revolution Struggles):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Quit India Movement):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । এই অর্থনৈতিক মন্দা ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে । ভারতের কৃষিজাত পণ্

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দ