হিমবাহের প্রকারভেদ (Classification of Glacier)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 07/24/2021 - 20:14

হিমবাহের প্রকারভেদ (Classification of Glacier) : বিজ্ঞানী অলম্যান অবস্থানের ভিত্তিতে হিমবাহকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করেন । যথা— (ক) মহাদেশীয় হিমবাহ (Continental Glacier), (খ) পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ (Mountain or Valley glacier) এবং (গ) পাদদেশীয় হিমবাহ (Piedmont Glacier) ।

(ক) মহাদেশীয় হিমবাহ (Continental Glacier) : উচ্চ অক্ষাংশে আন্টার্কটিকা, গ্রিনল্যান্ড ও মেরু অঞ্চল নিকটবর্তী বিভিন্ন দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গম্বুজের মতো যে বিশালাকার বরফস্তুপ অবস্থান করছে, তাকে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে । সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চল জুড়ে যে বিরাট বরফের স্তর দেখা যায় তাকেই আসলে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে । তুষারযুগে মহাদেশগুলির অনেক অঞ্চল বরফের স্তর দ্বারা আবৃত ছিল । ধীরে ধীরে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে মহাদেশীয় হিমবাহের বিস্তার হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে দুটি মেরু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়েছে ।

উদাহরণ : আন্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট হিমবাহটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মহাদেশীয় হিমবাহ । গ্রিনল্যান্ডেও এই রকম হিমবাহ দেখা যায় ।

(খ) পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ (Mountain or Valley Glacier) : উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কিংবা অতি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য তুষার জমে সৃষ্ট যেসব হিমবাহ পর্বতের উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং যেসব হিমবাহ তাদের গতিপ্রবাহকে পার্বত্য উপত্যকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে, সেইসব হিমবাহকে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ বলে ।

উদাহরণ :

(i) আলাস্কার হুবার্ড হল পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহ,

(ii) হিমালয়ের উত্তরে কারাকোরাম পর্বতের সিয়াচেন হিমবাহ হল ভারতের বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহ । এর দৈর্ঘ্য ৭২ কিমি ।

(iii) বিয়াফো হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ৬৩ কিমি,

(iv) বলটারো হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ৫৮ কিমি,

(v) হিসপার হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ৫০ কিমি.,

(vi) বাতুরা হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ৬০ কিমি,

(vii) কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ৩৯ কিমি— এই হিমবাহ থেকে গঙ্গানদীর উৎপত্তি হয়েছে,

(viii) কেদারনাথ হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ১৪ কিমি.,

(ix) কাঞ্চন জঙ্ঘার জেমু হিমবাহ — এর দৈর্ঘ্য ২৬ কিমি — এই হিমবাহ থেকে তিস্তা নদীর উৎপত্তি হয়েছে । এই সব হিমালয়ের উপত্যকা হিমবাহগুলি দৈর্ঘ্যে পৃথিবীর অন্যতম ।

(গ) পাদদেশীয় হিমবাহ (Piedmont Glacier) : হিমবাহ যখন উঁচু পর্বতের থেকে নেমে এসে পর্বতের পাদদেশে বিরাট অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে, তখন তাকে পাদদেশীয় হিমবাহ বলে ।  উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে উষ্ণতা কম থাকায় সহজেই পাদদেশীয় হিমবাহ সৃষ্টি হয় ।

উদাহরণ: আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ । এটি প্রায় ৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ।

****

Comments

Related Items

ভরা জোয়ার ও মরা জোয়ার (Spring Tides and Neap Tides)

ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার (Spring Tides) : পৃথিবীর সব জায়গায় সব দিন জোয়ারের পরিমাণ একই থাকে না । তিথি অনুসারে জোয়ারভাটা বাড়ে ও কমে । পৃথিবীর ওপর সূর্যের আকর্ষণ শক্তি চাঁদের আকর্ষণ শক্তির প্রায় অর্ধেক হলেও ভূপৃষ্ঠে জোয়ার ভাটা সৃষ্টিতে সূর্যের প্রভাবও বিশ

জোয়ার ভাটার সময়ের ব্যবধান

জোয়ার ভাটার সময়ের ব্যবধান : পৃথিবীর আবর্তন গতি ও পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের পরিক্রমণ গতির ওপর জোয়ার ভাটার উৎপত্তি নির্ভর করে । ভূপৃষ্ঠের যে স্থানে যখন মুখ্য জোয়ার হয়, তার প্রতিপাদস্থানে তখন গৌণ জোয়ার হয় । আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীর যে স্থানে যখন মু

মুখ্য জোয়ার, গৌণ জোয়ার ও ভাটা (Primary Tide, Secondary Tide and Low Tide)

মুখ্য জোয়ার (Primary or Direct Tide) : পৃথিবী যেমন তার অক্ষ বা মেরুদণ্ডের ওপর আবর্তন করে তেমনিই চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে সর্বদা পরিক্রমণ করছে । পৃথিবীর আবর্তনের ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের যে স্থান ঠিক চন্দ্রের সামনে এসে উপস্থিত হয়, সেখানে চন্দ্রে

জোয়ার ভাটা ও জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ (Tides and Causes of Tides)

জোয়ার ভাটা (Tides) : পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরে সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্রতরঙ্গ ছাড়া আরও একটি গতি রয়েছে । এই গতির ফলে সমুদ্রের জল প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য কোনো এক জায়গায় ফুলে ওঠে এবং অন্য কোনো জায়গায় নেমে যায় । মূলত চাঁদের আকর্ষণী শক্তির

সমুদ্রস্রোতের প্রভাব (Effects of Ocean Currents)

সমুদ্রস্রোতের প্রভাব (Effects of Ocean Currents) : ভৌগলিক পরিবেশ ও মানুষের কাজকর্মের ওপর পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রে প্রবাহিত সমুদ্রস্রোতের নানা রকম প্রভাব দেখা যায় । যেমন —